অগ্রসর রিপোর্ট :গভীর রাতে হঠাৎ গুলির আওয়াজ। আতঙ্কিত এলাকাবাসী। কেউ একজন জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯-এ ফোন করেন। সেই ফোন পেয়ে গুলির উৎস খুঁজতে যায় পুলিশ। একটি বাড়িতে চালানো হয় অভিযান। সেখানে মিলে অস্ত্রের কারখানার সন্ধান। প্রায় তিন ঘণ্টার অভিযানে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কিছু অস্ত্র এবং তা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্তের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনজনকে আসামি করে দায়ের করা হয়েছে মামলা। মূল অভিযুক্তকে খুঁজছে পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের এই ঘটনা সম্পর্কে শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক বলেন, ‘গতকাল রাতে ডবলমুরিং থানার বংশালপাড়া এলাকায় একটি গুলির শব্দ শোনা যায়। ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ সেই গুলির শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে এই কারখানার সন্ধান পায়। বাসাটিতে মূলত পাইপগান তৈরি করা হতো।’
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ওই বাসাটি নিজাম খান নামের এক ব্যক্তির। তিনি পলাতক রয়েছেন। তার স্ত্রী মেহেরুন্নেছা মুক্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনায় থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় নিজাম খান, তার স্ত্রী মেহেরুন্নেসা এবং অপর এক সহযোগী শাহ আলমকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, নিজামের বাড়ি থেকে দুটি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি এয়ার গান, অস্ত্র তৈরির ডায়াগ্রামসহ বিভিন্ন ধরনের লোহা কাটার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এসব দিয়ে ঘরে বসেই নিজাম অস্ত্র তৈরি করতেন।
পুলিশ জানায়, ওই বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে দুটি করে হাতুড়ি, করাত, কাগজের তৈরি আগ্নেয়াস্ত্রের নকশা, সাতটি এসএস পাইপ, ১১টি বিভিন্ন আকারের লোহার পাইপ, ১৮টি বিভিন্ন আকারের স্প্রিং, একটি করে ওয়েল্ডিং মেশিন, গ্রেডিং মেশিন, ওয়েল্ডিং হোল্ডার, আর্থিং ক্যাবল, বিদেশি কাটার, রিপিট গান মেশিন, এসএস বক্স পাইপ, স্টিলের তৈরি দুইনলা ব্যারেল, প্লাস্টিকের তৈরি সবুজ রঙের অস্ত্রসদৃশ বস্তু, লোহার ছেনি, কাঠের হাতলযুক্ত বাটাল, স্প্রিং প্লায়ার্স, নোজ প্লাস, স্প্রিং তৈরির প্লায়ার্স, লোহার তৈরি পাইপ রেঞ্জ, ড্রিল মেশিন, স্টিলের গ্রিপ প্লায়ার্স, প্লাস্টিকের বাঁটযুক্ত ছোড়া ও কাটি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপ-কমিশনার ফারুক বলেন, ‘নিজামের অপরাধের ধরন দেখে মনে হচ্ছে সে পেশাদার অপরাধী। নিজে বাসায় অস্ত্র তৈরি করে বিক্রি করত। তাকে ধরা গেলে জানা যাবে কাদের কাছে এসব অস্ত্র বিক্রি করত।’
ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বর থেকে থানায় একটি ফোন আসে। সেখানে বংশাল পাড়ায় গুলির শব্দ পাওয়ার কথা জানানো হয়। খবর পেয়ে ডবলমুরিং থানার একটি দল সেখানে গিয়ে বিভিন্ন বাসায় এবং এলাকায় প্রায় তিন ঘণ্টা অভিযান চালায়। সে সময় শাহ আলম নামের এক ব্যক্তির বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করার সত্যতা পাওয়া যায়।