বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি : শনিবার বেলা ১টার দিকে সুন্দরবনের তুলাতলা এলাকার আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিস বাগেরহাটের উপসহকারী পরিচালক মো. মানিকুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা হলেও ফায়ার কর্মীরা এখন সতর্ক অবস্থায় আছেন। গাছের শেকড়ের দিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের পঁচিশ নম্বর কম্পার্টমেন্টের তুলাতলা ও টেংরা এলাকায় বুধবার বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে বনের ক্ষতি করার চেষ্টা করলেও সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রধান বন সংরক্ষক শনিবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মী এবং বন কর্মীদের সঙ্গে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার জনগোষ্ঠকে নিয়ে গঠিত ‘কমিউনিটি পেট্রোল টিম’ ও ‘ভিলেজ টাইগার রেসপঞ্জ টিম’ এর সদস্যরা সহযোগিতা করেছে।
মাত্র এক বছরের মাথায় বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনে আবার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেষ্ট ক্যাম্পের আওতাধীন আব্দুল্লাহর ছিলায় নাশকতার আগুনে দাউ-দাউ করে জ্বলছে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবন। আগুনে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ একর বনভূমির ছোট গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রনে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বনসংলগ্ন উত্তর রাজাপুর গ্রামের ২ থেকে ৩শ’ লোকসহ শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করছে।
এর আগে গত বছরের ২৮ মার্চ থেকে শুরু করে চাঁদপাই রেঞ্জে মাত্র এক মাসে চার বার নাশকতার আগুনে কয়েক কোটি টাকার বনজ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবারও সেই একই এলাকায় অগ্নিকান্ড্রে ঘটনা নাশকতা বলে সন্দেহ করছেন এলাকাবাসী ও খোদ সুন্দরবন বিভাগ। বিকেল সাড়ে ৫টা বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে পৌছে নাশকতার আগুনের ঘটনায় জড়িত আগুনদস্যুদের চিহিৃত করতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষনা দেন।
এই তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা এসিএফ মেহেদীজ্জামানকে প্রধান করে গঠিত এই তদন্ত কমিটিতে চঁদপাই ষ্টেশন কর্মকর্তা নুরুজ্জামান ও ঢাংমারী ষ্টেশন কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে সদস্য করা হয়েছে।
আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত শরণখোলার ধানসাগর ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন খান জানান, সকাল ১০টার দিকে তারা সুন্দরবনে আগুন লাগার খবর পান। পরে এলাকার ২ থেকে ৩শত লোক নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে ছুঁটে যান। স্থানীয়রা কলস-বালতি নিয়ে আব্দুল্লাহর ছিলায় পাশের খাল থেকে পানি নিয়ে প্রথমে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালান। এবং আগুন যাতে সুন্দরবনের ব্যাপক এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য অগ্নিকান্ডের চার পাশে ফায়্রা লেন কেটে আগুন নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। দুপুর দুইটার দিকে ডিএডি মাসুদ শেখের নেতৃত্বে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কোথাও কোথাও ধোয়ার কুন্ডলি উঠতে দেখা যাচ্ছে। আগুনে প্রায় ৪/৫ একর বনের ছোট গাছপালা ও লতাগুল্ম পুড়েছে বলে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেওয়া প্রত্যক্ষশদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন।
সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. মেহেদিজ্জামান জানান, বেলা ১১টার দিকে তারা আগুনের খবর পেয়ে ঘহটনাস্থলে ছুুঁটে যান। বনকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় শত শত মানুষ কলস-বালতি নিয়ে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেন। দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছে। আগুন এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে আসেনি। কোথাও কোথাও ধোয়ার কুন্ডরী পাকিয়ে আগুন জ্বলে উঠছে। এ আগুন নাশকতার বলেই প্রাথমিক ভাবে ধারনা করছেন এই বন কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের বিভিন্ন এলাকায় নাশকতামূলক চার বার অগ্নি কান্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২৭ মার্চ ধানসাগর ষ্টেশনের নাংলী ক্যাম্পের সিকদারের ছিলায়, ১৩ এপ্রিল পঁচা কোরালিয়া বিলে, ১৮ এপ্রিল আব্দুল্লাহর ছিলায় এবং সর্বশেষ ওই বছরের ২৭ এপ্রিল তুলতলার বিলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের সুন্দরবন সংলগ্ন উত্তর রাজাপুর গ্রামের এক শ্রেণির মৌসুমী মৎস্য শিকারী সুন্দরবনের মিঠা পানির মাছের বিল তৈরী করার জন্য বনে আগুন দিয়ে থাকে।
প্রতি বছরই ধানসাগর ষ্টেশনের এসব এলাকায় ওই অবৈধ মাছ শিকারীরা বনে আগুন লাগায়। গত বছর চার বার অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ১৮ জনকে আসামী করে শরণখোলা থানা ও বাগেরহাট আদালতে ৩টি মামলা দায়ের করে সুন্দরবন বিভাগ। ওই সব মামলায় আসামী শাসকদলের প্রভাবশালী আসামীদের অধিকাংশই জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে আবারও সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি লুটের নেশায় মেতে উঠেছে।