মধ্যবয়সী নারী-পুরুষদের বিশেষ করে নারীদের মধ্যে মৃত্যুহার বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আর এ প্রবণতা কমিয়ে আনতে পারে দৃঢ় সামাজিক বন্ধন। খবর মেডিকেল ডেইলি।
৪৬-৭১ বছর বয়সী ৭২ হাজার ৬০৭ জন নারীর ওপর সংগৃহীত তথ্য গবেষণার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটালের গবেষকরা। গবেষণায় ১৯৯২-২০১০ সাল অথবা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ নারীদের সামাজিক কর্মকাণ্ডকে বিশ্লেষণ করা হয়। এ সামাজিক কর্মকাণ্ডগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় সোস্যাল ইনডেক্স ফর রিলেশনশিপ নামে একটি সূচক, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল বৈবাহিক অবস্থা, সামাজিক পরিধি, সম্পর্কিতদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রবণতা এবং ধর্মীয় ও অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ।
গবেষণা শেষে দেখা যায়, এদের মধ্যে আত্মহত্যা করেছে মোট ৪৩ জন। তাদের প্রায় অর্ধেকই আত্মহত্যা করেছে বিষপানে। বাকি অর্ধেকের মৃত্যু হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক, গলায় দড়ি অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে দম বন্ধ হয়ে। দেখা গেছে, সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন নারীদের তুলনায় দৃঢ় সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ নারীদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যা প্রবণতা অত্যন্ত কম। যেসব নারীর ওপর এ গবেষণা কার্যক্রম চালানো হয়েছে, তাদের অধিকাংশের মধ্যেই সামাজিক বন্ধন রক্ষার প্রবণতা অনেক বেশি। যাদের মধ্যে এ প্রবণতা নেই, তাদের ভেতর দেখা গেছে অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন অথবা নিকোটিনে আসক্তি অত্যন্ত বেশি।
সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে অনেকাংশেই সম্পর্কযুক্ত দৃঢ় সামাজিক বন্ধন। দলবদ্ধ জীবনযাপন প্রতিটি মানুষের ভেতর বাড়িয়ে তোলে আত্মবিশ্বাস এবং আত্মমর্যাদা। সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে সমাজবিচ্ছিন্ন মানুষের ভেতর এ মনোভাব তৈরি করা গেলে কমে যায় আত্মহত্যা প্রবণতা। গবেষণাপত্রের সম্পাদকীয়তে নিউইয়র্কের রচেস্টারে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টার মেডিকেল সেন্টারের বিশেষজ্ঞ ডা. এরিক ডি কেইনের মন্তব্য, ‘সামাজিকবিজ্ঞানের যে শাখা মানুষের আত্মহত্যা প্রবণতা অথবা মানসিক বিশৃঙ্খলার কারণ ব্যাখ্যায় নিয়োজিত, তা আমাদের কাছে সামাজিকভাবে চিকিত্সাবিজ্ঞানের আরো নতুন, আরো সূক্ষ্ম মনোজৈবিক মডেলের দাবি রাখে; যা বজায় থাকবে গবেষণার ব্যাপকতা ও গভীরতা বাড়ানো সত্ত্বেও।
সামাজিক বন্ধনের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের এ যোগাযোগ এ নিয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার সুযোগ তৈরি করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।