চট্রগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ছোটখাটো ভুলত্রুটি ঘরোয়াভাবে সমাধান করা হবে। কথায় কথায় মুখোমুখি, কথায় কথায় মারামারি, কথায় কথায় খুনোখুনি বন্ধ করুন।’
শনিবার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ওবায়দুল কাদের এই মন্তব্য করেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত নগরের পাঁচলাইশে একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই প্রতিনিধি সম্মেলন হয়।
এ সময় ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংযত আচরণ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগকে বলছি, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কাজ হলে আমরা সাংগঠনিকভাবে এবং প্রশাসনিকভাবে আমরা কাউকে রেহাই দেব না। নেত্রী পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, ছাত্রলীগ খারাপ খবরের শিরোনাম হবে না। সুনামের ধারায় ফিরে আসো। তা না হলে আরও কঠিন, আরও কঠোর ব্যবস্থা আমরা নেব।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গুটিকয়েকের অপকর্মের জন্য আমাদের বিশাল কীর্তিকে, শেখ হাসিনার কীর্তিকে জিম্মি করতে পারি না। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব। নেতাদের কাছে অনুরোধ, ছাত্রলীগকে স্বার্থ রক্ষার পাহারাদার হিসেবে ব্যবহার করবেন না। তাতে আপনাদের ক্ষতি হবে, ছাত্রলীগেরও ক্ষতি হবে।’
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লার চেহারা পাল্টে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। অথচ আমরা জায়গায় জায়গায় কলহের আগুন ছড়িয়ে এবং অপকর্ম করে উন্নয়নকে ম্লান করে দিচ্ছি।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র দেড় বছর। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো বিরোধী দল আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগকে হারাতে পারবে না।’
বিএনপিকে নিয়ে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনেও ব্যর্থ। তিনি বলেন, ‘কুমিল্লাতে জিতে তারা সারা দেশ জয় করে নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা নারায়ণগঞ্জে জিতে এত উচ্ছ্বাস দেখাইনি। ইউনিয়ন পরিষদের ৯০ পার্সেন্ট আমাদের। তৃণমূলে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হচ্ছে। এই বিজয়কে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের কাছে ঐক্যবদ্ধভাবে নিয়ে যেতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ পারবে না।’
আপনারা কি আমাদেরকে নির্বাচনে ডেকেছিলেন?
বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে চেষ্টা করার আহ্বান জানিয়ে দলের মহাসাচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যেরও জবাব দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘তাদের নাকি নির্বাচনে ডাকতে হবে। আরে ডাকতে হবে কেন? আপনারা যখন ক্ষমতায় তখন আমাদের নির্বাচনে ডেকেছিলেন?’।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কে কাকে ডাকে? নির্বাচন আমার অধিকার। এটা কারো দয়া নয়, করুণা না। সরকার কি করুণা বিতরণ করবে আপনাদের নির্বাচনে আনার জন্য? গরজ আপনাদের। ভুল গতবার করেছেন। এই চোরাবালি থেকে বের না হলে আপনাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব আগামী নির্বাচনে ঝুঁকির মুখে পড়বে।’
নির্বাচনে লেভের প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে বিএনপির দাবির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সমান অধিকার কুমিল্লায় পাননি? নারায়ণগঞ্জে পাননি? নারায়ণগঞ্জে হারলেন, কুমিল্লায় জিতলেন। এরা জিতেও বলে, আরও ভোট পেতাম, যদি নিরপেক্ষ নিরপেক্ষ হত। কে এদের বোঝাবে? এরা বেপরোয়া হয়ে গেছে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য।’
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বিএনপি বেপরোয়া ড্রাইভারের মতো বেপরোয়া রাজনীতিক হয়ে রাজনৈতিক দুর্ঘটনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোন সময় কোনটা ঘটিয়ে ফেলে, বলা যায় না। মাঝে মাঝে যা হয়, এখানে ওখানে, সিলেটে, মিরসরাইয়ে, সীতাকুণ্ডে যা যা হয়। ঢাকার আশকোনা, কল্যাণপুরে। পেছনে কারা? বিএনপি।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন আওয়ামী সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম প্রমুখ এই কর্মী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।