অগ্রসর রিপোর্ট : চীন আজ উপহারস্বরূপ সিনোফার্মের ৫ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে করোনার ভ্যাকসিন পেতে ঢাকা জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের নিযুক্ত চীনে রাষ্ট্রদূত লি জিমিং আজ দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ভ্যাকসিন হস্তান্তর করেন।
ভ্যাকসিন গ্রহণকালে ড. মোমেন এই উপহারের জন্য চীনের সরকারের প্রতি ঢাকার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং দেশটি থেকে শিগগিরই আরো ভ্যাকসিন কেনার আশা প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এই অনুদান পেয়ে অত্যন্ত খুশি এবং তাদের (চীন সরকার) প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা চীনের কাছ থেকে আরো ভ্যাকসিন পেতে আগ্রহী।’
তিনি আরো বলেন, সরকারের ওষুধ নীতি অনুযায়ী- ডব্লিউএইচও’র অনুমোদন না থাকায় এর আগে ঢাকা চীনের ভ্যাকসিন গ্রহণে আগ্রহী ছিল না।
অনেক আগেই বাংলাদেশ সরকার এই নীতিমালা প্রণয়ন করেছে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ‘এর ফলে, চীনের কাছ থেকে এই ভ্যাকসিন পেতে বিলম্ব হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘একটি স্বার্বভৌম সরকারের এটা করার অধিকার রয়েছে এবং এক্ষেত্রে (বিলম্ব) কাউকে দোষ দেয়ার কোন কারণ নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ ৬৩টি দেশের ১০০ মিলিয়ন মানুষ নিরাপদে এই চীনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পর, বাংলাদেশ জরুরি ভিত্তিতে চীনের কাছ থেকে ভ্যাকসিন ক্রয়ের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।
স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যালগুলোর স্বক্ষমতা থাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশেই চীনের এই ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা চীন থেকে ভ্যাকসিনের কাঁচামাল এনে এখানেই ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারি আর এটা সবদিক থেকেই ভাল হবে।’
চীনকে বাংলাদেশের প্রতি অত্যন্ত সহযোগী দেশ অভিহিত করে তিনি আরো বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের একজন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে এই সম্পর্ক আরো জোরদার হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চীনের ভ্যাকসিন আনার লক্ষ্যে তার মন্ত্রণালয় চীনের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসে চীনের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিন আনতে চাইছি- যাতে করে আমরা আমাদের চলমান টিকাদান কর্মসূচি অব্যহত রাখতে পারি।’
চীনের রাষ্ট্রদূত এই ভ্যাকসিন অনুদানের ঘটনাকে বাংলাদেশ-চীন মহামারি বিরোধী সহযোগিতার আরো একটি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য যতটা সম্ভব করে যাব।’
তিনি আরো বলেন, চীনের অভ্যন্তরেই ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের কল্যাণে চীন সরকারের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত বাস্তবিক ও উদার।
এর আগে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাতে স্থবির হয়ে পড়া সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকা- এবং দেশের জনগণের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই ৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সময়মতো এসে পৌঁছেছে।’
এর আগে, ভোর সাড়ে পাঁচটায় চীন থেকে সিনোফার্মের এই ভ্যাকসিনবাহী বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইট সি-১৩০জে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
সিনোফার্ম ভ্যাকসিনটি চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ (সিএনবিজি)’র অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান বেইজিং বায়ো-ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস কো. লি. উৎপাদন করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কোভিড-১৯ প্রতিরোধে জরুরি ব্যবহারের জন্য সিনোফার্মকে তালিকাভুক্ত করেছে।
মঙ্গলবার, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আনতে উইং কমান্ডার মো. হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ১৩ জন এয়ারক্রু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (এইচএসআইএ) থেকে চীনের উদ্দেশে রওয়ানা হয়।
আজ সকালে তারা এখানে পৌঁছালে এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত তাদের স্বাগত জানান।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।