স্টাফ রিপোর্টার: মন্ত্রিসভায় আজ গৃহকর্মী বিশেষ করে গৃহপরিচারিকাদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহকর্মকে ‘শ্রম’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫’ এর খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর কেবিনেট সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, জেনেভা কনভেনশনের ১৮৯ ধারায় স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই ধরনের নীতি গ্রহণ করছে।
তিনি বলেন, এই নীতিমালায় গৃহপরিচারিকাদেরকে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সুরক্ষা, কল্যাণ, অবকাশ, বিনোদন ও ছুটিসহ তাদের সুষ্ঠু ও মর্যাদাসম্পন্ন কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
শফিউল আলম বলেন, শ্রম আইনের আলোকে এই নীতি প্রণীত হয়েছে। হালকা কাজের জন্য গৃহপরিচারিকাদের ন্যূনতম বয়স ১৪ হতে হবে। কেবল ১৮ বছরের বেশি বয়সের গৃহপরিচারিকারা ভারী কাজের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে।
কেবিনেট সচিব বলেন, বাড়ির মালিক ও পরিচারিকার মধ্যে পারস্পরিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহপরিচারিকার বেতন নির্ধারিত হবে। গৃহপরিচারিকাকে কোন ধরনের নিপীড়ন, অসদাচরণ বা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা যাবে না।
তিনি বলেন, নীতিমালায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে ফৌজদারি দন্ডবিধি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনসহ বিদ্যমান আইনে শাস্তির সুনির্দিষ্ট বিধান রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গৃহপরিচারিকাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয় তদারক করবে। তিনি আরো বলেন, সরকার সচেতনতামূলক প্রচারণার পাশাপাশি গৃহপরিচারিকাদের জন্য ‘হেল্প লাইন’ চালু করবে।
আজকের কেবিনেট বৈঠকে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সরকারি খাত শিল্পকারখানার জন্য অব্যবহৃত ভূমির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বিল-২০১৫ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
কেবিনেট সচিব বলেন, নতুন খসড়ায় বিনিয়োগ বোর্ড (বিওআই) এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশনকে একীভূত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) গঠন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, বিওআই এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের অধীনে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী বিডায় অন্তর্ভূক্ত হবেন এবং দুটি সংস্থার সকল সম্পত্তি ও দায় বিডা’র মালিকানায় অর্পিত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব নয়া কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান ও অর্থমন্ত্রীকে ভাইস-চেয়ারম্যান করে বিআইডিএ’র ১৭ সদস্য বিশিষ্ট গভর্নিং বোর্ড গঠন করা হবে। বাণিজ্য, শিল্প, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের মতো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিগণ এ বোর্ডের সদস্য হবেন। তাছাড়া সরকার একজন নির্বাহী চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে নির্বাহী কমিটির ৬ জন সদস্য নিয়োগ দেবে।
মন্ত্রিসভায় এশিয়া ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক বিল-২০১৫ এর খসড়া এবং মূল চাঁদার অর্থ পরিশোধ ও বাংলাদেশ সরকারের অংশ প্রদানের প্রস্তাবও নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে।
এই খসড়া আইন অনুযায়ী এআইআইবি’র ভিত্তিতে মূল চাঁদা হিসাবে কিস্তিতে আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশকে ১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার প্রদান করতে হবে।
মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা বিল-২০১৫-এর খসড়ারও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে যা ১৯৫৭ সালের মূল আইনের বঙ্গানুবাদ।
তাছাড়া মন্ত্রিসভা ২০১৬ সালের ১০ম জাতীয় সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি যে ভাষণ দেবেন তার খসড়া পর্যালোচনা করেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, কতিপয় মন্ত্রণালয়ের আরো তথ্য সংযোজন করে এই খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীগণ এবং সংশ্লিষ্ট সচিবগণ এ বৈঠকে অংশ নেন।