স্টাফ রিপোর্টার: জেলার বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় বালিখাল এলাকায় অবস্থিত নাগুড়া খামারে আমনের নতুন জাত উদ্ভাবনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
১৯৩৬ সালে এখানে প্রতিষ্টিত হয় ধান গবেষনা কেন্দ্র। শুরুতে এটি ভারতীয় উপমহাদেশের আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখানে একমাত্র জলি আমন ধান গবেষনা কেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। গবেষনা তথ্য ভারত ছাড়াও বৃটেনে যেত। এ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট এর তিনটি ধানের জাত উদ্ভাবন হয়। কিন্তু পরবর্তিতে গাজীপুরে ব্রি’র কেন্দ্র থেকে সকল গবেষনা পরিচালিত হওয়ায় নাগুড়া ফার্মে আর কোন নতুন জাত উদ্ভাবন হয়নি। তবে ৩০ বছর পর পুনরায় জলি নাগুড়া ফার্মে সফলতা এসেছে নতুন গবেষনায়।
নাগুড়ায় অবস্থিত ব্রি’র আঞ্চলিক কার্যালয়ের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম মাসুদুজ্জামান জানান, নাগুড়া ফার্ম থেকে ইতোপূর্বে জলি আমনের তিনটি জাত উদ্ভাবন করা হয়। এগুলোর মধ্যে হাসি (ব্রি-১৭), শাহজালাল (ব্রি-১৮) ও মঙ্গল(১৯)। ১৯৮৫ সালের পর নতুন কোন জাত উদ্ভাবনের কার্যকম এখান থেকে গ্রহণ করা হয়নি। ২০১৩ সালের শেষ দিকে তিনি এখানে যোগদান করে জলমগ্নতা ও বন্যা সহিষ্ণুতা ধানের জিন নিয়ে গবেষনা শুরু করেন। নতুন জাতের নাম করন হয় বিআরএইচ ১১.৯.১১.৪/৫ বি।
নাগুড়া ফার্ম ছাড়াও ব্রি’র বিভিন্ন স্টেশনে শুরু হয় নিরিক্ষা। বোরো মৌসুমের জন্য ব্রি-২৮ এর চেয়েও বেশী ফলন যাতে আসে এর জন্য এ জাত উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা ইতোমধ্যে সফল হয়েছে।
নতুন জাতের এ ফসলে হেক্টর প্রতি ফলন পাওয়া গেছে সাড়ে ৮ মেট্রিক টন। যেখানে ব্রি-২৮ ও ২৯ এর উৎপাদন ৭ মে.টন। নতুন এ ধানের চারা অনেক উঁচু হয়। তবে এটি হেলে পড়ে না। শিলা বৃষ্টিতেও নতুন জাতের ধানের কোন ক্ষতি হয় না। পাশাপাশি এর ফলনের সময়ও তুলনা মূলক কম। ২৮ ও ২৯ এর প্রতি শীষে যেখানে ধান থাকে একশ’ এর মত সেখানে নতুন এ জাতে প্রতি শীষে ধানের পরিমান ২৫০ থেকে ৩শ’।
পাশাপাশি আউশ মৌসুমের জন্য স্বল্প জীবনকালীন আর একটি জাত উদ্ভাবনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এ জাতের নাম বিআর ৯২.২.৬.২/বি। জলি আমনের নতুন এ জাতের উৎপাদন হচ্ছে হেক্টর প্রতি সাড়ে ৪ মে.টন। যেখানে প্রচলিত ধানের উৎপাদন হয় হেক্টর প্রতি দেড় মে.টন। নতুন জাতের শীষে ধান হয় ৩৫০ থেকে ৪শ’। প্রচলিত ধানের শীষে থাকে ১৭৫টি।
ড. মাসুদুজ্জামান আরও জানান, নতুন জাত দ’ুটি স্থানীয় জাতের সাথে আধুনিক জাতের শংকরায়নের মাধ্যমে উন্নয়ন করা হয়েছে। এটি এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। কারন আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট (ইরি) বলছে, লম্বা গাছে উচ্চ ফলন সম্ভব নয়। উচ্চ ফলনের জন্য প্রয়োজন নিচু চারা। কিন্তু বাংলাদেশে এটি সম্ভব হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্টেশনে পরীক্ষার পর, এ দুটি নতুন জাত হিসাবে অবমুক্ত হলে হাওর এলাকায় ধানের ফলন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। ফলে নতুন এ ধান দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেবে বলে তিনি আশা করেন।
বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট এর মহা-পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস জানান, দেশের বিভিন্ন স্টেশনে নতুন কয়েকটি কৌলিন জাত আবিস্কার হয়েছে। তবে তিনি এখনও মাঠের অবস্থা সরজমিনে দেখেননি। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবর্তিত আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়াতে নতুন জাত নিয়ে গবেষনা চলছে। হাওর এলাকায় আগাম বন্যা ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ফসল রক্ষার জন্য নতুন জাত আবিস্কারের প্রচেষ্ঠা প্রশংসনীয়। নাগুড়া ফার্মের গবেষনাটি যদি ফলপ্রসূ হয়, তাহলে হাওর এলাকার কৃষকরা উপকৃত হবে।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।