মৌমাছির গুঞ্জন আর গুনগুনানি শুনে মনে হচ্ছে ক্ষেতের মাঠে কোন রাখালিয়া ভাই মনের আনন্দে বাশিঁতে সুর দিচ্ছেন। সবুজ শ্যামল মাঠে হলুদ বর্ণের সরিষা ফুল যেন রাখাল গায়ের বধুদের হাতছানি দিচ্ছে। এযেন আরেক প্রাকৃতিক দৃশ্যের অপরুপলীলা ভুমি। সরিষা ক্ষেতের চতুরপাশে মধু আহরণের বক্স সাজিয়ে রাখছেন। প্রতিটি বক্সে মাত্র ১টা করে রানী মৌ-মাছি রয়েছে এবং মধু আহরণের জন্য প্রায় ১৫ থকে ২০ হাজার শ্রমিকমৌ-মাছি আসা যাওয়া করছে। মৌমাছির গুগুনানি শুনে আশপাশ মুখরিত। এই খামারে ৫৬টি বক্স রয়েছে। প্রতিটা বক্স থেকে সপ্তাহে ৩ ) থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত মধু আহরণ করা হয় এবং স্থানীয়ভাবে প্রতি কেজি মধুর দাম ৫০০টাকা। কথা হয় খামারের মালিক মধুচাষী রিমন রহমানের সাথে, তিনি বলেন আমি কোন প্রশিক্ষন নেইনি, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মধুচাষের বিভিন্ন নিয়ম ও কৌশল দেখি এবং সে অনুযায়ী কাজ (চাষ) শুরু করি। গাজীপুর থেকে রানী মৌমাছি নিয়ে ২০১৬ এর ডিসেম্বরের ৮তারিখ পরীক্ষামুলক নাসিরনগরের কুন্ডা ইউনিয়নে চাষ শুরু করি। মধুর গুণগতমান ভালো হওয়ায় স্থানীয়দের চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষ মধু পাঠাচ্ছে তাদের প্রিয়জনদের কাছে।
নাসিরনগর উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ অফিসার মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে ফান্দাউক ইউনিয়নে ১২০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। মধুচাষীরা প্রায় ৩মাসে ৫লক্ষ টাকা আয় করবে। তারা সরিষা, ধনিয়া, কালিজিরার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে থাকে। তিনি আরো জানান, আমরা জমির মালিকদের বলেছি যেন ফসলি জমিতে কীটনাশক ব্যবহার না করে। এবং মধুচাষীদের উপজেলা কৃষি অফিস হতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
কৃষক ও মধু সংগ্রহকারীসূত্রে জানা গেছে, ফসলি জমিতে পোকা-মাকড় দমনের জন্য কৃষক বাজার থেকে ইচ্ছেমতো দোকানদারের পরামর্শে কীটনাশক ব্যবহার করছেন। এছাড়া বিভিন্ন কীটনাশক কোম্পানির প্রতিনিধিরা সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলি আবাদি জমিতে কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এসব কীটনাশক পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিশেষ করে মৌমাছিই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ কীটনাশক ব্যবহারের ফলে সরিষার ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে মারা পড়ছে।
মধু সংগ্রহকারীরা জানিয়েছেন, সরিষা ফুল থেকে নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ চার মাস মধু সংগ্রহ করা যায়।
মৌচাষী মোঃ রিমন জানান, মৌমাছির খামার বা মৌচাষ দিয়ে আমরা বেকার সমস্যা দূর করতে পারি।
তিনি আরো বলেন, মৌচাষ করতে গিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়। কৃষকরা মৌচাষকে সমস্যা বলে মনে করে। তাদের ধারণা মৌমাছি ফুলের উপড় পড়লে ফুলের ক্ষতি হয়।ফুল শুকিয়ে যায়। আমরা তাদের বুঝিয়ে বলি, মৌমাছি ফুলের উপর পড়লে ফুলের পরাগায়ন ঘটায় ফসলটা পুষ্ট হয়। ফসলটা ৩০ ভাগ বৃদ্ধি হয়।