অগ্রসর রিপোর্ট : আওয়ামী লীগের ওপর দেশের জনগণ যে আস্থা ও বিশ্বাস দেখিয়েছে তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে দেশকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন যেকোন রাজনৈতিক দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকলে দেখা যায় দলের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায় কিন্তু আমরা ক্ষমতায় থেকেই জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসটা অর্জন করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, তাঁর দল ক্ষমতায় থাকাকালীন মানুষের জন্য যে উন্নয়ন করেছে, তাঁদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যে কাজটা করেছে সেটা মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে। আর সেটাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেলে গণভবনে তাঁর স্বদেশে প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দল এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে একথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সে সময় বিদেশে অবস্থানকালীন তাঁর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা এবং ছোট মেয়ে শেখ রেহানার দেশে ফেরার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তৎকালীন সরকার। ১৯৮১ সালে তাঁর অনুপস্থিতিতেই তাঁকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করলে এক রকম জোর করেই ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দল এবং সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় জাতীয় সংসদের উপনেতা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
৩৮ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন উপলক্ষে শেখ হাসিনা দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তাঁদের অপরিসীম ত্যাগ তীতিক্ষার জন্যই আওয়ামী লীগ আজকে বাংলাদেশে এক নম্বর রাজনৈতিক দল। যে পার্টি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে এবং সেই আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন ছিল এবারের নির্বাচন।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে একেবারে নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে যারা একেবারে প্রথমবারের ভোটার তারা সকলেই ব্যাপকভাবে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে দলের প্রতি তাঁদের আস্থা ও বিশ্বাস জানিয়েছে।’
বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের মধ্যে আমরা একটা যোগাযোগের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি।’
তিনি বলেন, ‘অন্তত এটুকু বলতে পারি এই ৩৮ বছরে বাংলাাদেশের বা দেশের মানুষের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কোন কাজ আমি বা আমার পরিবারের কোন সদস্য করে নাই।’ ‘নিজের চাওয়া-পাওয়ার জন্য নয়, দেশের মানুষের জন্য, তাঁদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই কাজ করেছি’।
শেখ হাসিনা বলেন, যতবারই ক্ষমতায় এসেছি, কাজ করেছি এবং মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। যা আমাদের ধরে রাখতে হবে এবং দেশটা যেন ঐ স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের হাতে এদেশের মানুষের ভাগ্যটা চলে না যায় তারা যেন আর কোনদিন এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে।
তিনি জাতির পিতার হত্যা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে দেশকে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের করে এনেছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘খুনিরা যদি সমাজে দম্ভ করে খুনের কথা প্রচার করে এবং তার যদি বিচার না হয় তাহলে সে সমাজে এমন অপরাধ চলতেই থাকে।’
তিনি বলেন, একটি দলের সভানেত্রী হিসেবে ৩৮ বছর। চিন্তা করলে অবাকই লাগে। এটা বোধ হয় একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে। আপনাদেরও সময় এসেছে, তাছাড়া বয়সও হয়েছে, চোখের ছানির অপারেশন করিয়ে এসেছি (লন্ডন থেকে), কাজেই বাস্তবতাকেতো মানতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত। কাজেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশের এগিয়ে যাওয়াটা যেন অব্যাহত থাকে। তাহলেই বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।
দেশের দারিদ্রের হার কমিয়ে আমরা ২১ ভাগে নিয়ে এসেছি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই হারকে আমরা আরো নামিয়ে আনবো, এই দেশে হতদরিদ্র বলে কিছু থাকবে না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের কাছে এতটুকু চাইব, জনগণের এই আস্থা ও বিশ্বাসকে যেন আমরা ধরে রাখতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত জীবনে কী পেলাম, না পেলাম সেই চিন্তা না করি। দেশের মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কতটুকু দিতে পারলাম-সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।’
আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে বিভিন্ন সময়ের ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূল পরিবেশে আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘যারা বারবার চেয়েছে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে তারা সফল হয়নি। আওয়ামী লীগ কিন্তু আওয়ামী লীগের মতোই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে।’
ছাত্রজীবনে রাজনীতির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্কুলজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তারপর কলেজে গিয়ে, ইউনিভার্সিটিতে তখনো ছাত্রলীগেরই সদস্য ছিলাম। আমার রাজনীতি ছাত্র রাজনীতি থেকেই শুরু। তবে কখনো কোনো বড় পোস্টে ছিলাম না, পোস্ট চাইনি কখনো।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির একজন সদস্য ছিলাম। কখনো পদ নিয়ে চিন্তা করিনি, পদ চাইওনি। আমরা পদ সৃষ্টি করে সবাইকে পদে বসানোর দায়িত্বটাই পালন করতাম।’
বিদেশে নির্বাসিত অবস্থায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘৭৫ এর পর এত বড় দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে- এটা কখনো ভাবিনি, চাইওনি, এটা চিন্তাও ছিল না।’
১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার সময় ঝঞ্ঝা বিক্ষুদ্ধ একটি দিনে লাখো জনতার বৃষ্টিস্নাত প্রাণঢালা সাদর সম্ভাষণের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা।
মাত্র ১৫ দিন আগেই স্বামীর কর্মস্থল জার্মানীতে ছোট বোনকেসহ যাবার স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
‘সেদিন সবাই ছিল, পরিবারের সবাই বিমান বন্দরে বিদায় জানাতে এসেছিল। আর মাত্র ১৫ দিন পরেই নি:স্ব, রিক্ত, অসহায় হয়ে গেলাম, দেশেও ফিরতে দেওয়া হলো না’,বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যেদিন ফিরেছিলাম সেদিন আকাশ ছিল ঘন মেঘে ঢাকা। প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি, সে বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমি দেখেছি হাজার হাজার মানুষ, এয়ারপোর্ট থেকে মানিকমিয়া এভিনিউর সমাবেশ স্থলে ট্রাকে চেপে পৌঁছতে ৪ ঘন্টা লেগে যায়, লাখো মানুষের ঢল।’
১৯৮১ সালের এদিন দীর্ঘ নির্বাসন শেষে শেখ হাসিনা বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িংয়ে করে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লী থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার সময় তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পান।
পরবর্তীতে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
এরপর থেকে তিনি টানা ৩৮ বছর বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একবার এবং ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে টানা তিনবার মিলিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে চতুর্থ বারের মত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা।