অগ্রসর রিপোর্ট: নিউজিল্যান্ডের মাটিতে গত বছর টেস্ট ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। এবারের সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে কিউইদের ৯ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে টাইগাররা। টেস্ট আর ওয়ানডের পর বাকি ছিল টি-টোয়েন্টিতে তাদের হারানো। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত টি-টোয়েন্টি জয় পেল বাংলাদেশ। প্রথম বারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ১৩৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৮ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের হয়ে আজ ওপেনিংয়ে নামেন রনি তালুকদার ও লিটন দাস। দেখেশুনেই প্রথম ওভার খেলেন তারা। তবে দ্বিতীয় ওভারেই ঘটে ছন্দপতন। অ্যাডাম মিলনের বলে টিম সাউদির হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। আউট হওয়ার আগে করেন ৭ বলে ১০ রান। তার বিদায়ে ১৩ রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
১৩ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এই জুটিতে ভর করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল টাইগাররা। তবে থিতু হয়েও নিজের ইনিংসকে বড় করতে পারলেন না শান্ত। দলীয় ৩৮ রানে জিমি নিশামের বলে মিড অফে মিচেল স্যান্টনারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে। আউট হওয়ার আগে করেন ১৪ বলে ১৯ রান।
৩৮ রানে ২ উইকেট হারানোর পর লিটন দাসের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সৌম্য সরকার। মাঠে নেমেই কিউই বোলারদের চড়াও হতে থাকেন। তবে নিজের ইনিংসকে বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেননি তিনি। বেন সিয়ার্সের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। আউট হওয়ার আগে করেন ১৫ বলে ২২ রান। তার বিদায়ে ৬৭ রানেই ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
৬৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে জুটি গড়েন লিটন দাস। তবে দলীয় ৯৬ রানে তাওহীদ হৃদয়ের বিদায়ে ভাঙে ২৯ রানের জুটি। ১৮ বলে ১৯ রান করা হৃদয় মিচেল স্যান্টনারের বলে শর্ট কাভারে টিম সাউদির হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে।
তাওহীদ হৃদয়ের পথ ধরে সাজঘরে ফিরে যান আফিফ হোসেনও। টিম সাউদির বলে শর্ট মিড উইকেটে জিমি নিশামের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন আফিফ। যার ফলে ৬ বলে মাত্র ১ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তিনি। তার বিদায়ে ৯৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
৯৭ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর মেহেদী হাসানকে নিয়ে জুটি গড়েন লিটন দাস। এই জুটি শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। লিটস দাস ৩৬ বলে ৪২ ও মেহেদী হাসান ১৬ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত। কিউইদের হয়ে আজ ওপেনিংয়ে নামেন টিম সেইফার্ট ও ফিন অ্যালেন। তবে এই জুটিকে বেশিদূর এগোতে দিলেন না মেহেদী হাসান।মেহেদী হাসানের বলে প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান টিম সেইফার্ট। তিন বলে শূন্য রান করেই সাজঘরে ফিরে যান তিনি।
মেহেদীর পর কিউই শিবিরে আঘাত হানেন শরিফুল ইসলাম। শরিফুলের বলে সেকেন্ড স্লিপে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান আরেক ওপেনার টিম সেইফার্ট। তিন বলে মাত্র ১ রান করেন তিনি। তার বিদায়ে ১ রানেই ২ উইকেট হারায় কিউইরা।
দলের বিপদ আরও বাড়িয়ে গ্লেন ফিলিপসও ফিরে যান শূন্য রানে। তাকেও ফেরান শরিফুল ইসলাম। শরিফুলের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। তার বিদায়ে ১ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে নিউজিল্যান্ড।
১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ে দলকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন ড্যারিল মিচেল ও মার্ক চ্যাপম্যান। তবে এই জুটিকেও বেশিদূর এগোতে দেননি মেহেদী হাসান। টিম সেইফার্টের মতো মেহেদীর বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান ড্যারিল মিচেল। আউট হওয়ার আগে করেন ১৫ বলে ১৪ রান।
দলীয় ২০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর জিমি নিশামকে নিয়ে জুটি গড়েন মার্ক চ্যাপম্যান। ক্রমেই বাংলাদেশের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠছিল এই জুটি। অবশেষে এই জুটি ভাঙেন রিশাদ হোসেন। রিশাদের বলে ডিপ কাভার পয়েন্টে তানজিম হাসান সাকিবের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মার্ক চ্যাপম্যান। আউট হওয়ার আগে করেন ১৯ বলে ১৯ রান। তার বিদায়ে ৫০ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে পড়ে কিউইরা।
জুটি গড়ে দলকে খাদের কিনার থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন জিমি নিশাম ও কিউই অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার। এই জুটিতে ভর করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে নিউজিল্যান্ড। তবে দলীয় ৯১ রানে মিচেল স্যান্টনারকে ফিরিয়ে ৪১ রানের জুটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম। শরিফুলের বলে মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন স্যান্টনার। মিড উইকেটে দাঁড়ানো সৌম্য সরকার সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন। খালি চোখে আম্পায়ার বুঝতে পারেননি, আসলে কি ঘটেছে। এরপর থার্ড আম্পায়ার বেশ কয়েকবার দেখে আউটের সিদ্ধান্ত দেন। আউট হওয়ার আগে করেন ২২ বলে ২৩ রান।
স্যান্টনারের পর প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন জিমি নিশাম। তাকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। অর্ধশতক থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকা নিশাম মোস্তাফিজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ কাভার পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন। ডিপ কাভার পয়েন্টে দাঁড়ানো আফিফ হোসেন ক্যাচটি তালুবন্দি করতে ভুল করেননি। যার ফলে ৪৮ রান করেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরতে হয় নিশামকে।
জিমি নিশামের পর টিম সাউদিকেও ফেরান মোস্তাফিজ। মোস্তাফিজের বলে ডিপ স্কোয়ার লেগে আফিফ হোসেনের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান সাউদি। তার বিদায়ে ১২৪ রানে ৮ উইকেট হারায় কিউইরা।
টিম সাউদির পর দলীয় ১২৭ রানে তানজিম হাসানের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান ইশ সোধিও। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রান তুলতে সক্ষম হয় কিউইরা।
বাংলাদেশের হয়ে শরিফুল ইসলাম ৩টি, মেহেদী হাসান ২টি, মোস্তাফিজ ২টি, তানজিম হাসান ১টি ও রিশাদ হোসেন ১টি করে উইকেট নেন।