অগ্রসর ক্রীড়া ডেস্ক : নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ২৬৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ১২ রানেই তিন উইকেট নেই বাংলাদেশের। একে একে বিদায় নেন তামিম-সাব্বির-সৌম্য। দলীয় ৩৪ রানে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিবের বীরত্ব। এ দুজন গড়ে তোলেন ২২৪ রানের এক মহাকাব্যিক স্বরণীয় পার্টনারশিপ।
দুজনই তুলে নেন দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। বাংলাদেশ ১৬ বল হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নেয় ৫ উইকেটে। এ জয়ে কিউইদের ছিটকে দিয়ে টুর্নামেন্টের সেমির দৌড়ে টিকে থাকলো বাংলাদেশ।
২৬৭ রানের টার্গেটে শুরুতেই শূন্য রানে ফিরে যান তামিম ইকবাল। প্রথম ম্যাচে শতক, পরের ম্যাচে ৯৫ রান করা তামিম আজ পারলেন না। টিম সাউদির বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার পর রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি। তাতেও হয়নি শেষ রক্ষা।
৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন সাব্বিরও। শুরু করেছিলেন পরপর দুই বলে চার হাঁকিয়ে। কিন্তু নিজের দ্বিতীয় ওভারে টপ অর্ডারে ফেরা সাব্বির রহমানকে বিদায় করেন টিম সাউদি। একই পথে হাঁটেন সৌম্য সরকার। আউট হওয়ার আগে ১৩ বলে করেন ৩ রান। এরপর মিলনের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন মুশফিক।
বাকি গল্পটুকু সাকিব ও রিয়াদের । দুজন মিলে গড়ে তুলেন ২২৪ রানের জুটি। সাকিব ১১৫ বলে ১১৪ রান করে যখন আউট হয় জয় তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বাকি পথটুকু পাড়ি দেন রিয়াদ-সৈকত। রিয়াদ ১০৭ বলে অপরাজিত ১০২ রান করেন। সাকিব শতক পূরণ করেন ছয় মেরে। রিয়াদ শতক পূরণ করেন চার মেরে। চার মেরে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন সৈকত।
কার্ডিফে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দারুণ সূচনাই পায় নিউজিল্যান্ড। কিউইদের লুক রনকি ও মার্টিন গাপটিলের ওপেনিং জুটি বেশ জমে উঠেছিল। এই জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে লুক রনকিকে সাজঘরে ফেরান বাংলাদেশি এই পেসার। তাসকিনের বল মিড উইকেটে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে ধরা পড়েন রনকি। ১৮ বলে দু’টি চারে ১৬ রান করেছেন তিনি।
এরপর দেখেশুনেই ব্যাট করছিলেন গাপটিল। লুক রনকিকে নিয়ে ৪৬ রানের জুটি করেন তিনি। গাপটিলকে সাজঘরে ফেরান রুবেল হোসেন। এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন কিউই এ ওপেনার। বিদায়ের আগে ৩৩ রান করেন গাপটিল। তিনে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ডকে টানেন কেন উইলিয়ামসন।
গাপটিলের বিদায় আনন্দকে ধূসর করে কেন উইলিয়ামসন ও রস টেলর তৃতীয় উইকেটে গড়ে তুলেন ৮৩ রানের জুটি। বিপদের কারণ হয়ে উঠা এই জুটি ভাঙে রান আউটে। ৫৭ রান করে রান আউটের ফাঁদে পড়েন কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসন।
উইলিয়ামসনের পর ফিফটি তুলে নেন রস টেলরও। ওয়ানডেতে টেলরের এটি ৩৭তম হাফ সেঞ্চুরি। ৮২ বলে ৬টি চারের মারে করেছেন ৬৩ রান।
তাসকিনের বল স্কুপ করতে গিয়ে ফাইন লেগে মোস্তাফিজের হাতে ধরা পড়েন টেলর। তার প্রথম উইকেটেই অবদান ছিল মোস্তাফিজের। রনকির ক্যাচটাও নিয়েছিলেন মোস্তাফিজই।
এরপর নিউজিল্যান্ড শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন মোসাদ্দেক হোসেন। টপাটপ তিন উইকেট তুলে নেন এই টাইগার ক্রিকেটার। নেইল ব্রুমকে ৩৬, কোরি অ্যান্ডারসন শূন্য আর জিমি নিশামকে ২৩ রানে ফেরান মোসাদ্দেক।
৪৯ তম ওভারে নিজের ৯ম ওভার বল করতে আসেন মুস্তাফিজ। এই ওভারের ৩য় বলে অ্যাডাম মিলনেকে সাজঘরে পাঠান ফিজ। মিলনে ৭ রান করে আউট হন। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৬৫ রান করতে সক্ষম হয় নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে মোসাদ্দেক হোসেন ৩, তাসকিন ২, মুস্তাফিজ ও রুবেল ১টি করে উইকেট নেন।
বিশ্বকাপের পর সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট, হারলেই বিদায় নিশ্চিত। সেই চাপের মুখে ম্যাচ বের করে আনল বাংলাদেশ। ২০০৫ কার্ডিফ রূপকথার তুলনায় কোনো অংশে কম নয়! বরং আরও বেশিই হয়তো।
আর সাকিব? তাঁর জন্যও কি কম চাপের ছিল ম্যাচটি? আজ বোলিং করার সময় থেকে সাকিবের চোখেমুখে ভেসে উঠছিল মরিয়া ভাবটা। তাঁকে নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন উঠছে! সাকিব সেরা মুহূর্তটাই বেছে নিলেন নিজেকে চেনানোর।
অস্ট্রেলিয়াকে ইংল্যান্ড হারিয়ে দিলে সেমিফাইনালে চলে যাবে বাংলাদেশ। বৃষ্টিতে ম্যাচটা ভেসে গেলেও হবে। অবশ্য অস্ট্রেলিয়া জিতলে হতাশ হতে হবে।
তবে এ এমন এক জয়, যার ছায়া থেকে যাবে আরও অনেক দিন!