অগ্রসর রির্পোট : বিদায় নেওয়ার আগে মঙ্গলবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদরদপ্তরে শহীদ ক্যাপ্টেন আশরফ হলে সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
চলতি মাসের শুরুতে আজিজ আহমেদ পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হয়েছেন। আর বিজিবির নেতৃত্ব পেয়েছেন মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, যিনি রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আগামী সপ্তাহে তার নতুন দায়িত্বে যোগ দেওয়ার কথা।
বিদায়ী মহাপরিচালক আজিজ আহমেদ তার দায়িত্ব পালনের সময় এ বাহিনীর সার্বিক কর্মকাণ্ড ও উন্নয়নের খতিয়ান সাংবাদিকের সামনে তুলে ধরেন।
কোন জায়গায় সফল হতে পারেননি- এ প্রশ্নে জেনারেল আজিজ বলেন, “এসেই বলেছিলাম, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আনাই আমার লক্ষ্য। কিন্তু সীমান্ত হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় না আনতে পারা; মাদক, চোরাচালান পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারাই আমার অসফলতা।”
সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় না নামলেও গত কয়েক বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে বাংলাদেশি নিহতের ঘটনা অনেকটা কমে এসেছে বলে তিনি দাবি করেন।
আজিজ আহমেদ বলেন, “ভারতের গরু আনা থেকে নজর ফেরালেই সীমান্ত হত্যা কমে আসবে।”
গরু চোরাচালানই সীমান্ত হত্যার মূল কারণ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এর সঙ্গে মাদক ও অন্যান্য অপরাধও জড়িত।”
সীমান্ত রক্ষায় সবচেয়ে বড় কোন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হচ্ছে জানতে চাইলে বিদায়ী মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও রাস্তা না থাকায় বিজিবির সদস্যসের দায়িত্ব পালন কঠিন হয়ে যায়।
সীমান্ত এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি ঘটলে সীমান্তে অপরাধও অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন আজিজ আহমেদ।
তিনি বলেন, “সীমান্ত এলাকার মানুষ এতোই গরীব যে চোরাকারবারীরা তাদেরকে অর্থের লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন কাজ করিয়ে থাকে।”
আজিজ আহমেদ বলেন, আঙুলের ছাপ মেলানোর সুযোগ না থাকায় অনেক অপরাধী জাল কাগজপত্র দেখিয়ে সীমানা পেরিয়ে ভারতে যেতে পারছে। আবার সীমান্ত দিয়ে অনেক অস্ত্রও দেশে ঢুকছে।
গত চার বছরে সীমান্তে ২৩৭টি পিস্তল, ২৬টি রিভলবার, ১৫২টি বন্দুক, ৫ হাজার ১৫৯টি গুলিসহ বোমা, ককটেল ও বিস্ফোরক দ্রব্য বিজি জব্ধ করেছে বলে জানান তিনি।
“গাড়ি স্ক্যান করার ব্যবস্থা থাকলে ওপার থেকে পেঁয়াজ বা অন্যান্য পণ্যের ভেতর করে অন্য কিছু আনা হচ্ছে কিনা তা সহজেই ধরা যেত। হাজার হাজার বস্তা পেঁয়াজের ভেতরে অন্য কী আসে- তা সীমাবদ্ধতার কারণে সব সময় তল্লাশি করা সম্ভব হয় না। তবে আমাদের সন্দেহ হলেই করি।”
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ভয়াবহতা পেরিয়ে সীমান্তরক্ষা বাহিনীর নাম ও পোশাক বদলে যাওয়ার পর ২০১২ সালে এ বাহিনীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন জেনারেল আজিজ।
তিনি জানান, তার সময়ে চার বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার ৪৭৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তে ৫৫টি বিওপি নির্মাণ করার ফলে ৩৭০ কিলোমিটার এলাকা বিজিবির নজরদারির আওতায় এসেছে।
এ সময়েই বিজিবিতে প্রথমবারের মতো ৯৭ জন নারী সৈনিক নিয়োগ পেয়েছেন। আরও ৯৪ জনের মৌলিক প্রশিক্ষণ চলছে। এছাড়া ১০০ জন নারী সৈনিক মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।
২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিজিবিতে প্রায় ১৮ হাজার লোক নিয়োগ, ডগ স্কোয়াড সংযুক্তি, বিজিবি এয়ার উইংয়ের ভিত্তি স্থাপন এবং সীমান্ত ব্যাংক চালুর কথাও আজিজ আহমেদ তুলে ধরেন।