অগ্রসর রিপোর্ট: রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাক পরে ডাকাতির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার নাম আসছে। তাদের বিষয়ে এরইমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার র্যাব ও পুলিশের একাধিক সূত্র ঢাকা টাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র বলছে, দুর্ধর্ষ এই ডাকাতিতে সরাসরি ১৭ জন অংশ নেন, যাদের মধ্যে র্যাব, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তা ও সদস্য রয়েছেন। গণমাধ্যমে ডাকাতির ভিডিও প্রকাশ পাওয়ায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেকে আত্মগোপনে চলে যান। তাদেরকে শনাক্ত করার পর গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আর এখন পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করা হলেও ছয়জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। যাদের মধ্যে র্যাবের কর্মরত সাবেক ও বর্তমান সদস্য রয়েছেন। তারাই জিজ্ঞাসাবাদে জড়িতদের নাম জানিয়েছেন।
আলোচিত এই ডাকাতির ঘটনায় স্ব-স্ব বাহিনীর পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে। এরইমধ্যে মোহাম্মদপুর থানায় হওয়া মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর হয়েছে বলে ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান।
আসামিরা হলেন-জাকির হোসেন ওরফে জিন জাকির, মো. শরিফুল ইসলাম তুষার, মো. মাসুদুর রহমান, মো. আরিফুল ইসলাম তরফদার, মো. জাহিদ হাসান ও আব্দুস সালাম।
পুলিশ ও র্যাব সূত্রে জানা গেছে, ডাকাতিতে সরাসরি অংশ নেওয়া অভিযুক্তরা অনেকের নাম বলেছেন। যাদের মধ্যে বর্তমান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, লে. কর্নেল ও মেজর পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছে। তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর চলছে। এরমধ্যে বরখাস্ত লে. কর্নেল নজরুলের সংশ্লিষ্টরা তথ্য এসেছে। তিনি ঘটনার সময় সরাসরি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলসহ একাধিক মেজরের নাম এসেছে। তবে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি-না জানতে তদন্ত চলছে। চক্রের সদস্যরা অনেকের নাম জানিয়েছে কিন্তু এখনও সবার সম্পৃক্ততা মেলেনি। তাই প্রতিটি তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
অপর একটি সূত্র বলছে, গ্রেপ্তার অভিযুক্তরা মোহাম্মদপুরে ডাকাতির ঘটনায় স্থানীয় র্যাবের ব্যাটালিয়ন ও মিরপুর ব্যাটালিয়নে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তার নাম জানিয়েছেন। তবে র্যাব প্রাথমিক তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পায়নি।
শনিবার গভীর রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাক পরে সংঘবদ্ধ ডাকাতদল একটি বাসা থেকে সাড়ে ৭৫ লাখ টাকা ও ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে। এ ঘটনায় বাড়ির মালিক ব্যবসায়ী আবু বক্কর মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাকে দুটি মাইক্রোবাস ও দুটি প্রাইভেটকার নিয়ে তারা এসেছিল। বাসার ভেতরে ১৫ থেকে ২০ জন ঢুকেছিল, বাইরেও তাদের লোকজন ছিল।
সূত্রে জানা গেছে, ‘আবু কোম্পানির বিল্ডিং’ নামে প্রতিষ্ঠানের মালিক আবু বক্করের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ আছে। বিশেষ করে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেননি। এমন ক্ষোভ থেকেই এই চক্র টাকা উদ্ধারে যায় বলেও তথ্য রয়েছে। এমন অভিযোগের ব্যাপারে আবু বক্কর ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমি জমি ও ফ্ল্যাটের ব্যবসা করি। সবাইকে তা বুঝিয়েও দিই।
এদিকে এই চক্রের বাকি সদস্যরা মোহাম্মদপুরে একাধিক ডাকাতি করেছেন বলেও তথ্য মিলেছে। সেসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।
ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি, মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আলোচিত এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জন গ্রেপ্তার আছেন। বাকিদের শনাক্তে কাজ চলছে।’ যাদের নেতৃত্বে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে তাদের মধ্যে সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের নাম আসছে। এবিষয়ে পুলিশ কী তথ্য পেয়েছে জানতে চাইলে তালেবুর রহমান বলেন, ‘এটা তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন।’