অগ্রসর রিপোর্ট : পঞ্চগড়ের বোদায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় তৃতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান চলছে। তৃতীয় দিনে আরও ১৪টি মরদেহ উদ্ধার হওয়ায় এ ঘটনায় নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ জনে। এ ঘটনায় আরও ১১ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টায় এ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।
গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার তুষার কান্তি রায়।
তিনি বলেন, সকালে লাশগুলো ভেসে উঠলে স্থানীয়রা আমাদের জানায়। পরে আমরা সেগুলো উদ্ধার করি। তাৎক্ষণিক তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ও ৯ ডুবুরি উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনও এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৫১ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সোমবার পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় বলেন, আরও প্রায় ৪০ জন নিখোঁজ রয়েছে। তবে নিখোঁজের সংখ্যা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
এ ঘটনায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন হাশেম আলী (৭০) শ্যামলী রানী (১৪), লক্ষী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫) শোভা রানি (২৭), দিপঙ্কর (৩) পিয়ন্ত (২.৫) রুপালি ওরফে খুকি রানী (৩৫), প্রমিলা রানী (৫৫) ধনবালা (৬০) সুনিতা রানী (৬০), ফাল্গুনী (৪৫) প্রমিলা দেবী, জ্যোতিশ চন্দ্র (৫৫), তারা রানী (২৫), সানেকা রানি (৬০), সফলতা রানি (৪০) বিলাশ চন্দ্র (৪৫), শ্যামলী রানী ওরফে শিমুলি (৩৫), উশোশি (৮) তনুশ্রী (৫), শ্রেয়সী, প্রিয়ন্তী(৮), সনেকা রানী (৬০), ব্রজেন্দ্র নাথ (৫৫), ঝর্ণা রানী (৪৫), দীপ বাবু (১০), সূচিত্রা (২২), কবিতা রানী (৫০), বেজ্যে বালা (৫০), দিপশিখা রানী (১০), সুব্রত (২), জগদীশ (৩৫), যতি মিম্রয় (১৫), গেন্দা রানী, কনিকা রানী, সূমিত্রা রানী, আদুরী (৫০), পূষ্পা রানী, প্রতিমা রানী (৫০), সূর্যনাথ বর্মন (১২), হরিকেশর বর্মন (৪৫), নিখিল চন্দ্র (৬০), সুশীল চন্দ্র (৬৫), যুথি রানী (০১), রাজমোহন অধিকারী (৬৫), রূপালী রানী (৩৮), প্রদীপ রায় (৩০) এবং পারুল রানী (৩২),প্রতিমা রানী (৩৯), বিষনু (৩)।
স্থানীয়রা জানান, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অন্য পাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মালম্বীরা নৌকাযোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে ৪০ থেকে ৫০ জনের ধারণ ক্ষমতার নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতার তীরে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়।
এদিকে, ঘটনা তদন্তের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। আর আহতদের ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে।
এদিন দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। এ সময় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সরকারের পক্ষে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।