কৃষি গবেষণা ও উৎপাদনে সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন অন্তত বলতে পারি, মাছ-ভাতের অভাবটা নাই, ডাল-ভাতেরও অভাব নাই। তবে মানুষের চাহিদা এখন মাংস।
বৃহস্পতিবার (এপ্রিল ১৮) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, যেমন খালেদা জিয়া ঘোষণা দিলো যে দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াবে। সেই ডাল-ভাত খাওয়াতেও কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিল। এরপর ২০০৭ সালে আসলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ফখরুদ্দীন সাহেব প্রধান উপদেষ্টা, ইয়াজউদ্দিন রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান মঈন উদ্দিন। মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন আবার ঘোষণা দিলেন আলু খাওয়ার জন্য। হাজার পদের আলুর নানারকমের তালিকা তৈরি করা হলো এবং তার আবার প্রদর্শনী হলো। বেশ উন্নত হোটেলে। মানুষ ভাত পাচ্ছে না তাতে কী! আলু খাবে।
তিনি বলেন, কেউ আমাদের ডাল-ভাত খাওয়াতে চাইলো, কেউ আমাদের আলু খাওয়াতে চাইলো, মাছে-ভাতে বাঙালি আমরা; আমার মাছে-ভাতে বাঙালি, মাছ-ভাত পেলেই তো যথেষ্ট। সেটাই তো আমরা চাই। সেটাই তো আমাদের লক্ষ্য। কাজেই আমরা সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি। এখন অন্তত বলতে পারি, মাছ-ভাতের অভাবটা নাই, ডাল-ভাতেরও অভাব নাই। তবে মানুষের চাহিদা এখন মাংস। আরও বড় বড় মাছ, সবকিছু খাবে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, অনেক হারিয়ে যাওয়া দেশি মাছ গবেষকরা গবেষণা করে করে সেগুলো কিন্তু আজকে উৎপাদন করছে। আমরা আমাদের অনেক প্রায় বিলুপ্ত মাছগুলো আবার ফিরে পাচ্ছি। গবেষণা ছাড়া কোনো দেশ এগিয়ে আনতে পারে না, এটাই হলো বড় কথা। তাছাড়া মুরগির ক্ষেত্রেও গবেষণা করে করে বিভিন্ন ধরনের পাখি এখন উৎপাদন হচ্ছে। শুধু ডিমই না, মাংসও এখন মানুষ খেতে পাচ্ছে।
বাংলাদেশ এখন মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এত খাল-বিল, নদী-নালার দেশ আমরা, আমাদের দেশের মানুষের কেন আমিষের কষ্ট হবে!
খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) আমদানি করবে, ব্যবসা করবে ওইদিকে তাদের চিন্তা। আমাদের হচ্ছে, আমরা আমাদের নিজেদের পায়ে নিজেরা দাঁড়াব।
সমুদ্র সম্পদ আহরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। আজকে এই সমুদ্র সম্পদ আমাদের কাজে লাগানোর জন্য আমরা সুনীল অর্থনীতি ঘোষণা দিয়েছি। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, গভীর সমুদ্রের সম্পদ এখনো আমরা আহরণ করতে পারিনি। আসলে উদ্যোক্তাও পাওয়া যাচ্ছে না, এটা হলো বাস্তবতা। তবে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে আমরা এখন কিন্তু স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই উৎপাদন আমরা আরও বাড়াতে চাই।
দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, এখন দেখি জিনিসের দাম নিয়ে চিন্তিত, পেঁয়াজের দাম বাড়ল কেন? আমাদের কিন্তু ৯০ ভাগ পেঁয়াজই আনতে হতো ভারত থেকে, সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিলাম। ভোজ্যতেল ৯০ ভাগ আনতে হয় বিদেশ থেকে। কেন আনতে হবে? আমার নিজের দেশে আমরা তো উৎপাদন বাড়াতে পারি। তবে এবার সুখবর হলো, আমাদের গবেষণার মধ্য দিয়ে সর্ষের উন্নত জাত নিয়ে আসা হয়েছে। আজকে আমাদের সর্ষে উৎপাদন ভালো হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরিষার তেল হচ্ছে, যেটা হার্টের জন্য সব থেকে নিরাপদ। সেই সাথে সাথে আমাদের চালের তুষ থেকে যে তেলটা হয়, সেটা হচ্ছে। তিলের তেল, আমরা আরও বহুমুখী করতে পারি বা করার সে সুযোগ আরও আছে। আমরা এখন করেও যাচ্ছি।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী ঘুরে ঘুরে এই প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন।
দর্শনার্থীরা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি পরিদর্শন করতে পারবেন। দুই দিনব্যাপী প্রদর্শনী শেষ হবে শুক্রবার। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীরা প্রবেশমূল্য ছাড়াই মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন।
সারাদেশের পোল্ট্রি ও ডেইরি খামারিরা মেলায় তাদের গবাদি পশু-পাখি প্রদর্শনের জন্য যোগ দিয়েছেন। একই সময়ে ৬৪ জেলার ৪৬৬টি উপজেলায় অনুরূপ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
আয়োজকরা জানান, রাজধানীতে আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে দেশের বিভিন্ন জাতের প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনের জন্য প্রদর্শনী ময়দানে প্রায় ২৫টি প্যাভিলিয়ন ও ৩০টি স্টল স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি প্যাভিলিয়ন সরকারি কর্তৃপক্ষের।
মেলায় ঢাকা, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর, বেনাপোল, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গাসহ অন্যান্য জেলা থেকে বিডিএফএর মোট ৫৫ হাজার সদস্যের মধ্যে ৩ হাজারের বেশি কৃষক মেলায় যোগ দেন।
আয়োজকরা জানান, প্রদর্শনীটি প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের জন্য মেগা কোম্পানিগুলির সাথে একই জায়গায় তাদের পশু-পাখি উৎপাদন ও বিক্রি করার একটি দুর্দান্ত সুযোগ হবে।
প্রোটিনের স্থানীয় চাহিদা মেটাতে ডেইরি ও পোল্ট্রি খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
গভীর সমুদ্র সম্পদ আহরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা দুঃখজনক, বাংলাদেশ বিশাল সমুদ্র সীমা অর্জন করলেও এখনো সমুদ্র সম্পদ আহরণ করতে সক্ষম হয়নি। বাস্তবতা হলো এই সেক্টরে উদ্যোক্তা পাওয়া যাচ্ছে না।
সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের প্রধান লক্ষ্য খাদ্য নিরাপত্তা, তারপর পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এ লক্ষ্যে কৃষিতে ভুর্তকি দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি। কৃষিতে আরও গবেষণা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। মানবদেহের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে মাছ ও প্রাণীগুলোর জন্য নিরাপদ খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলেন তিনি।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম উদ্দিন।
অন্যান্যের মধ্যে দেশের ডেইরি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন এবং পোল্ট্রি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান।