তোফায়েল আহমেদ
বঙ্গবন্ধু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে তবেই স্বাধীনতা ঘোষণা করার রাজনৈতিক বৈধতা অর্জন করেন। সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেও তিনি বিচক্ষণতার সঙ্গে বক্তব্য পেশ করেছেন। বঙ্গবন্ধু সবসময় চেয়েছেন তিনি আক্রান্ত হবেন, কিন্তু আক্রমণকারী হবেন না। সেজন্যই ২৫ মার্চ জিরো আওয়ারে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পূর্ব প্রস্তুতি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন
ছাব্বিশে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের ঐতিহাসিক এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাবনত মস্তকে স্মরণ করি। ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে স্বার্থান্বেষী মহল কুতর্ক জারি রেখেছে। ’৭০-এর নির্বাচনে যদি বঙ্গবন্ধু অংশগ্রহণ না করতেন বা যদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেতেন, তাহলে স্বাধীনতা ঘোষণা করার সুযোগ পেতেন না, অথবা হয়তো পেতেন তবে অনেক পরে।
বঙ্গবন্ধুকে অনেকেই বলেছিলেন, জেনারেল ইয়াহিয়ার প্রণীত ‘এলএফও’র (লিগাল ফ্রেম ওয়ার্ক অর্ডার) অধীনে ’৭০-এর নির্বাচনে গিয়ে কোনো লাভ হবে না।’ তাদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এলএফও! এই নির্বাচনকে গণভোট হিসেবে আখ্যায়িত করে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো এবং প্রমাণ করবো কে এই দেশের নেতা। আর নির্বাচনের পর আমি এলএফও টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলবো।’
বঙ্গবন্ধুর দাবি অনুযায়ী এলএফও-তে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব মেনে নেওয়া হয়। জাতীয় পরিষদে ৩১৩টি (সংরক্ষিত নারী আসনসহ) আসনের মধ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে আমরা পেলাম ১৬৯টি আসন। কিন্তু ইয়াহিয়া খান ভবিষ্যতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও যাতে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করতে না পারেন, সেজন্য এলএফও-তে বিতর্কিত ২৫ ও ২৭ নং দুটি অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত করেন।
এলএফও-তে সন্নিবেশিত দুটি ধারাই ছিল আসন্ন নির্বাচনে বিজয়ী দলকে ঠেকানোর অপপ্রয়াস। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সত্যিকার অর্থেই নির্বাচনকে গণভোটে রূপান্তরিত করে বিজয়ী হন। নির্বাচনের পরপরই ’৭১-এর ৩ জানুয়ারি তিনি আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত এমএনএ ও এমপিএ যারা তাদের নিয়ে শপথ অনুষ্ঠান করে বলেছিলেন, ‘এই গণভোটের মাধ্যমে ৬ দফা আজ আমার না, আমার দলেরও না, ৬ দফা আজ জনগণের সম্পত্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
যদি কেউ ৬ দফার সঙ্গে বিশ^াসঘাতকতা করে, তবে তাকে জ্যান্ত কবর দেওয়া হবে। এমনকি আমি যদি করি আমাকেও।’ এভাবে তিনি ৬ দফাকে আপোসহীন অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু জানতেন ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না এবং তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করবে। সেজন্য বঙ্গবন্ধু নিয়মতান্ত্রিকভাবে এগিয়েছেন। এই নির্বাচনে সারাদেশ সফর করে তিনি বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেন। পহেলা মার্চ যখন ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেন, মানুষ রাজপথে নেমে আসে।
সাতই মার্চ বঙ্গবন্ধু জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণের মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষকে স্বাধীনতার এক মোহনায় দাঁড় করিয়ে নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র বাঙালি জাতিতে রূপান্তরিত করেন। নির্বাচনের পরপরই ১৮ ফেব্রুয়ারি ধানম-ির ৩২ নং-এ ডেকে চার জাতীয় নেতার সামনে আমাদের চারজনকেÑমণি ভাই, সিরাজ ভাই, রাজ্জাক ভাই ও আমাকেÑ একটি ঠিকানা মুখস্থ করিয়েছিলেন। ভারতে গেলে আমরা কোথায় আশ্রয় পাবো, থাকবো, সেজন্য আমাদের চার টুকরা কাগজ দিয়ে বলেছিলেন মুখস্থ করো।
কাগজে ঠিকানা লেখা ছিল, ‘সানি ভিলা, ২১ নং রাজেন্দ্র রোড, নর্দার্ন পার্ক, ভবানীপুর, কলকাতা।’ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর এই ঠিকানায় আমরা আশ্রয় গ্রহণ করি। অর্থাৎ বহু আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের পরিকল্পনা করেন। সেই ১৯৬২ সালে তিনি দেশ স্বাধীনের পরিকল্পনা নিয়ে আগরতলা গিয়েছিলেন। আগরতলা মামলা তো মিথ্যা ছিল না। কিন্তু পরিকল্পনা মতো কাজ হয়নি। আগরতলা মামলায় যারা অভিযুক্ত তারা তো আসলেই স্বাধীনতার জন্য একটি সশস্ত্র পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন।
এটা সত্য। যার জন্য ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ বললে যারা অভিযুক্ত তারা অসন্তুষ্ট হন। তারা বলেন, ‘আমরা তো ষড়যন্ত্র করিনি। আমরা তো দেশের স্বাধীনতার জন্যই একটি পরিকল্পনা করেছিলাম।’
বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ে ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তার বড় প্রমাণ ৬ দফা। তিনি বিচক্ষণ নেতা ছিলেন। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে নির্বাচন পেছালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থাকার সুযোগ পাই। নির্বাচনের দিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলাম। সেদিন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘আপনি কয়টি আসন পাবেন?’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি অবাক হবো যদি আমি দুটি আসন হারাই।’ বিস্ময়ের ব্যাপার দুটি আসনই আমরা হারিয়েছিলাম। একটিতে নুরুল আমিন অন্যটিতে রাজা ত্রিদিব রায় জয়ী হন।
নির্বাচনের পরই তিনি পূর্ণ স্বাধীনতার পরিকল্পনা করেন। এই পরিকল্পনার ছক এঁকেছিলেন যখন তিনি ’৬৯-এর অক্টোবরে লন্ডন সফরে যান। সেখানে ভারতীয় প্রতিনিধি ফনীন্দ্র নাথ মুখার্জী, তথা পিএন মুখার্জীÑ যাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘মিস্টার নাথ’ বলে সম্বোধন করতামÑ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে লন্ডনে দেখা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভারত সরকারের ভূমিকা বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেন। যেগুলো পরবর্তীতে বাস্তবায়িত হয়। বঙ্গবন্ধু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে তবেই স্বাধীনতা ঘোষণা করার রাজনৈতিক বৈধতা অর্জন করেন।
সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেও তিনি বিচক্ষণতার সঙ্গে বক্তব্য পেশ করেছেন। বঙ্গবন্ধু সবসময় চেয়েছেন তিনি আক্রান্ত হবেন, কিন্তু আক্রমণকারী হবেন না। সেজন্যই ২৫ মার্চ জিরো আওয়ারে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পূর্ব প্রস্তুতি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য এরকম একটি চূড়ান্ত ঘোষণায় পৌঁছতে বঙ্গবন্ধুকে দীর্ঘ ২৪টি বছর বাঙালি জাতিকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে লক্ষ্য স্থির করে, ধাপে ধাপে জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনা করে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে, শাসকগোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে, জেল-জুলুম-হুলিয়া-ফাঁসির মঞ্চকে উপেক্ষা করে মৃত্যুঞ্জয়ী শক্তি নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়েছে। একদিনে হয়নি।
বহু বছর ধরে অগণিত মানুষের আত্মদানের মধ্য দিয়ে সমগ্র বাঙালি জাতি প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণাকে শিরোধার্য জ্ঞান করেছে। ’৭১-এর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত এই ঘোষণাটিই ’৭১-এর ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’ কর্তৃক গৃহীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ৬ নং প্যারায় অনুমোদিত হয়ে সাংবিধানিক বৈধতা অর্জন করেছে।
বঙ্গবন্ধুর এই স্বাধীনতার ঘোষণাই ২৬ মার্চ দুপুর দেড়টায় চট্টগ্রাম বেতার থেকে এমএ হান্নানের কণ্ঠে বারবার প্রচারিত হয়েছে। ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমানের ঘোষণার কোনো রেকর্ড নেই। এমনকি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ‘প্রামাণ্যকরণ কমিটি’র চেয়ারম্যান মফিজউল্লাহ কবীর ও হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র’ সংকলনের ৩ নং খণ্ডে আছে, ‘জিয়াউর রহমান মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে ২৭ মার্চ ঘোষণা দেন।’ কিন্তু ২৬ তারিখ তো যুদ্ধ শুরু হয়েছে।
জেনারেল শফিউল্লাহ, খালেদ মোশাররফ, মেজর রফিক ইতোমধ্যে ডিফেক্ট করে যুদ্ধ শুরু করেছেন। সুতরাং, ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমানের ঘোষণার কথা মোটেও সত্য না। যারা ২৬ মার্চ জিয়ার ঘোষণার কথা বলে, তারা অসত্য কথা বলে। বাস্তবের সঙ্গে যার কোনো মিল নেই। ইয়াহিয়া খান ২৬ মার্চের ভাষণে রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করে একজন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘সপ্তাহ খানেক আগেই আমার উচিত ছিল শেখ মুজিবুর রহমান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা…।
…কেননা কয়েকটি শর্ত দিয়ে সে আমাকে ট্র্যাপে ফেলতে চেয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সে আক্রমণ করেছে- এই অপরাধ বিনা শাস্তিতে যেতে দেওয়া হবে না।’ এবং এই একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে সামরিক আদালতে বিচার হয়। সামরিক শাসক কতটা প্রতিহিংসা পরায়ণ ছিল যে, আমার মতো একজন ক্ষুদ্রকর্মীকেও আমার অনুপস্থিতিতে সামরিক আদালতে বিচার করল।
’৭১-এর ২০ এপ্রিল সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, আবদুল মান্নান, আবিদুর রহমান ও আমাকে মার্শাল ল কোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়। পরে ২৭ এপ্রিল আমাদের অনুপস্থিতিতে ১৪ বছর সশ্রম কারাদ-, অর্ধেক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। আজকাল বিভিন্ন জন বিভিন্নরকম দাবি করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ছাড়া আমরা ছাত্রলীগের কেউ কিছু করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু জাতীয় নেতা হিসেবে যা করতে পারতেন না, আওয়ামী লীগের অগ্রগামী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তা পালন করত। কোনোটাই বঙ্গবন্ধুর অনুমোদন ছাড়া হয়নি।
’৭১-এর শহীদ দিবস ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এদিন মধ্য রাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘এই বাংলার স্বাধিকারÑ বাংলার ন্যায্য দাবিকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র চলছে। এখনো চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে। কিন্তু বাংলার সাত কোটি মানুষ আর বঞ্চিত হতে রাজি নয়। আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রয়োজন হলে আরও রক্ত দেব। আর শহীদ নয়, এবার গাজী হয়ে ঘরে ফিরব। বাংলার ঘরে ঘরে আজ দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে হবে আমাদের সংগ্রাম।
মানুষ জন্ম নেয় মৃত্যুর জন্য; আমি আপনাদের কাছে বলছি এই বাংলার মানুষ রক্ত দিয়ে আমাকে আগরতলা মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছে, আমিও আপনাদের জন্য নিজের রক্ত দিতে দ্বিধা করব না। বাংলার সম্পদ আর লুট হতে দেব না।’ ’৭১-এর ২২ ফেব্রুয়ারি জেনারেল ইয়াহিয়া খান তার মন্ত্রিসভা বাতিল করেন এবং পিন্ডিতে গভর্নর ও সামরিক প্রশাসকদের নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে, লারকানা ও রাওয়ালপিন্ডি বৈঠকে গৃহীত গণহত্যার নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বাস্তবায়নের ব্যবস্থাদি চূড়ান্ত করা হয়।
’৭১-এর ১ মার্চ দুপুর ১টা ৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বেতার ভাষণে ৩ মার্চ তারিখে ঢাকায় আহূত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন একতরফাভাবে স্থগিত করেন। পূর্ব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা বক্তব্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা নগরীসহ সমগ্র বাংলাদেশ। এদিন হোটেল পূর্বাণীতে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় ৬ দফা ভিত্তিক শাসনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছিল।
অধিবেশন স্থগিত ঘোষণায় বিক্ষুব্ধ মানুষ হোটেল পূর্বাণীর সামনে এসে সমবেত হয় এবং ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ ও ‘জয় বাংলা’ সেøাগানে চারদিক প্রকম্পিত করে তোলে। বঙ্গবন্ধু হোটেলের সামনে এসে সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘অধিবেশন বন্ধ করার ঘোষণায় সারাদেশের জনগণ ক্ষুব্ধ। আমি মর্মাহত। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তার ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন। আমি সংগ্রাম করে এ পর্যন্ত এসেছি। সংগ্রাম করেই মুক্তি আনবো।
আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন।’এরপর আসে বাঙালির ইতিহাসের পরমাকাক্সিক্ষত দিন সাতই মার্চ। সেদিন ছিল রবিবার। সংগ্রামী বাংলা সেদিন অগ্নিগর্ভ, দুর্বিনীত। বঙ্গবন্ধু যখন ‘ভাইয়েরা আমার’ বলে বক্তৃতা শুরু করেন জনসমুদ্র পিনপতন নিস্তব্ধতার মধ্যে ডুবে যায়। সেদিন নেতার বক্তৃতার শেষাংশ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- বস্তুত এটাই ছিল বীর বাঙালির জন্য স্বাধীনতার ঘোষণা।
লেখক: সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ; সংসদ সদস্য
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ
tofailahmed69@gmail.com