এলো শোকের মাস। শোক পালনের মাস। আগস্ট মানেই জাতির বেদনা বিধুর শোকের মাস। স্বাধীন বাংলাদেশে এ মাসে নেমে আসে বাঙালি জাতির ওপর এক কালো থাবা। বাঙালির ইতিহাসে কলঙ্কিত এক অধ্যায় সূচিত হয়েছে এই আগস্ট মাসে। ইতিহাসের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে বাঙালি জাতি সে নিষ্ঠুর হত্যার বিচারের রায় কার্যকরের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হলেও ঘাতকদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণার চেতনাকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে এ মাস।
আগস্টকে ঘাতকরা তাদের নিষ্ঠুর টার্গেটের মাস হিসেবে বেছে নিয়েছে বারবার। ১৯৭৫ সালের এ মাসে যেমন বাঙালিরা হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, তেমনি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড ছুঁড়ে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল জাতির জনকের কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে গেলেও এই ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী, আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা এবং স্বাধীনতার চেতনাকে মুছে ফেলার অপচেষ্টায় এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করে ঘৃণিত ঘাতকরা।
অকৃতজ্ঞ ঘাতকরা ১৫ আগস্ট কালোরাতে শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, ঘৃণ্য নরপশুরা একে একে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালকে। জঘন্যতম এই হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক শেখ ফজলুল হক মণি, কর্নেল জামিলসহ ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়স্বজন। সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প।
টাইমস অব লন্ডন এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় বলা হয় ‘সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই।’ একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকান্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’
শোকের মাসের প্রথম দিন আজ রাত ১২টা ১ মিনিটে শোকের মাসের প্রথম প্রহরে আলোর মিছিলের মধ্য দিয়ে ৪০ দিন ব্যাপী কর্মসূচির সূচনা ঘটবে। মিছিলটি ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক ধরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর অভিমুখে যাত্রা করবে। এ দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দুপুর ১২টায় টুঙ্গীপাড়াস্থ বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, দোয়া ও মোনাজাত। বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে রক্তদান কর্মসূচি ও আলোচনা সভা। বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে কৃষকলীগ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শোকের মাসে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের নিষ্ঠুরতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানো শোককে শক্তিতে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে বাঙালী এগিয়ে যাবে অভীষ্ট লক্ষ্যে এটাই আজ শোকের মাসের অঙ্গীকার।