স্টাফ রিপোর্টার: অভিযোগ ছিল ম্যাচে পক্ষপাতের। মঙ্গলবার ঠিক সেই ধরনের ঘটনার রোষানলে পড়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর উত্তেজিত হয়ে আরামবাগ ক্লাব কর্মকর্তা-সমর্থকরাবাফুফে ভবন ভাঙচুর করেছে। হামলাকারীরাবাফুফে ভবনের অভ্যর্থনা কক্ষ, সভাপতির কক্ষের আশপাশ এবং ভবনের সামনের কাচ এবং নিচে রাখা গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
জানা গেছে, হেরে যাওয়া ম্যাচ শেষ হতেই রেফারির ওপর আরামবাগ ক্লাবের কর্মকর্মতা-সমর্থকরা রেফারিকে ঘিরে ধরে মারধর নাজেহাল করছিল। তবে মাঠে দায়িত্ব থাকা পুলিশের দ্রুত হস্তক্ষেপ করেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়েছি। এক পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। সেই ঘটনার জের ধরেই এই বাফুফে ভবনে ৫০-৬০ জনের একটি বাহিনী এমন ন্যক্করজনক হামলা চালিয়েছে। এটা বাফুফে ভবনে প্রথম কোনো বড় ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনা।
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার বিকালে কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তাফা কামাল ফুটবল মাঠে। বাংলাদেশের পুলিশের বিপক্ষে ওই ম্যাচে আরামবাগ হেরে গিয়েছে ৩-২ গোলে। আর তাতেই ক্ষুব্ধ সমর্থকরা ম্যাচ শেষ হওয়ার সাথে সাথে ম্যাচ রেফারির ওপর চড়াও হয়েছিল। তাদের অভিযোগ ছিল বাজে রেফারিংয়ের। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে তাদের পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। বিকাল সোয়া ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।
ওই ঘটনায় আরামবাগ ক্লাবের উত্তেজিত সমর্থকরা বাফুফে ভবন হামলা চালিয়েছে। এ সময় তারা বাফুফে ভবনের সামনে ৬-৭ টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সমর্থকদের সাথে ক্লাবের শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরাও ভাঙচুরে অংশ নিয়েছেন। ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের গালিগালাজ করতেও দেখা যায় তাদের।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি বাদল রায় ফোনে জানিয়েছেন, ‘আরামবাগ ক্লাবের উত্তেজিত সমর্থকরা বাফুফে ভবনে ভাঙচুর চালিয়েছে। এ সময় ভবনের সামনের দেয়ালের প্রায় সব কাচ ভেঙে ফেলে তারা। বাফুফে ভবনের অভ্যর্থনা কক্ষও ভাঙচুর করা হয়েছে। ভবনের নিচে থাকা ৬-৭টি গাড়িও ভাঙে হামলাকারীরা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন লিগ ক্লাব কমিটির সদস্য সচিব এবং ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের ফুটবল সম্পাদক এ কে এম নুরুজ্জামান বলেছেন, ‘মাঠে এবং বাফুফে এমন ঘটনা অনভিপ্রেত। এর ফলে খেলোয়াড়-ক্লাব কর্মকর্তাদের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে বাফুফের কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’
আরামবাগ ক্লাবের ইজাজ ফারুক জানিয়েছেন, ‘শুরু থেকেই রেফারি আমাদের বিমাতাসূলভ আচরন করেছে। অকারণে হলুদ কার্ড দিয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে রেফারি সিদ্ধান্ত দিয়েছে। ফলে ম্যাচের পর রেফরিকে নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘মাঠে খুবই বাজে রেফারিং হয়েছে। এ ব্যাপারে রেফারির সঙ্গে কথা কাটাকাটি হওয়ার সময় দায়িত্বরত পুলিশ অকারণেই ক্লাবের কর্মকর্তা এবং সমর্থকদের ওপর লাটিচার্জ করেছে।’ তবে তিনি বলেছেন, ‘ক্লাবের কিছু উগ্র সমর্থক এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে। এদের বিচার হওয়া উচিত। বাফুফে যে ব্যবস্থা নেবে, তাই মেনে নেব।’
ঘটনার বিচার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না হলে লিগ বর্জনের হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ রেফারিজ এ্যাসোসিয়েশন। মাঠেই আরামবাগের উগ্র সমর্থকদের হাতে আহত হয়েছেন এক লাইন্সম্যান।
অনাহূত ঘটনায় ভেস্তে গিয়েছে নেপাল থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরে আসা অনূর্ধ্ব-১৪ দলের ফুটবল দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। মঙ্গলবার বিকালে তাদের সংবর্ধিত করার কথা ছিল। বাফুফে সূত্রে জানা গেছে, প্রমীল ফুটবলারদের উপস্থিতিতে এমন ঘটেছে। অতর্কিতে এমন সন্ত্রাসী ঘটনায় গোটা বাফুফে ভবনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পৌনে ৬টায় দিকে বাফুফে ভবনে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। বুধবার এ ঘটনায় জরুরি সভা ডেকেছে বাফুফে।