বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার জন্যই নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে। এমন কারণ দেখিয়ে আরসিবিসি বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে আর কোনো টাকা দেয়া হবে না।
ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজের গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে ফিলিপাইন সরকারকে অর্থ পরিশোধ করতে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেছেন আরসিবিসি ব্যাংকের পরামর্শক থিয়া ডায়েথ।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরি হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে তাদের স্বচ্ছ থাকা উচিত। ফিলিপাইন সরকারের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংককে যথার্থ প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে এবং এই চুরির জন্য যারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করতে হবে।
জন গোমেজ সোমবার ডেইলি ইনকোয়ারারকে বলেছেন, আমরা রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের কাছে অবশ্যই অর্থ দাবি করব। এর আগে বেশ কিছু শুনানিতে তারা বলেছিল, তাদের দোষ প্রমাণিত হলে তারা বাংলাদেশকে ৫ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দেবে। তারা পরিষ্কারভাবেই এটা জানিয়েছিল। কিন্তু এখন সবকিছু অস্বীকার করছে ব্যাংকটি।
আরসিবিসির এমন কঠোর অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে রিজার্ভের চুরি হওয়া অর্থের সিংহভাগ অংশই ফেরত পাওয়ার আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। চুরি হওয়া রিজার্ভের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি ডলার এরই মধ্যে ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাকি প্রায় সাড়ে ৬ কোটি ডলার ফেরত পাওয়া যাবে কিনা তা-ও নিশ্চিত নয়।
তবে চুরি যাওয়া অর্থের বাকি অংশ ফেরত দেবে না বলে ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংক যে বিবৃতি দিয়েছে, বাংলাদেশ সেটাকে অপ্রাসঙ্গিক বলে বর্ণনা করেছে।
জন গোমেজ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ফিলিপাইনের সরকারের মাধ্যমে ওই ব্যাংকের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের যে তিনজন ঊর্ধ্বতন আইনজীবী এই অর্থের বিষয়ে কাজ করছিলেন, তারা গত রাতে পদত্যাগ করেছেন বলে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে।
তিনি মনে করেন, ফিলিপাইনের সরকার অর্থ আদায়ের ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে। ফলে বাংলাদেশ রিজাল ব্যাংকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবে না। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই রিজার্ভের অর্থ চুরি যাওয়ার কথাও মানতে রাজি নয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সুভঙ্কর সাহা রয়টার্সকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিউইয়র্ক ফেডের পক্ষ রিজাল ব্যাংকে অর্থ আটকে দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু রিজাল ব্যাংক তাতে সাড়া দেয়নি। তা ছাড়া নগদে এ অর্থ উত্তোলনও ছিল অস্বাভাবিক। অর্থ স্থানান্তরের প্রক্রিয়াও স্বচ্ছ। তাই পুরো ব্যাপারটাই প্রশ্নবিদ্ধ।
গত ফেব্রুয়ারিতে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে নিউইয়র্ক ফেড থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় এক বিলিয়ন ডলার সরানোর চেষ্টা হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।
অন্যদিকে ৪টি মেসেজের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকে সরিয়ে নেওয়া হয় ৮১ মিলিয়ন ডলার। এর একটি বড় অংশ ফিলিপাইনের জুয়ার টেবিলে চলে যায়।
এর মধ্যে ক্যাসিনো মালিক কিম অংয়ের ফেরত দেয়া দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশকে ফেরত দেয়ার আদেশ দেয় ফিলিপাইনের আদালত। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেড় কোটি ডলার ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।