ওপেনার শিখর ধাওয়ানের সেঞ্চুরি করা ম্যাচে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৭ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে শ্রীলংকা। ধাওয়ানের ১২৫ রানের সুবাদে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩২১ রানের বড় সংগ্রহ দাড় করায় টিম ইন্ডিয়া। জবাবে দানুষ্কা গুনাথিলাকা, কুশল মেন্ডিস ও অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের হাফ-সেঞ্চুরিতে স্মরণীয় এক জয় তুলে নেয় শ্রীলংকা। এই জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিতে খেলার আশা জিইয়ে রাখলো শ্রীলংকা। সেই সাথে জমে উঠলো ‘বি’ গ্রুপের পয়েন্ট টেবিল। এই গ্রুপের চারটি দলই ২টি করে ম্যাচ খেলে ১টি করে জয় ও হারে ২ পয়েন্ট নিয়ে সমান অবস্থায় আছে। তবে রান রেটে শীর্ষে ভারত।
জয়ের জন্য ৩২২ রানের লক্ষ্যে শুরুটা ভালো হয়নি শ্রীলংকার। দলীয় ১১ রানেই ওপেনার উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকবেলাকে হারায় তারা। ৭ রান করে ফিরেন ডিকবেলা।
এরপর বিশাল লক্ষ্যের দিকে ছুটতে যেমন বড় জুটি প্রয়োজন থাকে, সেটিই করে দেখান আরেক ওপেনার দানুষ্কা গুনাথিলাকা ও কুশল মেন্ডিস। ১৩৯ বলে ১৫৯ রানের বড় জুটি গড়েন তারা। এতে জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে লংকানরা। ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭২ বলে ৭৬ রান করে গুনাথিলাকা আউট হলে দলীয় ১৭০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় শ্রীলংকা।
মেন্ডিসের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউটের ফাঁদে পড়েছিলেন গুনাথিলাকা। ঠিকই একই কারণে থামতে হয় মেন্ডিসকেও। ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯৩ বলে ৮৯ রান করে আউট হন মেন্ডিস। ফলে ম্যাচে ফেরার পরিকল্পনা করে ভারত। কিন্তু ভারতের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দেন শ্রীলংকার অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ও কুশল পেরেরা। ৬২ বলে ৭৫ রানের জুটি গড়েন তারা। এ জুটিতে ম্যাচ জয়ের পথ অনেকাংশেই পরিষ্কার হয়ে যায় শ্রীলংকার। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে নামের পাশে ৪৭ রান রেখে আহত অবসর নেন পেরেরা। তখন জয় থেকে ৫১ রান দূরে শ্রীলংকা। হাতে বল ছিলো ৪২টি।
পরবর্তীতে আসলে গুনারতে কে নিয়ে শ্রীলংকার জয় নিশ্চিত করেন ম্যাথুজ। ৩শ’র বেশি রান তাড়া করে ৮ বল বাকী থাকতেই দারুণ এক জয়ের স্বাদ পায় শ্রীলংকা। এর আগে এই ভেন্যুতে ৩১৭ রান টার্গেটে জয়ের স্বাদ পেয়েছিলো ভারত। ২০০৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আজ ভারতের সেই রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ডের জন্ম দিলো শ্রীলংকা। ম্যাথুজ ৪৫ বলে অপরাজিত ৫২ ও গুনারত ২১ বলে অপরাজিত ৩৪ রান করেন।
এর আগে, লন্ডনের কেনিংটন ওভালে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং-এ নামে ভারত। আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩৬ রানের জুটি গড়া রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান, আজও জুটিতে সেঞ্চুরি করেন। ১৪৯ বলে ১৩৮ রানের জুটি গড়েন রোহিত-ধাওয়ান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ চতুর্থবারের মত সেঞ্চুরির জুটি গড়লেন রোহিত-ধাওয়ান। সর্বোচ্চ দু’বার করে সেঞ্চুরির জুটি রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল-শিবনারায়ন চন্দরপল ও দক্ষিণ আফ্রিকার হার্শেল গিবস-গ্রায়েম স্মিথ। এছাড়া ভারতের মধ্যে প্রথম জুটি হিসেবে টানা তিন ম্যাচে জুটিতে সেঞ্চুরি করলেন তারা।
৭৯ বলে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ব্যক্তিগত ৭৮ রানে রোহিত বিদায় নিলে, প্রথম উইকেট হারায় ভারত। এরপর ক্রিজে গিয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও আগের ম্যাচের হিরো যুবরাজ সিং। কোহলি শূন্য ও যুবরাজ ৭ রানে ফিরেন। দুর্দান্ত শুরুর পর ১৭৯ রানে মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় ভারত।
সেখান থেকে দলকে চাপমুক্ত করেন ধাওয়ান ও ধোনি। মারমুখী মেজাজে রানের চাকা ঘুড়াতে থাকেন তারা। এরমাঝে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১০ম সেঞ্চুরি তুলে নেন ধাওয়ান। ৭৭তম ইনিংসে দশম সেঞ্চুরি তুলে নেয়ায় দ্রুত ১০বার তিন অংকে পা দেয়া তৃতীয় ব্যাটসম্যান হলেন ধাওয়ান। ৫৫ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক ও হাশিম আমলা ৫৭তম ইনিংসে দশম সেঞ্চুরির হাঁকিয়ে তালিকার উপরের দিকে রয়েছেন।
সেঞ্চুরি তুলে ১২৫ রানে থামেন ধাওয়ান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের হয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এটি। তার ১২৮ বলের ইনিংসে ১৫টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো। ধাওয়ান ফিরে যাবার পর ভারতের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৩২১ রানে পৌছে দেন ধোনি ও কেদার যাদব। ধাওয়ানের সাথে জুটিতে ৬৪ বলে ৮২ রান যোগ করা ধোনি থামেন ৫২ বলে ৬৩ রান করে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৬২তম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে ৭টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন ধোনি। শেষের দিকে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৩ বলে অপরাজিত ২৫ রান করেন কেদার যাদব। শ্রীলংকার পেসার লাসিথ মালিঙ্গা ৭০ রানে ২ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত : ৩২১/৬, ৫০ ওভার (ধাওয়ান ১২৫, রোহিত ৭৮, ধোনি ৬৩, মালিঙ্গা ২/৭০)।
শ্রীলংকা : ৩২২/৩, ৪৮.৪ ওভার (মেন্ডিস ৮৯, গুনাথিলাকা ৭৬, ভুবেনশ্বর ১/৫৪)।
ফল : শ্রীলংকা ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : কুশল মেন্ডিস (শ্রীলংকা)।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।