এগিয়ে আসছে ভোট, প্রচারের ময়দানে নেতা নেত্রীরা। নির্বাচনী প্রচারে এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গে রয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। শুক্রবার আলিপুরদুয়ারে বক্তব্যের শুরুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আকাশের অবস্থা ভাল নয়।” সেই প্রসঙ্গেই যেমন তিনি মনে করালেন, দুর্যোগের রাতেই তিনি কলকাতা থেকে ছুটে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গে বিপর্যস্তদের পাশে দাঁড়াতে, তেমনই সোজা সুর চড়ালেন বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। মমতার সাফ বার্তা, বিপর্যস্তদের ঘর তৈরি করতে টাকা দেব রাজ্য। নির্বাচন কমিশন যেন বিজেপির কথা শুনে ভোট পর্যন্ত আটকে না রাখে। প্রায় ৪৫ মিনিটের বক্তব্যে মঞ্চের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে গিয়ে মমতা একদিকে যেমন মনে করালেন, তাঁর সরকার রাজ্যের মানুষের জন্য কী কী প্রকল্প-সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করেছে, তেমনই বোঝাতে চাইলেন, কেন ভোট নয় বিজেপিকে। ভোটের ময়দান, নির্বাচনী প্রচার মানেই নেতা-নেত্রীদের একে অপরকে উত্তর প্রত্যুত্তরের পালা। এই মুহূর্তে গেরুয়া শিবির বাংলার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে “সন্দেশখালি ইস্যু”। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “গোটা দেশ দেখেছে তৃণমূল সন্দেশখালির অভিযুক্তদের বাঁচানোর জন্য সর্বশক্তি ব্যয় করেছে।” শুক্রবার তার প্রত্যুত্তর মমতার গলায়। জানালেন, “সন্দেশখালি সিঙ্গুর নয়, নন্দীগ্রামও নয়।” সঙ্গেই বলেন, “কিছু ঘটনা স্থানীয়ভাবে ঘটেছে। তাদের সকলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।” জমি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের কথা তুলে ধরে বোঝান, “আমরা মানুষের সঙ্গে অবিচার হতে দিই না।” এখানেই শেষ নয়, জবাবের পর পালটা প্রশ্নও ছুঁড়ে দিয়েছেন তিনি। তুলে আনেন হাথরাস, বিলকিস, সাক্ষী, গুজরাট দাঙ্গা প্রসঙ্গ। প্রশ্ন করেন, এসব ইস্যুতে কতটা নজর দিয়েছে কেন্দ্র? কতবার ঘটনাস্থলে গিয়েছেন মোদি? বিচারের পরিণতি কী? বাংলার দুর্নীতি নিয়েও বারবার সরব হয়েছে বিরোধীরা। ভোটমুখী বাংলায় জনগণের সামনে দাঁড়িয়ে মমতা এদিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বললেন, ” শ্বেতপত্র প্রকাশ কর বাংলায় কী দুর্নীতি হয়েছে আর উত্তর প্রদেশে কী দুর্নীতি হয়েছে, গুজরাটে কী দুর্নীতি হয়েছে।” কেন্দ্র থেকে একাধিক ইস্যুতে বাংলায় টিম এসেছে, পরিস্থিতি পর্যালোচনায়। সেই প্রসঙ্গ তুলেও মমতা বলেন রাজ্যের রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক, সঙ্গেই উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট সহ বিজেপি রাজ্যের রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক। মমতা সরকার দুর্নীতির সঙ্গে আপোস করে না বোঝাতে গিয়ে বলেন, “আমি তো আমাদের কর্মী আরাবুলকে গ্রেপ্তার করতে পারি, শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারি। তোমরা কেন গুন্ডাকে হোম মিনিস্টার রাখ।
নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার বলছেন, “যেখানে অন্যদের আশা শেষ হয় সেখানেই মোদির গ্যারান্টি”। এদিন মমতা বলেন, ” বিজেপির গ্যারান্টি জিরো।” প্রশ্ন করেন, ১০ বছরে কী করেছে? রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে মমতা বুঝিয়েছেন, তাঁর সরকার মানুষের পাশে আছে। এর আগেও মমতার গলায় শোনা গিয়েছে নিশীথ-কটাক্ষ। শুক্রবারেও নাম না করে সাধারণ মানুষকে তিনি মনে করাতে ভুললেন না, “তিনি অন্যকে দুর্নীতিবাজ বলেন। আমরা তাঁকে জলপাইগুড়ি থেকে, কোচবিহার থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম।” কেন? তার উত্তরও মমতা নিজেই দিয়েছেন এদিন। ভরা সভায় তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো বলেন, “সে খুন করত, দাঙ্গা করত, জনগণের টাকা মারত, বোম মারত, পাচার করত।” তাঁর কাছে সবকিছু লিখিতভাবে আছে বলেও জানিয়েছেন মমতা। আপদ-সম্পদ সমীকরণ তুলে ধরেন তিনি এদিনও। ফের বিধানসভা ভোটে ঘটে যাওয়া শীতলকুচি প্রসঙ্গ তুলে আনেন মমতা। তার পরেই দেবাশিস ধরকে নিশানা করে বলেন, “যিনি এই নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি বীরভূমে পালিয়ে গিয়ে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন।” এনআরসি, ক্যা করতে দেবেন না বলে সুর চড়িয়েছেন তিনি এদিন ফের। সভা থেকেই মমতা জানান, নববর্ষে ফের উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন তিনি, ১৫-১৬ সভা করে ১৭ তারিখ যাবেন শিলচরে।