ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ঝালকাঠির হাসপাতালে লাশ ফেলে পালানোর ঘটনায় গৃহবধূ মারুফা আক্তারকে (১৯) হত্যার ঘটনায় নলছিটি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বুধবার রাতে নিহতের মা মোসা: লাকী বেগম বাদী হয়ে নলছিটি থানায় মারুফার দুই দেবর, শ্বশুর, শাশুড়ী, জাসহ ৫ জনকে এ হত্যার দায়ে আসামী করেছে। নলছিটি থানায় ওসি সুলতান মাহমুদ অভিযোগ গ্রহন করে এসআই সলেমান মাহমুদকে তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করেছেন।
অন্যদিকে গত সোমবার সন্ধ্যার আগে নলছিটি উপজেলাধীন ষাইটপাকিয়া গ্রামে শ্বশুর বাড়ীতে মৃত্যু হওয়া গৃহবধূ মারুফা আক্তারের লাশ হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘরে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। তবে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালী এক আ’লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান সহ একটি মহল ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে বলে নিহত মারুফার পরিবার অভিযোগ করেছে।
নিহতের মা মোসা: লাকী বেগমের অভিযোগে উল্লেখ করে, ৪বছর পূর্বে ষাটপাকিয়া মারুফা আক্তারকে বহরমপুর গ্রামের সুলতান হাওলাদারের পুত্র সুমন হাওলাদারের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর থেকেই মারুফাকে যৌতুকের জন্য স্বামী ও শ্বশুর বাড়ীর লোকেরা শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন শুরু করে।
এক পর্যায়ে বেকার মেয়ে জামাই বিদেশে যাওয়ার জন্য যৌতুক দাবী করলে মেয়ের সুখ ও জামাইকে বিদেশে পাঠাতে বহু কষ্টে ৩ লাখ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু স্বামী বিদেশে যাওয়ার পর শ্বশুর বাড়ীর লোকজন তাকে সার্বক্ষনিক সন্দেহ ও নানাভাবে নির্যাতন করতে শুরু করে। এসব বিষয় প্রবাসী স্বামী সুমনের কাছে জানালে সেও পরিবারের পক্ষ নিয়ে স্ত্রীকে অকথ্য গালাগাল দিতো। এমনকি মারুফা নলছিটি ডিগ্রী কলেজ থেকে এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলে তাতেও তারা বাধা দিচ্ছিল।
অভিযোগ আরো উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন ১৭ জুলাই বিকাল ৪টা/৫টার দিকে পুনরায় যৌতুকের বিষয় নিয়ে মারুফাকে শারিরিক নির্যাতন করলে সে বাদী মাকে ফোন করে তাকে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানায়। এতে আসামীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে তার হাত থেকে মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে বেপরোয়া নির্যাতন করার এক পর্যায় মারুফা মারা গেলে ঘরের ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে বাহির থেকে রুম আটকে দেয়। ইতিমধ্যে বাদিনী মারুফাকে বাড়ীতে আনার জন্য ছোট ছেলে মারুফকে পাঠালে আসামীরা তার সাথে দুর্ব্যবহার করে।
এক পর্যায়ে ছোট ভাই মারুফ ঘরের বাইরের জানালা দিয়ে উকি দিলে বোন মারুফার দেহ রুমের মধ্যে ফ্যানের সাথে ঝুলতে দেখে চিৎকার দেয়। এসময় আসামীরা ছুটে এসে তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়ে দ্রুতো মৃতদেহ নিয়ে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে আসে ও মৃতদেহ হাসপাতালে রেখেই তারা পালিয়ে যায় বলে অভিযোগে দাবী করেন।
এ ব্যাপারে নলছিটি থানায় ওসি সুলতান মাহমুদ জানায়, বুধবার রাতে মারুফার মা লাকী বেগমের দেয়া লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।