জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছার জীবনের অনেক অজানা তথ্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বলেছেন, এই মহীয়সী নারীর দূরদর্শীতাই বাংলার স্বাধীনতার পথ খুলে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের তৎকালীন অনেক নেতৃবৃন্দের আপত্তি সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর সার্বক্ষণিক এই ছায়াসঙ্গী বেগম মুজিবই তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে পাক সামরিক সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে নিষেধ করে বাংলার স্বাধীনতার পথ খুলে দিয়েছিলেন। আর এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’
‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণেও আমার মা বাবাকে সহযোগিতা করতেন’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়েজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পেক্ষাপট স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে আটকাবস্থা থেকে ক্যান্টনমেন্টে ধরে নিয়ে যায় পাক সামরিক সরকার। ৬ মাস পর্যন্ত তাঁর কোন হদিস ছিল না। আমরা জানতেও পারিনি তিনি বেঁচে আছেন কি-না। এরপর কোর্টেই বঙ্গবন্ধুকে প্রথম দেখার সুযোগ হয়। তখন পাকিস্তান সরকার আম্মাকে ভয় দেখান, বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তি না নিলে তিনি বিধবা হবেন।’
প্রধানমন্ত্রী স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ‘আম্মা সোজা বলে দিলেন, কোন প্যারোলে মুক্তি হবে না। নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি মায়ের সিদ্ধান্তের কথা কোর্টে যখন বঙ্গবন্ধুকে জানালাম তখন অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকেও দেখেছি তারা বলেছেন, তুমি কেমন মেয়ে? বাবার মুক্তি চাও না ? আম্মাকে বলেছে, ভাবি আপনি কিন্তুু বিধবা হবেন।’
‘আমার মা তখন কঠিন স্বরেই বলেছেন, প্যাারোলে মুক্তি নিলে মামলার আরো ৩৪ জন আসামীর কী হবে। …বঙ্গবন্ধু প্যারোলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। গণঅভ্যুত্থানে পাকিস্তান সরকার আব্বাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়,উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ একশ’টি ভাষণের অন্যতম বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘…নানা জনে নানা পরামর্শ দিচ্ছে। আম্মা বললেন, তোমার যা মনে আসে তাই তুমি বলবে… তুমি রাজনীতি করেছো… কষ্ট সহ্য করেছো… তুমি জান কী বলতে হবে। কারও কথা শোনার দরকার নাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনে বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ে বহুবার জেলে গেছেন, জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু কোনদিন ‘মা’কে কোন আক্ষেপ করতে দেখিনি। কোন হা- হুতাশ নেই। তার কাজ তিনি নীরবেই করে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘বাবাকে কখনও দুই বছর একসঙ্গে বাইরে থাকতে দেখিনি। তিনি (মা) স্ত্রী হিসেবে বঞ্চিত ছিলেন। কিন্তুু কোন অভাব অভিযোগ দেখিনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর ‘মা’ বিশ্বাস করতেন যে, তাঁর স্বামী (বঙ্গবন্ধু) দেশের জন্য কাজ করছেন। দেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন।’
শেখ হাসিনা বেগম মুজিবের ধৈর্য, সহনশীলতা ও স্বামীর প্রতি কর্তব্যবোধের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার ‘মা’ একাধারে সংসার সামলেছেন, আমাদের লেখাপড়া করিয়েছেন। আবার আদালতে দৌঁড়াদৌঁড়ি করে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের জন্য টাকা জোগার করে সংগঠনটাও তাঁকেই সচল রাখতে হয়েছে। …কিন্তু কোনরূপ প্রচারের মধ্যে ছিলেন না। অত্যন্ত প্রচারবিমুখ ছিলেন তিনি।’
মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রেবেকা মোমেন এমপি এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম বক্তৃতা করেন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়র সচিব নাসিমা বেগম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে বেগম মুজিবের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ‘মা’ নিজের জন্য কখনো কিছু চাননি। অথচ সারাজীবন এই দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তিনি এ দেশকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। আব্বার সঙ্গে থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন- এ দেশের মানুষ ভালো থাকবে, সুখে-শান্তিতে বাস করবে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাবার পাশে থেকে স স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করেছেন।’
‘মায়ের আত্মত্যাগ বাবাকে এগিয়ে নিয়েছে বলেই স্বাধীনতা এনে দিতে পেরেছেন তিনি। এ স্বাধীনতার জন্য মায়ের অবদান অবিস্মরণীয়’- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দলের কাজকর্ম, আন্দোলন-সংগ্রামে নিজের সম্পদ দিয়ে সাহায্য করতেন মা। মা-বাবা কখনো আমাদের অভাব বুঝতে দেননি। কৌশলে সেসব অভাব মেটাতেন আর আমাদের ভিন্নভাবে বোঝাতেন। মানুষকে কখনো না বলতে পারতেন না। তার কাছে নেই বলে কিছু ছিল না। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ধৈর্য ধরে পরিবার সামলাতেন মা। আব্বা বার বার কারাগারে যাবার ফলে এমনও দিন গেছে যে, বাজার করতে পারেননি। আমাদের বলেননি, আমার টাকা নাই। চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে আচার দিয়ে বলতেন, চলো আজ আমরা খিচুড়ি খাবো।
‘বাবা জেলে, সংসার ও সংগঠনের জন্য টাকার যোগার করতে গিয়ে মা বাড়ির ফ্রিজটি পর্যন্ত বিক্রি করে দিচ্ছেন। অথচ বললেন, ঠান্ডা পানি খাওয়া ভালো নয়। শরীর খারাপ হতে পারে। কাজেই এর আর দরকার নেই’- বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দাদার মারফতও আব্বা টাকা পেতেন। জমি-জমা থেকে দাদার কাছ থেকে চাল-ডাল আসতো। আর মা যে সংসার খরচের টাকা পেতেন তার একটি টাকাও খরচ না করে নিজে কষ্ট করে চলেন ও বাবার জন্য জমিয়ে রাখতেন এবং তা তাঁর হাতে তুলে দিতেন। সংগঠনের কোথায় টাকা লাগবে, কোথায় কোন কর্মীর বাজার হয়নি। তাও মা’র মনে থাকতো।
অসাধারণ সম্মৃতিশক্তির অধিকারী বেগম মুজিবকে জীবন্ত টেপ রেকর্ডার বলেও এ সময় শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব অল্প বয়সেই সংসারী হওয়ায় আমার মা আর আমার মধ্যে বয়সের ব্যবধান খুব বেশি ছিলো না। আমিই ছিলাম মায়ের সঙ্গী। আমার বাবা-মায়ের মধ্যে বোঝাপড়াটা খুব ভালো ছিলো। বাবাকে কোন পরামর্শ দিতে হলেই আমি চলে যেতাম মা’র মিশন নিয়ে। বাবা ভিড়ের মধ্যেও আমাকে একবার দেখলেই বুঝতে পারতেন ‘জরুরি কোন মেসেজ আছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গমাতাই বোধ হয় সবচেয়ে আগে জানতেন, এই দেশ একদিন স্বাধীন হবে। এ জন্য তিনি কোনাদিন করাচীতে যাননি, যেতেও চাননি।’
তিনি বলেন, একদিন ভুট্টো আমাদের বাড়িতে এলে ‘মা’ তার সঙ্গে দেখাও করেননি। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানীদের সঙ্গে সবসময় পর্দার আড়াল থেকেই কথা বলেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মা বলেছিলেন, ওদের সঙ্গে থাকবো না, দেখা করবো কেনো? এভাবেই তিনি স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।’
স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের ওপর নেমে আসা পাকিস্তানি শাসকদের জুলুম-নির্যাতনের কথাসহ আগুনঝরা সেই দিনগুলোতে দেশের মানুষের জন্য বঙ্গমাতার ত্যাগের কথাও বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা।
১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও ১৭ ডিসেম্বর তাঁরা ধানমন্ডির একটি বাড়িতে পাক বাহিনীর বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হলেও জানি না আব্বা বেঁচে আছেন কি-না ? এ সময়টায় আম্মার যে মনোবল আমরা দেখেছি, তা কল্পনা করা যাবে না। স্বামীকে পাকিস্তানীরা ধরে নিয়ে গেছে, দুই ছেলে মুক্তিযুদ্ধে, তিনি তিন সন্তানসহ গৃহবন্দী। সবার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। অসীম সাহস এবং ধৈর্য্য নিয়ে মা এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন।’
তিনি বলেন, মা সেদিন পাকিস্তানী হাবিলদারদের ডেকে দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘হাতিয়ার ডাল দো’ (নিয়াজী সারেন্ডার করেছে, তোমরাও করো)।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সম্ভ্রমহারা নির্যাতিতা নারীদের জন্য আমার মা নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলেন। তাদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও জীবিকার ব্যবস্থা করেন। বহু নারীর বিয়ের ব্যবস্থা করেন। তাঁর নিজের গহনা, আমাদের গহনা পর্যন্ত দিয়েও তাঁদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
একবার এক ১৪ বছরের ধর্ষিতা এক বালিকার সঙ্গে দেখা করে আসার পর তাঁর মায়ের কি পরিমাণ কষ্ট হয়েছিল তার উল্লেখ করে মানুষের প্রতি বেগম মুজিবের গভীর মমত্ববোধের একটি চিত্রও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বেগম মুজিব কোনদিন বিলাসিতাকে প্রশ্রয় দেননি এবং তাঁর সন্তানদেরও সেভাবে গড়ে তোলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার সময়ও পাছে ছেলে-মেয়েরা যদি বিলাস-ব্যসনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে জন্য তিনি সবসময় সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ মন্ত্রিত্বের জন্য দল ছাড়েন আর বাবা দলের জন্য মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। মন্ত্রীত্ব ছেড়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ গ্রহণ করে দল গোছানো শুরু করেন। কিন্তু আমার মা সেটি নিয়ে কোনো অনুযোগ করেননি। বরং তাঁর সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়েছেন, উৎসাহ যুগিয়েছেন।’
অতীতের চড়াই-উতরাই জীবন স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আব্বাকে গ্রেফতার করা হলো। তিনদিনের নোটিসে আমাদের বাড়ি ছাড়তে হলো। মালপত্র নিয়ে আমরা রাস্তায় আশ্রয় নিলাম। মাত্র কিছুদিন আগে আমরা ঢাকায় এসেছি। কিন্তুু আম্মা বিচলিত হলেন না, বাসা খুঁজতে আরম্ভ করে দিলেন।
জীবনে সরকারি বাসা থেকে সরাসরি রাজপথে এসে পড়ার মতো দুর্বিপাক জীবনে বহুবার আসলেও বেগম মুজিব অনমনীয় দৃঢ়তায় তা সামলে নিয়েছেন। আবার সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন। এ সময় পাক সামরিক জান্তার নজর এড়িয়ে বেগম মুজিব বহু দলীয় সভায় যোগ দিয়েছেন। ছাত্রলীগের সঙ্গে তাঁর সার্বক্ষণিক যোগাযোগের পাশাপাশি রাজধানী জুড়েই তাঁর নিজস্ব নেটওয়ার্কে তিনি সব খবরা-খবর পেতেন বলেও শেখ হাসিনা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমার মা আমাদের নিয়ে ছোট ফুপুর বাসায় যেতেন। ওখানে গিয়ে নিজে পায়ের স্যান্ডেল বদলাতেন, কাপড় বদলাতেন, বোরকা পরতেন, একটা স্কুটারে করে আমার মামাকে নিয়ে ছাত্র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক, আন্দোলন চালাবে কিভাবে তার পরামর্শ দেয়া, নির্দেশ দেয়াা- তিনি নিজে দিতেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলন সফল করার জন্য তিনি কাজ করতেন। কিন্তু কখনই পত্রিকায় ছবি ওঠা বা প্রচার এসব দিকে তিনি ছিলেন না।’
একটা সময় ৬-দফা না ৮-দফা হবে তা নিয়ে মতবিরোধে অনেক আওয়ামী লীগ নেতাও ৮-দফার পক্ষে চলে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘৬-দফা থেকে একচুল এদিক-ওদিক যাবে নাÑ এইটেই ছিল তাঁর সিদ্ধান্ত। এটা আব্বা বলে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের নেতারা উঠে-পড়ে লাগলেন। ৮-দফা খুবই ভালো, ৮-দফা মানতে হবে।’
তখন তাঁর মায়ের ৬-দফার পক্ষে অবস্থানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মা বলেছিলেন, শুধু এটকুই বুঝি ৬-দফাই হচ্ছে বাংলার মানুষের মুক্তির সনদ, এটা উনি (বঙ্গবন্ধু) বলে গেছেন, এইটেই মানি, এর বাইরে কিছু মানি না।’
রাজনৈতিকভাবে তিনি কতটা সচেতন ছিলেন, সেটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মা’র জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে। কিন্তু মাকে কখনো ভেঙ্গে পড়তে দেখিনি। কখনো দেখিনি বাবাকে রাজনীতি ছেড়ে দিতে বলেছেন। কোনো প্রয়োজনেও বাবাকে বিরক্ত করেননি তিনি।
শেখ হাসিনা তাঁর নানার স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমার নানা খুব সৈৗখিন লোক ছিলেন। তিনি বলতেন, তার মেয়েকে পড়ালেখা শেখাবেন। ওই সময় একটা অজপাড়াগাঁ থেকে এ ধরনের চিন্তা অনেক বড় বিষয়। কিন্তুু, মা’র বয়স যখন তিন বছর তখনই নানা মারা যান। তাছাড়া, সে সময়ে নারীদের স্কুল যাওয়ার প্রতি সামাজিকভাবেই নিষেধাজ্ঞা ছিল। কাজেই, নানা-নানীর অকাল প্রয়াণে আমার মা’র যা লেখাপড়া তা আমার দাদা-দাদীর কাছেই হয়। খুব অল্প বয়সেই তিনি আমার বাবার সংসারে এসেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আগস্ট মাসে আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্ম হয়েছে এবং আমার ভাই শেখ কামালের জন্ম হয়েছে। আবার এ মাসেই ঘাতকরা আমার মা-বাবা, ভাই কামাল, জামাল, রাসেলসহ পরিবারের ১৮ সদস্যকে হত্যা করেছে।
দেশবাসীর কাছে ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্য দোয়া প্রার্থনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এই দেশের স্বাধীনতা অর্জনে আমার মায়ের ভূমিকা ছিলো। এ বিষয়টি সবার জানা দরকার। না হলে আমি একদিন মরে গেলে এই তথ্যতো অজানাই থেকে যাবে।
তিনি তাঁর মায়ের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহ তাঁকে যেন বেহেশত দান করেন- সে জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।