অগ্রসর রিপোর্ট : বন্ধ ঘোষিত গাইবন্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ভোট বন্ধ করায় জনগণের মধ্যে যাতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয় সেজন্য এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
সিইসি বলেন, গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন আপনারাও দেখেছেন। আমরাও দেখেছি। এ নিয়ে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা নিয়ে জনগণের মনে বিভ্রান্তি থাকতে পারে। কেউ আনন্দ পেয়েছেন, কেউ ব্যথিত হয়েছেন, কেউ সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাই কিছু ব্যাখ্যা আমাদের দেওয়া প্রয়োজন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, অনেকেই বলেছেন কী করে ভোট প্রত্যক্ষ করলাম। আমরা সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করে প্রত্যক্ষ করেছি। খুব নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ ও আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা এখানে আছে। সে বিষয়টা হয়তো অনেকের জানা নেই। আমরা হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা কমিশন নিয়েছে। কমিশন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিন্তু এক নয়।
তিনি বলেন, সিইসি কোনো সিদ্ধান্ত একক ভাবে নিতে পারে না। আমরা চার-পাঁচজন সদস্য একসঙ্গে বসে যে সিদ্ধান্ত নি্ই, সেটা সমন্বিত সিদ্ধান্ত। সেটা আরও সঠিক ও প্রাজ্ঞ হওয়ার কথা। সিইসি এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আমরা নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
লিখিত বক্তব্যে সিইসি বলেন, আপনারা জানেন যে আমারা দায়িত্ব গ্রহণের পর যতগুলো নির্বাচন করেছি সবগুলো নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে অত্যন্ত সফল ভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। আপনারা আরও জানেন যে আমরা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচনে প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছিলাম। গোপন ভোটকক্ষে অবৈধ লোক প্রবেশ করে বা অবস্থান করে ভোটারকে ব্যালট ইউনিটে ভোট দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে অবৈধ প্রবেশকারী তার আঙ্গুল দিয়ে ভোট দিয়ে দেন- সে সংক্রান্ত যে অভিযোগ আমরা পেয়েছি বিভিন্ন রাজানৈতিক দল ও সুধী সমাজের সঙ্গে সংলাপ চলাকালে তা বন্ধ করার জন্য। উল্লেখিত সব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিসিটিভি স্থাপনের ফলে এই অপরাধ একেবারেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল। তারই আলোকে এবং গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের গুরুত্বের কারণে এখানেও ইভিএমে ভোটগ্রহণ ও প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। বুধবার (১২ অক্টোবর) সকাল আটটায় যথারীতি ভোট শুরু হয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, আগারগাঁও-এ স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে আমিসহ অন্যান্য কমিশনাররা, দায়িত্ব পালনকারী সচিবালয়ের কর্মকর্তারা ও কারিগরি সহায়তাকারী ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলাম।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ভোট শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে আমারা তিনটি কেন্দ্রে দেখতে পাই ভোট কক্ষে প্রার্থীর পুরুষ এজেন্টরা একই রকম গেঞ্জি বুকে ও পিঠে প্রাথীর মার্কা ইত্যাদি প্রিন্ট করা, পরে আছেন এবং নারী এজেন্টরা একই রকম শাড়ি পরা, যা আচরন বিধিমালার ১০(ঙ) ভঙ্গের মধ্যে পড়ে। এসব এজেন্ট ছাড়াও আরও অনেক অবৈধ লোকজন ভোটকক্ষে অবস্থান করে ভোটাদেরকে ভোট দিতে প্রভাবিত করছে। ভোটাদের কন্ট্রোল ইউনিটে আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার পরপরই এজেন্টরা গোপন ভোটকক্ষে প্রবেশ করে ভোটারকে ভোটদানের সুযোগ না দিয়ে নিজেই ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ একই কাজ করছেন। তখন কমিশন থেকে ফোনকল করে প্রিসাইডিং অফিসারদেরকে ভোটকক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ভোটকক্ষের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ তাদেরকে নিতে দেখা যায়নি। তখন ওই তিনটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করার নির্দেশনা কমিশন থেকে দেওয়া হয়। অতঃপর একে একে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ৫০টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের অবস্থা একই রকম দেখা যায়। ইতোমধ্যে রিটানিং অফিসার একটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেন। আমি এবং বেগম রাশেদা সুলতানা রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতেও সিসিটিভি দেখার সময় পেলে দেখা যেত যে ও কেন্দ্রগুলোতেও একই অবস্থা। তাই কমিশন মনে করে যে এ ধরনের একটি আইন বহির্ভূত ভোট প্রদান/গ্রহণ কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আড়াইটায় গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সাবেক এই আইন সচিব বলেন, অনিয়মগুলো তদন্ত করে আগামী ৭ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দিতে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরে গাইবান্ধা-৫ আসনের পরবর্তী নির্বাচন বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।