স্টাফ রিপোর্টার: সর্বোচ্চ বেতন (গ্রেড-১) ৭৮ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন (গ্রেড-২০) আট হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করে সামরিক ও বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামোর অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘বেতন ও চাকরি কমিশন, ২০১৩’ ও ‘সশস্ত্র বাহিনী বেতন কমিটি, ২০১৩’ এবং এ সংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশের আলোকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন স্কেল ও ভাতাদি নির্ধারণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা নতুন বেতন কাঠামোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ বেতন হবে (গ্রেড-১) ৭৮ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন (গ্রেড-২০) আট হাজার ২৫০ টাকা।’
নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নববর্ষ ভাতা পাবেন। বাতিল করা হয়েছে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড। নতুন কাঠামোতে প্রতি বছর ১ জুলাই নির্ধারিত হারে বেতন বাড়বে সবার। বাতিল করা হয়েছে শ্রেণী ব্যবস্থাও। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শ্রেণী নয়, গ্রেড দিয়ে পরিচিত হবেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সশস্ত্র বাহিনীর জন্য নতুন বেতন কাঠামোতে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রধানের বেতন সমান করা হয়েছে। তিন বাহিনীর প্রধানের পদমর্যাদাও সমান করা হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘নতুন বেতন কাঠামোতে আগের মতো ২০টি গ্রেডই রাখা হয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে পে-স্কেল কার্যকর হবে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বকেয়াসহ বেতন পাবেন। তবে প্রথম বছর মূল বেতন ও ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ভাতা কার্যকর হবে। এর আগেও এভাবে পর্যায়ক্রমে বেতন কাঠামো কার্যকর হয়েছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ১ জুলাই সপ্তম বেতন কাঠামো কার্যকর হয়েছিল।’
নতুন বেতন কাঠামোর গেজেট হতে এক মাস সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সুপারিশ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণে প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে। এরপর এ কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে সোমবার রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করেছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘নতুন বেতন কাঠামোতে বিশেষ ধাপে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবদের মূল বেতন ৮৬ হাজার টাকা।’ পর্যালোচনা কমিটি বিশেষ ধাপ হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবদের মূল বেতন ৯০ হাজার টাকা ও বেতন কমিশন এক লাখ টাকা করার সুপারিশ করেছিল। বর্তমানে এ বেতন ৪৫ হাজার টাকা।
বিশেষ ধাপে সিনিয়র সচিবদের মূল বেতন করা হয়েছে ৮২ হাজার টাকা। পর্যালোচনা কমিটি সিনিয়র সচিবদের মূল বেতন ৮৪ হাজার টাকা ও বেতন কমিশন ৯০ হাজার টাকা সুপারিশ করেছিল। বর্তমানে সিনিয়র সচিবরা নির্ধারিত ৪২ হাজার টাকা মূল বেতন পান।
কোন গ্রেডে কত বেতন
সরকারি চাকরির সর্বোচ্চ ধাপ হিসেবে বিবেচিত সচিবের মূল বেতন (গ্রেড-১) নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার টাকা (নির্ধারিত)। পর্যালোচনা কমিটি সচিবের মূল বেতন ৭৫ হাজার টাকা ও কমিশন ৮০ হাজার টাকা সুপারিশ করেছিল। সপ্তম বেতন কাঠামোতে এখন এই কর্মকর্তারা ৪০ হাজার টাকা পেতেন।
প্রথম শ্রেণীর সরকারি চাকরির শুরুতে মূল বেতন হয়েছে ২২ হাজার টাকা (নবম ধাপ)। পর্যালোচনা কমিটিও এক্ষেত্রে মূল বেতন ২২ হাজার টাকা ও বেতন কমিশন ২৫ হাজার টাকা সুপারিশ করেছিল। প্রথম শ্রেণীর চাকরির শুরুতে কর্মকর্তারা আগে ১১ হাজার টাকা পেতেন।
সর্বনিম্ন স্তরের (গ্রেড-২০) মূল বেতন শুরু হয়েছে আট হাজার ২৫০ টাকা থেকে। এক্ষেত্রে পর্যালোচনা কমিটিও আট হাজার ২৫০ টাকা সুপারিশ করেছিল। তবে বেতন কমিশন সুপারিশ করেছিল আট হাজার ২০০ টাকা।
এ ছাড়া নতুন বেতন কাঠামোর ২০টি গ্রেডের দ্বিতীয় গ্রেডে ৩৩ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৬৬ হাজার টাকা, তৃতীয় গ্রেডে ২৯ হাজার টাকার স্থলে ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা ও চতুর্থ গ্রেডে ২৫ হাজার ৭৫০ টাকার পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
পঞ্চম গ্রেডে ২২ হাজার ২৫০ টাকার স্থলে ৪৩ টাকা, ষষ্ঠ গ্রেডে ১৮ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, সপ্তম গ্রেডে ১৫ হাজার টাকার জায়গায় ২৯ হাজার টাকা, অষ্টম গ্রেডে ১২ হাজার স্থানে হয়েছে ২৩ হাজার টাকা।
দশম গ্রেডে আট হাজারের পরিবর্তে ১৬ হাজার টাকা, ১১তম গ্রেডে ছয় হাজার ৪০০ টাকার পরিবর্তে ১২ হাজার ৫০০ টাকা, ১২ তম গ্রেডে পাঁচ হাজার ৯০০ টাকার পরিবর্তে ১১ হাজার ৩০০ টাকা, ১৩তম গ্রেডে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ১১ হাজার টাকা, ১৪তম গ্রেডে পাঁচ হাজার ২০০ টাকার পরিবর্তে ১০ হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে।
নতুন কাঠামোতে ১৫, ১৬ ও ১৭তম গ্রেডে মূল বেতন হয়েছে নয় হাজার ৭০০, নয় হাজার ৩০০ ও নয় হাজার টাকা। আগের স্কেলে এ বেতন ছিল চার হাজার ৯০০, চার হাজার ৭০০ ও চার হাজার ৫০০ টাকা।
আগে ১৮তম গ্রেডের মূল বেতন চার হাজার ৪০০ ও ১৯তম গ্রেডের মূল বেতন চার হাজার ২৫০ টাকা থেকে শুরু হতো, নতুন বেতন কাঠামোতে তা শুরু হবে আট হাজার ৮০০ ও আট হাজার ৫০০ টাকা থেকে।
বেতন-ভাতা দিতে অতিরিক্ত ২৩,৮২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে মূল বেতন দিতে অতিরিক্ত খরচ হবে ১৫ হাজার ৯০৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। পরবর্তী বছর নতুন পে-স্কেলের বেতন-ভাতা দিতে অতিরিক্ত ২৩ হাজার ৮২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার আমাদের রাজস্ব আয় বেশি হয়েছে। এবারের চেয়ে আগামী বছর আয় আরও বেশি হবে। অতিরিক্ত যে অর্থ লাগবে তা বহন করা সরকারের জন্য কঠিন হবে না।’
বাড়িভাড়া ভাতা বর্তমান নিয়মেই
বাড়িভাড়া ভাতা বর্তমান নিয়মেই চলবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘নতুন পে-স্কেলে বিশেষ ভাতাগুলো নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বেতনের ওপর বিভিন্ন হারে এগুলো ধার্য করা হবে না। বর্তমানে কেউ কেউ হয়ত আগের চেয়ে কম ভাতা পাবেন, কেউ কেউ বেশি পাবেন।’
থাকছে না শ্রেণী প্রথা, গ্রেড দিয়ে পরিচয়
সরকারি চাকরিতে শ্রেণী প্রথা বাতিল করা হয়েছে নতুন বেতন কাঠামোতে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রেড দিয়ে পরিচিত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘শ্রেণী ব্যবস্থা বাতিল একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এতে আর্থিক সংশ্লেষ নেই, কিন্তু এটার মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব বিশাল। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে, এটা ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে। এখন থেকে এ শ্রেণী বিভাজন বিলুপ্ত। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচয় হবে গ্রেড দিয়েছে।’
এ সংক্রান্ত বিধিবিধানগুলোও সংশোধন করা হবে বলেও জানান তিনি।
পেনশন সুবিধা বাড়ল
বর্তমানে মূল বেতনের ৮০ শতাংশ হারে পেনশন ধার্য করা হয়। নতুন বেতন কাঠামো এটা হবে মূল বেতনের ৯০ শতাংশ।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও ১ জুলাই থেকে নতুন বেতন কাঠামোতে
এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরাও নতুন স্কেলে ১ জুলাই থেকেই মূল বেতন পাবেন। তবে কিভাবে তাদের বেতন-ভাতা দেওয়া হবে তা পর্যালোচনা করে নির্ধারণ করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কিভাবে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হতে তা পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নীরিক্ষা করবে অর্থ বিভাগ। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে নতুন বেতন কমিশন বাস্তবায়নে বিস্তারিত জানিয়ে একটি পরিপত্রও জারি করবে অর্থ বিভাগ।’
‘পর্যালোচনা করা হলেও গত ১ জুলাই থেকেই কার্যকর হবে। পরিপত্র জারি করার আগ পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে’ বলেন মোশাররাফ হোসাইন।
টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেড বাদ
প্রতি বছর ১ জুলাই নির্দিষ্ট হারে বেতন বাড়বে
নতুন বেতন কাঠামোতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করে বেতন বৃদ্ধির নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে প্রতি বছর ১ জুলাই সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দিষ্ট হারে বেতন বাড়বে।
মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, ‘নতুন একটি বিষয় প্রচলন করা হয়েছে, এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। এখন থেকে নির্ধারিত ইনক্রিমেন্ট ও ইফিসিয়েন্সি বার আর থাকছে না। এটা মূল বেতনের পারসেন্টেজ আকারে হবে। পারসেন্টেজটা হবে আবার ভিন্ন রকম, উপরের দিকে আছেন তাদের বেতন বৃদ্ধির হার কম, নিচের দিকে যারা আছেন তাদের বেতন বৃদ্ধির হার বেশি হবে।’
‘২০ থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধির হার হবে ৫ শতাংশ, পঞ্চম গ্রেডের ক্ষেত্রে হবে চার দশমিক পাঁচ শতাংশ, তৃতীয় ও চতুর্থ গ্রেডের ক্ষেত্রে চার শতাংশ, দ্বিতীয় গ্রেডের ক্ষেত্রে তিন দশমিক ৭৫ শতাংশ। প্রথম গ্রেডে কোনো বেতন বৃদ্ধি হবে না।’
ক্রমপুঞ্জীভূত হারে এ বেতন বাড়বে জানিয়ে মোশাররাফ হোসাইন বলেন, ‘কারো বেতন ১০ হাজার টাকা হলে তার বেতন বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ হলে তার বেতন হবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। পরের বছর আবার ১০ হাজার ৫০০ টাকার উপর ৫ শতাংশ হারে বেতন বাড়বে। এভাবে প্রতি বছরের বর্ধিত বেতন মূল বেতনের সঙ্গে যুক্ত হবে, তার উপর নির্ধারিত হারে বেতন বাড়বে।
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডকে বৈষম্যমূলক মন্তব্য করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কমিশনও এটা বলেছে, সচিব কমিটিও পর্যালোচনায় এটা পেয়েছে, অর্থ বিভাগও এটা পেয়েছে। মন্ত্রিসভা এ বিষয়ে স্যাটিসফাইড। এ দু’টি বিষয় আর থাকছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘টাইম স্কেল কেউ পায় কেউ পায় না। সিলেকশন গ্রেড আরও বৈষম্যমূলক, কম সংখ্যক লোক এটা পায়। নতুন পদ্ধতিতে সবার জন্য বেতন বাড়বে। এ সুবিধা সার্বজনীন। কিছু প্রতিষ্ঠানের জন্য সুবিধার চেয়ে সার্বজনীয় সুবিধাকে বেশি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য বলে মন্ত্রিসভা মনে করেছে।’
যারা ইতোমধ্যে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন তাদেরটা বহাল থাকবে বলেও জানান মোশাররাফ হোসাইন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রস্তাব পর্যালোচনা হবে
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি মন্ত্রিসভা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে।’
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন কাঠামো সংশোধন করে সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের পদমর্যাদা সিনিয়র সচিবের সমান করা, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালু, ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্সে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের পদমর্যাদা উন্নতীকরণ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মতো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গাড়ি ও অন্য সুবিধা দেওয়ার দাবি তুলে আন্দোলন করছেন।
মোশাররাফ হোসাইন বলেন, ‘মন্ত্রিসভার অনুমোদন দেওয়া আজকের প্রস্তাবের মাধ্যমে দাবির বিষয়গুলো তাৎক্ষণিকভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব নয়। তাই শিক্ষকদের প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে সুপারিশ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিকে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনো ক্রমেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। তারা নতুন বেতন কাঠামোতে বেতন পেতে থাকবেন।’
‘তারা যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেগুলো মৌলিক বিষয়। এ বিষয়গুলো বেতন ও চাকরি কমিশনের আওতায় পড়ে না। এ জন্য সচিব কমিটির আওতায়ও এগুলো পড়েনি। মন্ত্রিসভা কমিটি শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন’ বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
স্থায়ী বেতন কমিশনের দারকার নেই
বেতন ও চাকরি কমিশনের স্থায়ী বেতন কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মন্ত্রিসভা মনে করে স্থায়ী বেতন কমিশনের দরকার নেই। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ইনক্রিমেন্টের যে নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে তাতে আর বেতন কমিশনের প্রয়োজন হবে না।’
২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর দেশের ১৩ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর জন্য ১৭ সদস্যের ‘জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন-২০১৩’ গঠন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া এ কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
কমিশনকে ৬ মাসের (২০১৪ সালের ১৭ জুন) মধ্যে সুপারিশসংবলিত একটি প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে কমিশনের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়।
গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে প্রতিবেদন তুলে দেন জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের চেয়ারম্যান।
বেতন ও চাকরি কমিশন বর্তমান ২০টির পরিবর্তে ১৬টি ধাপে বেতন দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। কমিশনের সুপারিশ ছিল সর্বোচ্চ ধাপে ৮০ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ধাপে আট হাজার ২০০ টাকা।
পরে ৩১ ডিসেম্বর বেতন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণে প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটিকে ৬ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছিল। কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সময় দুই দফা বাড়ানো হয়।
অপরদিকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য ‘সশস্ত্র বাহিনী বেতন কমিটি’ গত ১ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো তুলে দেয়।
এতে সর্বোচ্চ পদে থাকা একজন চার তারকা জেনারেল মূল বেতন হিসেবে মাসে এক লাখ এবং সর্বনিম্ন গ্রেডে বেসামরিক দায়িত্বে থাকা একজন অফিস সহকারী ৮ হাজার ২০০ টাকা সুপারিশ করা হয়। পর্যালোচনা কমিটি এ বেতন কাঠামোও বিবেচনায় নেয়।
‘জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন, ২০১৩’ গঠনের পর সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করে সরকার, যা ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়। নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হওয়ার সময় থেকে মহার্ঘ ভাতা বাতিল হয়ে যাবে।
গত ১৩ মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূইঞার নেতৃত্বাধীন বেতন কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা কমিটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
– See more at: http://bangla.thereport24.com/article/124427/index.html#sthash.65OZplKA.dpuf