সম্পাদকীয় কলাম- বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য এখন আর রাখ ঢাকের কোনো বিষয় নয়। সংবাদপত্রে এ নিয়ে হরহামেশা খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের তদন্ত রিপোর্টে অনিয়ম করে শিক্ষক নিয়োগের যে বিস্তর প্রমাণ মিলেছে, তা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার জন্যই অশনিসঙ্কেত। জাল সনদ, যোগ্যতা না থাকা এবং তথ্য গোপনসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা নিয়োগ পেয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বেতন হিসেবে তুলে আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরকারি এ তদন্তকারী সংস্থাটির বরাতে সহযোগী একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, সব প্রতিষ্ঠান নিয়মিত তদন্ত করা গেলে শিক্ষকদের আত্মসাতের পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ন্যূনতম যোগ্যতাহীনরা যখন শিক্ষা প্রদানের মহতী কর্মে নিয়োজিত হন, তখন কিছুতেই মানসম্পন্ন শিক্ষা আশা করা যায় না। বাস্তবে হচ্ছেও তা-ই। দৃশ্যমান ঔজ্জ্বল্যের তলে শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতগুলো ক্রমেই উন্মোচিত হয়ে আমাদের আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে। নিত্যনতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে, কারিকুলাম নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীরা ভালো ফল পেয়ে উত্তীর্ণ হচ্ছে- এসব সুসংবাদের অপর পিঠে রয়েছে হতাশা ও দুঃসংবাদ। নিয়মিত প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষা পদ্ধতি ও পরীক্ষার খাতা নিরীক্ষা প্রক্রিয়া, অধিকন্তু শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা প্রদানের নিম্নমুখীতা ইত্যাদি। এগুলোর মূলে অবশ্যই অযোগ্য শিক্ষকদের দায় রয়েছে, তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং স্কুল পরিচালনা পরিষদের সদস্যরাও দায় এড়াতে পারেন না। এক্ষেত্রে জড়িত সবার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জরুরী।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার হেন কোনো বিষয় নেই যা প্রশ্নবিদ্ধের ঊর্ধ্বে। এখানে সর্বস্তরে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা এমনভাবে সংক্রমিত হয়ে পড়েছে যে, আরোগ্য লাভ এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে কঠিন হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ঠেকাতে পিএসসির ধাঁচে প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বলে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন। সেটি একটি শুভ উদ্যোগ, তবে সরষের মধ্যে ভূত থাকলে অবস্থার উন্নতি হবে না। শিক্ষাক্ষেত্রে জবাবদিহিতা ও সুশাসন সবার আগে আবশ্যক।