শিক্ষক-সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। গতকাল শনিবার (১৬ মার্চ) মধ্যরাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ আশ্বাস দেন।
উপাচার্য বলেন, ‘আমি কথা দিচ্ছি কমিটি সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। তাছাড়া এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে ঘটা ঘটনারও তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। আর আমার হাতে যত আইন আছে, সব আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করবো।’
এছাড়া, এসময় তৎকালীন প্রক্টরিয়াল বডির তদন্তের আশ্বাস দেন উপাচার্য।
অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘পূর্ববর্তী যত যৌন হয়রানির ঘটনার অভিযোগ আছে, সবগুলো আগামী সিন্ডিকেটে তুলে বিচারের আওতায় আনা হবে। এছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষককে সকল দায়িত্ব থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।’
উপাচার্য বলেন, ফাইরুজ বলেছে তাকে হুমিলিয়েটেড করা হয়েছে। কিন্তু সেই কমপ্লেইনের রেকর্ড আমাকে দেয়া হয়নি। অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টরকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, ফাইরুজ তার সুইসাইড নোটে উল্লেখ করেন, আম্মান তাকে থ্রেট করতো, সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও কোনও লাভ হয়নি। এ বিষয়ে উপাচার্য জানান, ‘অভিযোগপত্রটি খুঁজে পাওয়া গেছে। সেটি অনেক পুরনো ফাইল। এ কারণে খুঁজে পেতে সময় লেগেছে।’
বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘নতুন দায়িত্ব নেয়ার পর আগের ঘটনা নিয়ে অবগত ছিলাম না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সে যদি আসতো তাহলে ভিসি ম্যামের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিতাম।
এদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার পর উপাচার্য সাদেকা হালিম নিজ কার্যালয়ে অবস্থান নেন। উপাচার্য কার্যালয়ে যাওয়ার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ করেন। পরে তারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। আজ বিকাল ৩টায় মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা।
এদিকে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার ও সহযোগী অধ্যাপক ড. দ্বীন ইসলামকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল দায়িত্ব থেকে সাময়িক বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও অধিকতর তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড. মাসুম বিল্লাহকে আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে নিজের আত্মহত্যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে দায়ী করেন ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। ফেসবুকে দেয়া ওই পোস্টের পর কুমিল্লার বাগিচাগাঁও ফায়ার সার্ভিস পুকুরপাড়ের নিজ ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাত সোয়া ১০টার দিকে তাকে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ফাইরোজ সাদাফ অবন্তিকা কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক প্রয়াত জামাল উদ্দিনের মেয়ে।