অগ্রসর ক্রীড়া ডেস্ক : ত্রিদেশীয় সিরিজের ষষ্ঠ ও শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে র্যাংকিং-এ ষষ্ঠস্থানে ওঠার পাশাপাশি ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলা অনেকাংশেই নিশ্চিত করে ফেললো বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় শিরোপা আগেই নিশ্চিত করেছিলো নিউজিল্যান্ড। রানার্স-আপ নিশ্চিত ছিলো বাংলাদেশেরও। ৪ খেলা শেষে ১২ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করলো কিউইরা। আর সমানসংখ্যাক ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে রানার্স-আপ হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করলো টাইগাররা। ৪ খেলায় ২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় ও শেষস্থানে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করে স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড।
ডাবলিনের ক্লোটার্ফে টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে প্রথমে ব্যাটিং-এ পাঠান বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্তটা কেন নিয়েছিলেন, তা প্রথম ওভারেই প্রমাণ করে দিয়েছিলেন ম্যাশ। নিজেদের তৃতীয় বলেই নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক টম লাথামকে ফেরত পাঠানোর পথ করে ফেলেন টাইগার দলপতি। কিন্তু স্কয়ার লেগে লাথামের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন সানজামুল ইসলামের জায়গা সাত মাস পর ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া নাসির হোসেন। তাই শুন্য রানেই জীবন পেয়ে যান লাথাম।
জীবন পেয়ে ভয়ংকর হবার ইঙ্গিত দেন লাথাম। প্রথম তিন ওভারের মধ্যে ৪টি বাউন্ডারি মারেন তিনি। অন্যপ্রান্তে লুক রঞ্চি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছেন লাথামের বাউন্ডারিগুলো। তাই নিজেকে সামলে রাখতে পারেননি তিনি। তাই ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বাংলাদেশের পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের চতুর্থ ডেলিভারিটি এক্সট্রা কভার দিয়ে ওভার বাউন্ডারি হাকাঁতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন রঞ্চি। আর সেই ক্যাচটি লুফে নেন সাকিব আল হাসান। ফলে দলীয় ২৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। ফলে মাত্র ২ রানেই বিদায় নিতে হয় রঞ্চিকে।
এরপর নিল ব্রুমকে নিয়ে বাংলাদেশ বোলারদের উপর ছড়ি ঘোড়ান লাথাম। ধীরে ধীরে জুটি বড় হবার সাথে সাথে দলের স্কোরও বাড়তে থাকে। দলের স্কোর দেড়শ পার করতে গিয়ে দু’জনে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন। তবে দলীয় ১৫৬ রানে এই জুটি ভাঙ্গেন লাথামের ক্যাচ ফেলা নাসির। প্রথম স্পেলে এক ওভারে ১০ রান দেয়ার পর তাকে আক্রমন থেকে সরিয়ে নেন অধিনায়ক মাশরাফি। দ্বিতীয় স্পেলে পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই ব্রুমকে থামান নাসির। মাশরাফির ক্যাচে পরিণত হবার আগে ৭টি চারে ৭৬ বলে ৬৩ রান করেন ব্রুম। ফলে লাথামের সাথে ১৪৭ বলে গড়ে উঠা ১৩৩ রানের জুটিও ভেঙ্গে যায়।
ব্রুমকে থামিয়ে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পান নাসির। তাই নিজের পরের ওভারের প্রথম বলে লাথামকেও থামিয়ে দেন তিনি। শুন্য রানে নাসিরের হাতে ক্যাচ দিয়ে জীবন পাওয়া লাথাম ১১টি চারে ৯২ বলে ৮৪ রান করেন।
১৬৭ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর কিছুটা সর্তক হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। তবে উইকেটের সাথে মানিয়ে নিয়ে মারমুখী হতে যাচ্ছিলেন কোরি এন্ডারসন। কিন্তু এমন সময়ে এন্ডারসনের পথে বাধাঁ হয়ে দাড়ান সাকিব। ব্যক্তিগত ২৪ রানেই এন্ডারসনকে থামিয়ে দেন তিনি।
এরপর নিউজিল্যান্ডকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন রস টেইলর। এক প্রান্ত দিয়ে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন তিনি। তবে অন্যপ্রান্ত দিয়ে নিউজিল্যান্ড শিবিরে হ্যাট্টিক আঘাত হানেন মাশরাফি-সাকিব জুটি। মাত্র ২ রানের ব্যবধানে নিউজিল্যান্ডের মিডল-অর্ডারের ৩ উইকেট তুলে নেন মাশরাফি-সাকিব ।
মাশরাফি শিকার করেন জেমস নিশাম ও কলিন মুনরোকে। আর শুন্য রানে মিচেল স্যান্টনারকে বোল্ড করেন সাকিব। নিশাম ৬ ও মুনরো ১ রান করেন। ফলে ২২৬ রানেই সপ্তম উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। এমন অবস্থায় ইনিংসের বাকী ৪১ বল আগেই প্রতিপক্ষকে গুটিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছিলো বাংলাদেশ।
কিন্তু সেটি হতে দেননি টেইলর। শেষ পর্যন্ত ৬টি চারে ৫৬ বলে অপরাজিত ৬০ রান করে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে ২৭০ রানের পুঁজি এনে দেন টেইলর।
বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফি-নাসির-সাকিব ২টি করে উইকেট নেন। এছাড়া রুবেল ও মুস্তাফিজুর ১টি করে উইকেট নেন।
র্যাংকিং-এর ষষ্ঠস্থানে ওঠা ও ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার টিকিট অনেকাংশে নিশ্চিত করতে এ ম্যাচেই ২৭১ রান করতে হবে বাংলাদেশকে। সেই লক্ষ্যে শুরুটা উড়ন্ত পাখির মতই করেছিলেন ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। ইনিংসের প্রথম বলেই নিউজিল্যান্ডের অফ-স্পিনার জিতেন প্যাটেল ছক্কা মারেন তামিম। পরের বলে ১ রান নিয়ে সৌম্য সরকারকে দায়িত্ব দেন উড়ন্ত শুরুটা ধরে রাখতে। কিন্তু সৌম্য ব্যর্থ হয়েছেন। নিজের প্রথম বলেই শুন্য হাতে বিদায় নেন আগের দু’ম্যাচে ৬১ ও অপরাজিত ৮৭ রান করা সৌম্য।
সৌম্যর বিদায়টা আমলে নেননি তামিম ও তিন নম্বরে নামা সাব্বির রহমান। দ্রুত উইকেটে সেট হয়ে ব্যাট হাতে নিজেদের কারিশমা দেখান তামিম ও সাব্বির। এতে ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলেই তিন অংকে পা দেয় বাংলাদেশের স্কোর। এরমধ্যে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৬তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পান তামিম।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি পেতে খুব বেশি দেরি করেননি সাব্বিরও। নিজের ৬৪তম বলে বাউন্ডারি দিয়ে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন সাব্বির। দু’ব্যাটসম্যানের হাফ-সেঞ্চুরিতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন পুরোপুরি বাংলাদেশের দখলেই ছিলো। কারন ২৬তম ওভার শেষে ১ উইকেটে ১৩৬ রান বাংলাদেশের।
তবে ২৭তম ওভারে তামিম-সাব্বিরের জমে যাওয়া জুটিটি ভেঙ্গে নিউজিল্যান্ডকে খেলায় ফেরানোর পথ তৈরি করেন স্যান্টনার। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮০ বলে ৬৫ রান করেন বিদায় নেন তামিম।
তামিমের বিদায়ের ৮ বল পর উইকেট পতনের তালিকায় নাম তুলেন সাব্বিরও। ৯টি চারে ৮৩ বলে তামিমের মতই ৬৫ রানে থামেন সাব্বির। দ্বিতীয় উইকেটে এ জুটি ১৫৯ বলে ১৩৬ রান যোগ করেন।
১৪৮ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর কিছু ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। ঐ অবস্থায় বাংলাদেশকে আরও চাপে ফেলে দেন মোসাদ্দেক হোসেন। দলীয় ১৬০ রানে নিজের নামের পাশে ১০ রান রেখে আউট হন চার নম্বরে ব্যাটিং-এ নামা মোসাদ্দেক।
এরপর বড় জুটি গড়ার পরিকল্পনা করেন মুশফিকুর ও সাকিব। উইকেট না হারানোই বড় লক্ষ্য ছিলো তাদের। তাই দেখেশুনে খেলে রান তুলছিলেন মুশফিকুর-সাকিব। তাতে সফলতার পথেই হাটচ্ছিলেন তারা। কিন্তু সেই পথে বাঁধা হয়ে দাড়াঁন নিউজিল্যান্ডের ডান-হাতি পেসার হামিশ বেনেট। ৩২ বলে ১৯ রান করা সাকিবকে বিদায় দেন তিনি। মুশফিকুরের সাথে ৩৯ রানের জুটি গড়েছিলেন সাকিব। তখন জয় থেকে ৭২ রান দূরে দাড়িয়ে বাংলাদেশ। হাতে উইকেট ছিলো ৫টি ও বল ছিলো ৭০টি।
আর সেই কাজটি অবলীলায় শেষ করেছেন মুশফিক ও সাত নম্বরে নামা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। নিউজিল্যান্ড বোলারদের পাত্তা না দিয়ে ব্যাট হাতে নিজেদের সেরাটাই দিয়েছেন মুশফিকুর ও মাহমুদুল্লাহ। শেস পর্যন্ত ১০ বল বাকী থাকতেই বাংলাদেশের জয়ের তরী তীরে ভিড়িয়েছেন মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ। ষষ্ঠ উইকেটে ৫৯ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬৮ রানের জুটি গড়েন তারা।
মুশফিকুর ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৫ বলে ৪৫ ও মাহমুদুল্লাহ ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৬ বলে ৪৬ রান করেন। দু’জনের অপরাজিত দুর্দান্ত ইনিংসে ওয়ানডেতে নবমবারের মত নিউজিল্যান্ডকে হারালো বাংলাদেশ।