আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদ্দার সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে এ দিন ধার্য করেন।
এদিন তিনি বেলা ১১টায় আদালতে উপস্থিত হয়ে সময়ের আবেদন দাখিল করেন। সময়ের আবেদনে তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, মামলাটির সাক্ষী বাতিলের আবেদনটি আদালত নামঞ্জুর করেছেন। তাই এর বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছি। তাই আমাদের সময় দেয়া হোক।
এর আগে, ৫ জানুয়ারি একই কারণে সময়ের আবেদন দাখিল করলে আদালত তা মঞ্জুর করে ১২ জানুয়ারি অসমাপ্ত বক্তব্য দেয়ার জন্য নতুন দিন ধার্য করে।
গত ১ ডিসেম্বর আদালতে উপস্থিত হয়ে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন খালেদা। ওই ট্রাস্টের ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে সুবিচার চান তিনি।
এরপর মামলার কার্যক্রম স্থগিতের জন্য হাই কোর্টে আবেদন করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। শপথ আইন ‘না মানার’ কারণ দেখিয়ে ৩২ জনের সাক্ষ্য নতুন করে নেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয় ওই আবেদনে।
১৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার পক্ষে সাফাই সাক্ষী দেয়ার জন্য ২২৫ জনের তালিকা আদালতের কাছে জমা দেয়া হয়। কিন্তু খালেদা পর পর দুটি ধার্য দিনে উপস্থিত না হওয়ায় তার অসমাপ্ত আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি পিছিয়ে যায়।
বিএনপি চেয়ারপারসন ৫ জানুয়ারি আদালতে হাজির হলে হাইকোর্টে তার আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকার কথা জানিয়ে শুনানি পেছানোর আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। পরে বিচারক খালেদার অসমাপ্ত বক্তব্য শোনার জন্য ১২ জানুয়ারি দিন রাখেন।
সেদিন খালেদার আইনজীবী আদালতকে বলেন, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের নূর উদ্দিন আহমেদ তার প্রতিবেদনে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগের কথা বলেননি। কিন্তু তার সাক্ষ্যগ্রহণ না হওয়ায় জেরাও করা যায়নি।
এই যুক্তি দেখিয়ে আসামিপক্ষ দুদক কর্মকর্তা নূর উদ্দিনের সাক্ষ্য নেয়ার আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। এ বিষয়ে সমন জারি করে করে নূর উদ্দিনের সাক্ষ্য নেয়ার জন্য ১২ জানুয়ারিই দিন রাখেন তিনি।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ ৪ জনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।
ওই মামলার অপর আসামিরা হলেন-খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
অন্যদিকে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আরো একটি মামলা করে দুদক।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন-মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।