স্টাফ রিপোর্টার: যুক্তরাজ্যের এমপি ও ছায়ামন্ত্রী টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক বলেছেন, আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভাবাদর্শে বিশ্বাস করি। সেই বিশ্বাস থেকেই আমি লেবার পার্টিতে যোগ দিয়েছি।
‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমার নানা শেখ মুজিবুর রহমান এবং খালা শেখ হাসিনার যে রাজনৈতিক মতাদর্শ তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা দুজনই সাধারণ ও গরীব মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনীতি করেছেন। ব্রিটেনের লেবার পার্টির মূল নীতিও সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। যা খালা এবং নানার রাজনৈতিক মতাদর্শের সাথে মিলে যায়। তাই আমি লেবার পার্টি করি,’ রাজধানীর হোটেল র্যাডিসন ব্লুতে আয়োজিত তরুণদের সাথে এক আলাপচারিতায় তিনি আজ একথা বলেন।
সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তরুণ শিক্ষক, চিকিৎসক ও রাজনৈতিক কর্মীদের সাথে আজ এই বিশেষ আলাপচারিতার আয়োজন করে।
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার বড় মেয়ে ব্রিটিশ বাঙালী টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক এবছর মে মাসে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি সেখানে লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রিপরিষদে সংস্কৃতি, গণমাধ্যম ও ক্রীড়া বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি গত ২১ ডিসেম্বর সোমবার স্বামীসহ বাংলাদেশ সফরে আসেন। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এটাই তার প্রথম বাংলাদেশ সফর।
রাজনীতিকেই কেন বেছে নিলেন টিউলিপ সিদ্দিক এমন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ছোট বেলা থেকেই আমাদের বাড়িতে সবসময় রাজনীতির আলোচনা শুনেছি। আমার দাদা-দাদিও অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন ও নারীবাদী ছিলেন। আমার নয় দশ বছর বয়সের সময় আমার বাবার খুব অসুখ হলো। তখন লন্ডনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস আমার বাবার চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ করে তোলে। যেখানে বলা হয়েছিলো আমার বাবা আর কোনদিন উঠে দাঁড়াতে পারবে না, সেই বাবা দিব্যি অধ্যাপনা করতে লাগলেন।
টিউলিপ বলেন, সেসময় লন্ডনের চিকিৎসা ব্যবস্থায় মুগ্ধ হয়ে মানুষের সেবায় আত্বনিয়োগ করার লক্ষ্যেই নিজেকে রাজনীতির সাথে জড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। ১২ বছর বয়স থেকেই লেবার পার্টির নানা কাজের সাথে যুক্ত হই। সেদেশের নিয়ম অনুযায়ী ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টিতে যোগ দেই।
টিউলিপ সিদ্দিক ২০০৬ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলের জন্য কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে গেলেও দমে যাননি। তিনি বলেন, আমি হেরে গেলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতটা খুব উপভোগ করেছিলাম এবং পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।২০১০ সালের মে মাসে পুনরায় একই আসন থেকে কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হই। তিনি বলেন, যে এলাকায় আমার মা-বাবার বিয়ে হয়েছে আমি সেই আসনেই বাস করি। সেই আসন থেকেই আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছি।
‘আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে আামি যুক্তরাজ্যের এমপি হবো, কিন্তু আমি হয়েছি’ টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, একজন ব্রিটিশ বাঙালী মুসলিম নারী হিসেবে সব রকম প্রতিবন্ধকতাই মোকাবেলা করতে হয়েছে। কিন্তু আমি সবসময় চেষ্টা করেছি নিজের এলাকার মানুষের জন্য কাজ করার। সে যত ছোট সমস্যাই হোক না কেন, তা সমাধানের চেষ্টা করেছি। আমি আমার রাজনীতিতে তরুণদের অধিকারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। তাদের জন্য পলিসি তৈরি করেছি। সেটাই হয়তো আমাকে এখানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে।
রাজনীতির শিক্ষা কোথায় পেলেন তিনি, এমন এক প্রশ্নের জবাবে টিউলিপ বলেন, আমার মা এবং খালার কাছ থেকে। রাজনীতি করতে গেলে সবার আগে ধৈর্য্য দরকার। আমি খালার কাছ থেকে সেটা শিখেছি। আরো একটা বিষয় তারা আমাকে শিখিয়েছেন সেটা হলো বিনয়ী হওয়া। তারা সবসময় বলেন, তুমি যত বড়ই হওনা কেন, কখনো অহংকার করোনা। অন্যের কথা শোনো। অন্যকে গুরুত্ব দাও। এটি রাজনীতির ক্ষেত্রে খুব জরুরী।
টিউলিপ সিদ্দিক তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই শিক্ষাটাই তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিলেন। তিনি বলেন, আমরা একটু বড় হলেই অহংকারী হয়ে উঠি। এটা খুব খারাপ। কখনো অহংকারী হবেন না। নিজের লক্ষ্য স্থির রাখুন। কাংখিত জায়গায় পৌঁছাতে পারবেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।