স্টাফ রিপোর্টার: মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিক্ষুকদের বসতবাড়ির ওপর কর আদায়ের অভিযোগ উঠেছে নীলফামারী সদর উপজেলার ১নং চওড়া বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টুর বিরুদ্ধে।
ইউপি চেয়ারম্যানের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দুই দিন ধরেই বিক্ষোভ করছে বরগাছাবাসী।
শনিবার দুপুর ১২টায় ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে তারা। এ সময় তারা অসহায় ভূমিহীন পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থ ফেরত চেয়ে স্লোগান দেন।
ইউনিয়নের বাসিন্দারা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে জানান, দেড় মাস ধরে চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টুর লোকজন বসতবাড়ির ওপর ট্যাক্স তুলছেন।
নির্ধারিত কোনো হার ছাড়াই মনগড়া হিসেবে যখন যার কাছ থেকে যত পাচ্ছেন তখন তার কাছ থেকে তত টাকা আদায় করছেন।
স্থানীয়রা জানালেন, যারা টাকা আদায় করছেন তারা কেউ ইউনিয়ন পরিষদের অধীনস্থ নন। অপরিচিত লোকজন এসে হামলা-মামলার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করেছেন। যারা ভিজিডি, ভিজিএফের আওতায় রয়েছেন তাদের কাছ থেকে ৫০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে।
চওড়া ইউনিয়নের ভিক্ষুক ইফাদ্দি মামুদ (৮০) দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘মোর খ্যাড়ের একটা ভাঙ্গা ঘর ছিল, আগের বছর আগুন লাগি সেটাও পুড়ি গেইছে। মানুষের কাছত হাত পাতি কয়টা টিন আর পাটখড়ি নিয়া আবার ঘর বানাইসু। ভিক্ষা করি একমুঠ খাই। হামরা ক্যামন করি বাড়ির কর দিমো।’
তার অভিযোগ, ‘কয়দিন আগত চেয়ারম্যান লোক পাঠাইছে টাকার জন্য। কিসের টাকা? শুনির চাইলে কয় তোমাক চেয়ারম্যান এই কার্ডটা দিবে। তোমার জমি আর বাড়ির করের জন্যে টাকা দেও। কয়দিন টাকার জন্য ঘুরছে টাকা দেই নাই। পরে মামলার ভয় দেখাইছে। কইছে টাকা দিলে এই কার্ড পাইবেন। কার্ড না পাইলে সরকারি কোনো সাহায্য পাইবেন না উল্টা মামলা হইবে। পুলিশ ধরি নিয়া যাইবে। এই কথা শুনি ভিক্ষার টাকা জমে ৮০ টাকা দিছি।’
একই গ্রামের মাঞ্জুমা বেগম বলেন, ‘হামরা মানুষের বাড়িত কাম করি খাই। সরকার হামাক কোনো সাহায্য দেয় না । তাও চেয়ারম্যান হামার কাছত জমির কর নেয়। এ্যার আগত হামার কাছত কাহো এইলা চায় নাই। হামরা প্যাটত ভাত দিবার পাইনা হামার কিসের ট্যাকা? চেয়ারম্যান হামাক ভয় দেখায় টাকা নিছে। আগত ৬০ টাকা পরে ৩০ টাকা। কিন্তু কার্ডত বলে ৬০ টাকা লেইখছে। বাকি ৩০ টাকা কায় খাইল?’
স্থানীয়রা আরও বলেন, ভিক্ষুক ইফাদ্দির মতো আরও ৩ জন ভিক্ষুক ও মাঞ্জুমার মতো অসংখ্য অসহায় ভূমিহীনের কাছ থেকে বসতবাড়ির ওপর কর আদায় করা হয়েছে।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টু দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘মানুষের ভালো করতে হয় না। এর আগে কোনো চেয়ারম্যান এভাবে জনগণকে রেজিস্টারভুক্ত করেনি। আমিই প্রথম এমন একটা উদ্যোগ নিলাম। সেখানেও বদনাম!’
সরকারের বসতবাড়ির ওপর কর আদায়ের নির্দেশ আছে এমন দাবি করে তিনি বললেন, ‘ইউনিয়নের উন্নয়নের স্বার্থে তা করা হয়েছে। মাইকিং করে টাকা তোলা হয়েছে, কারও অগোচরে নয়।’
ভিক্ষুক ও অসহায়দের কাছ থেকে কর আদায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘দুই মাসের জন্য কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার পল্লী শক্তি সমাজকল্যাণ সংস্থা নামে একটি এনজিওর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কর আদায়ের ব্যাপারে কাজ করা হয়েছে। এনজিওটি সমাজ সেবার নিবন্ধনকৃত।’
ইউপি চেয়ারম্যান জানালেন, ২০১১ সালে মে মাসে চুক্তি স্বাক্ষরিত করা হয়েছে। এখনো সব কাজ শেষ হয়নি। ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ডে কর আদায় হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা চলে গেছে। আদায়কৃত টাকা কৃষি ব্যাংকের ২০৩০০ হিসাব নম্বরে রাখা হয়েছে।
সবশেষে তিনি বললেন, ‘কাজ করতে গেলে কিছু ভুলত্রুটি হতেই পারে। আমি ভিক্ষুকের বিষয়টি দেখব।’
নীলফামারী সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সমাজ সেবার অন্তর্ভুক্ত অন্য জেলার কোনো এনজিও নীলফামারীতে কাজ করতে হলে সমাজসেবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আমাদের ওয়াকিবহাল করে কাজ করতে হবে। কিন্তু এখানে এ রকম কোনো এনজিও আসেনি। তারা অবৈধভাবে কাজ করেছে। আমাদের লোক ওই ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে তদন্ত করবে।’