সরকারি হিসাবে বগুড়ায় চাতাল রয়েছে ১ হাজার ৩২১টি। এর বাইরেও ছোট-বড় কিছু চাতাল রয়েছে। সব মিলিয়ে এর সংখ্যা ২২০০-২৩০০টি। তবে ধান সংকটসহ বিভিন্ন কারণে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চাতাল। গত সাত বছরে প্রায় অর্ধেকের বেশি চালকল বন্ধ হয়েছে। কারণ হিসেবে মালিকরা বলছেন, শ্রমিকের মজুরি বেশি ও চাহিদামতো ধান না পাওয়ায় ক্রামগত লোকসান হচ্ছে। এক রকম বাধ্য হয়েই চাতালগুলো বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় আবাদি জমি রয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৩০ হেক্টর। এর মধ্যে প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ হেক্টবে রোপা আমন এবং সমপরিমাণ জমিতে বোরো আবাদ হয়। প্রতি বছর বোরোর চাল আকারে ফলন ধরা হয় ১২-১৩ লাখ টন। আর আমনের ফলন ধরা হয় সাড়ে ৫-৬ লাখ টন। সব মিলিয়ে প্রায় ১৯ লাখ টন চাল উৎপাদন হয় প্রতি বছর। এ চাল পেতে কৃষকের পরের ধাপে কাজ করেন চাতাল বা মিল মালিকরা। ধান ক্রয় করে চাল তৈরি, পরে তা বাজারে বিক্রি করেন। বগুড়ায় এখন যে পরিমাণ চাতাল আছে, তার সঠিক হিসাব না থাকলেও বেশির ভাগই এখন বন্ধ।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলিমুর রেজা বলেন, ‘এ উপজেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ১০০০-১ হাজার ২০০টি চাতাল রয়েছে। এর বাইরে অটোরাইস মিল রয়েছে ছয়টি, সেমি অটো রাইস মিল রয়েছে প্রায় ৪০০টি। অটো রাইস মিলগুলো চালু রাখতে ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিটি মিলের জন্য অনেক ধান প্রয়োজন হয়। সিংহভাগ ধান অটো রাইস মিলমালিকরা কিনে নেন। চাতাল মালিকরা চাহিদামতো ধান পান না। এছাড়া প্রতি মৌসুমে শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে লোকসানের মুখে পড়তে হয়। শ্রমিকরা অন্য কোনো পেশায় চলে গেলেও চাতাল মালিকরা অর্থিক সংকটে ধুঁকছেন দিনের পর দিন। বর্তমানে শেরপুর উপজেলায় সিংহভাগ চাতাল বন্ধ। চালু রয়েছে ১৫০-২০০টির মতো।’
একই অবস্থা বগুড়া সদর উপজেলা, আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, নন্দীগ্রাম ও শিবগঞ্জে। এরই মধ্যে এ পাঁচটি উপজেলায় কমপক্ষে ৮০০টির মতো চাতাল বা হাসকিং মিল বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু আদমদীঘি উপজেলায় প্রায় আট হাজার শ্রমিক চাতালের কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। আদমদীঘিতে ২০০০ সালের পর অটো রাইস মিল স্থাপন শুরু হয়। তখন থেকেই চাতাল মালিকদের সঙ্গে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। অটো রাইস মিলের সংখ্যা বাড়ায় চাতাল মালিকরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি। নানা সংকট আর মূলধন হারিয়ে চাতাল বন্ধ হতে শুরু করে। এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২৩০টি চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। যেগুলো চালু আছে, সেগুলোও পড়েছে লোকসানের মুখে।
আদমদীঘির চালকল মালিক মো. মতিউর বলেন, ‘আদমদীঘিতে একসময় পাঁচ শতাধিক চাতাল গড়ে ওঠে। কিন্তু আধুনিকায়নের ফলে চাতাল মালিকরা টিকে থাকতে পারছে না। একটি চাতালে প্রতিদিন ৭৫ কেজি ওজনের ১৪০ বস্তা ধান প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে অটো রাইস মিলে প্রতিদিন তিন হাজার টনের বেশি ধান প্রয়োজন হয়। এ কারণে অটো রাইস মিল মালিকরা বাজারের অধিকাংশ ধান কিনে নিচ্ছেন। চাতাল মালিকরা ধান পাচ্ছেন না। এর সঙ্গে শ্রমিক মজুরি দিন দিন বাড়ছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন সক্ষমতার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে ও মূলধন হারিয়ে একের পর এক চাতাল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
শেরপুর চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আয়ুব আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শেরপুরে এক সময় এক হাজারের বেশি চাতাল ছিল। এখন সেখানে ১০০টির মতো টিকে আছে।’