ড. আবদুল আলীম তালুকদার
পবিত্র রমজানুল কারিমের শেষ শুক্রবার মুসলিম উম্মাহর কাছে দিনটি ‘জুমাতুল বিদা’ নামে পরিচিত। প্রতি বছর বিশ্ব মুসলিম ইবাদত-বন্দেগি ও জিকির-আসকারের মাধ্যমে দিবসটি পালন করে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা ও রহমত কামনা করে থাকে। ইসলামের প্রাথমিক যুগেও জুমআর প্রচলন ছিল। সে সময় জুমার দিনকে ‘ইয়াওমে আরুবা’ বলা হতো, যা ইহুদি, খ্রিষ্টান তথা জাহেলি সম্প্রদায়ের লোকেরা পালন করত। তারা জুমার দিনে গল্প-গুজব, হাসি-ঠাট্টা, আমোদ-প্রমোদের আসর বসাত। এই ছিল তাদের জুমার সংস্কৃতি। ‘জুমা’ শব্দটি আরবি, যার অর্থ হচ্ছে একত্রিত হওয়া, দলবদ্ধ হওয়া, সমবেত হওয়া ইত্যাদি। পবিত্র কুরআনুল কারিমে এই দিনকে ‘ইয়াওমুল জুমা’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ (স.) মদিনায় হিজরতের পর এই দিনকে জুমার দিন নামকরণ করেছেন এবং মদিনায় যাওয়ার পথে কুবা নামক স্থানে জুমার নামাজ আদায় করেছিলেন।
পবিত্র কুরআনুল কারিমে জুমার নামাজ আদায়ের নির্দেশ প্রদান করে আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি করো। (সুরা আল জুমুআ: ৯) রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমা বিনা ওজরে ও ইচ্ছা করে ছেড়ে দেবে, আল্লাহ রব্বুল আলামিন তার অন্তরে মোহর মেরে দেবেন। (সুনানে আবু দাউদ)
জুমার দিনে মুমিন-মুসলমানদের ইমানি সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই দিনের তাত্পর্য বর্ণনা করে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ করা হয় যে, রসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যেসব দিবসে সূর্য উদিত হয় তার মধ্যে উত্তম দিবস হচ্ছে জুমা, সেদিন আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়েছে। একই দিনে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন। আবার পুনরায় পৃথিবীতে আগমন করেন। এই দিনেই তিনি ইন্তেকাল করেন। এই শুক্রবারই কিয়ামত সংঘটিত হবে। এই পুণ্য দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যখন মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া কবুল হয়।’ (সুনানে তিরমিজি ৪৯১, সুনানে আবু দাউদ: ১০৪৬)
ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, রমজান মাসের শেষ শুক্রবার আল্লাহর নবি হজরত দাউদ (আ.)-এর পুত্র হজরত সুলায়মান (আ.) জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন এবং আল্লাহর মহিমা তুলে ধরতে সেখানে পুনর্নির্মাণ করেন মুসলমানদের প্রথম কিবলাহ্ ‘মসজিদুল আকসা’। এ জন্য প্রতি বছর সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে ‘আর কুদস’ দিবস হিসেবেও পরিচিত।
জুমআতুল বিদা রোজাদারদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মাহে রমজানের সমাপনান্তে এ বছর এর চেয়ে ভালো দিবস আর পাওয়া যাবে না। সুতরাং এই পুন্যময় দিনটির যথাযথ সদ্ব্যবহার করা প্রত্যেক দিনদার মুমিন-মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। নবি করিম (স.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান রমজান মাস পেল, কিন্তু সারা বছরের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না, তার মতো হতভাগা আর কেউ নেই।’ অতএব, সব ধর্মপ্রাণ মুসলিম নর-নারীর প্রতি আহ্বান, আসুন এই জুমাতুল বিদা তথা মহিমান্বিত রমজানুল মুবারকে মহান রবের দরবারে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য কায়মনোবাক্যে পানাহ চাই এবং আল্লাহ তাআলার ইবাদতে মশগুল হয়ে তাকে রাজি-খুশি করার জন্য সচেষ্ট থাকি।
লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক ও সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ, শেরপুর।