অগ্রসর রিপোর্ট : বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যে প্রস্তাবিত ‘তথাকথিত মানবিক করিডোর’ পরিকল্পনায় চীনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, চীন সর্বদা প্রত্যেক দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “মানবিক করিডোর ইস্যুতে চীন কোনোভাবেই জড়িত নয়।”
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এ ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের পাঁচ দশক: একটি নতুন উচ্চতার দিকে’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এসব কথা বলেন।
রাখাইন ইস্যুতে তিনি বলেন, এটি মূলত জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর একটি উদ্যোগ, যাদের লক্ষ্য সেখানে সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা প্রদান। তবে চীন এতে অংশ নেয়নি।
চীনের ‘অ-হস্তক্ষেপ নীতির’ কথা পুনর্ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবে।
তিস্তা নদী পুনরুদ্ধার ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (টিআরসিএমআরপি) বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানান, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ এই প্রকল্পে চীনা কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণকে স্বাগত জানাবে।
তিনি বলেন, “চীন প্রস্তুত রয়েছে সহায়তা দিতে। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের—এগিয়ে যেতে চায় কি না।” প্রকল্পটি দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক বা আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমেও বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চীনা রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “চীন বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানাবে। আমরা চাই, প্রকল্পটি যত দ্রুত সম্ভব শুরু হোক।”
বক্তৃতায় তিনি বলেন, চীন এমন এক বহু-মেরু বিশ্বব্যবস্থাকে সমর্থন করে, যেখানে সার্বভৌম সমতা সবার আগে। প্রতিটি জাতিই, তা যত বড় বা ছোট হোক না কেন, তার সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার জন্য পূর্ণ সম্মান পাওয়ার যোগ্য।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, কোনো রাষ্ট্র অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না এবং প্রতিটি দেশের নিজস্ব সামাজিক কাঠামো ও উন্নয়ন পথ বেছে নেওয়ার অধিকার থাকা উচিত।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদের নিজস্ব উন্নয়ন পথে এগিয়ে যাওয়ার অধিকার রাখে এবং চীন সবসময় এই সিদ্ধান্তকে সম্মান করে এসেছে। বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বহিরাগত হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
তিনি জানান, চীন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং সম্মান রক্ষা ও দেশের বাস্তবতানির্ভর আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টায় সমর্থন দিয়ে আসছে।
চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নানা আন্তর্জাতিক সংকট ও দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যেও এই সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এখন আরও দৃঢ় হয়েছে।
তিনি বলেন, এই সম্পর্কের ভিত্তি হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমতা—এবং ভবিষ্যতেও এ নীতির ভিত্তিতেই সম্পর্ক এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে বিআইআইএসএস-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস স্বাগত বক্তব্য দেন এবং অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যান এএফএম গাউসুল আজম সরকার। অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদও বক্তব্য রাখেন।