কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক সর্বশেষ গত বছরের ২২ আগস্ট খোলা হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতিতে এবার ৫ মাস ৪ দিন পর খোলা হয়েছে এসব দানসিন্দুক। শনিবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসনের দায়িতপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের ৮টি দানসিন্দুক খোলা হয়। প্রথমে দানসিন্দুক থেকে টাকা বস্তায় ভরা হয়। পরে বস্তা খুলে শুরু হয় টাকা গণনার কাজ। এবার সবচেয়ে বেশি ১৪ বস্তা টাকা জমা হয়েছে সিন্দুকে। এছাড়া পাওয়া গেছে স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দল্লাহ আল মাসউদের তত্ত্বাবধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম, মো. উবায়দুর রহমান সাহেল, জুলহাস হোসেন সৌরভ ও মো. ইব্রাহীম, পাগলা মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা, রূপালী ব্যাংকের এজিএম অনুফ কুমার ভদ্র প্রমুখ টাকা গণনার কাজ তদারকি করছেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ২২ আগস্ট দানসিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন এক কোটি ৭৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭১ টাকা পাওয়া যায়। যা সিন্দুক থেকে পাওয়া দানের হিসাবে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ ছিল। এবারও দান সিন্দুকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। টাকা গণনা করার পর জানা যাবে, এবার কত টাকা সিন্দুকগুলোতে দান হিসেবে পাওয়া গেল। এদিকে পাগলা মসজিদে টাকা গণনার এই এলাহী কান্ড নিজ চোখে অবলোকন করতে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ সেখানে ছুটে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদটির দানসিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। সাধারণত তিন মাস বা চার মাস সময় পর দানসিন্দুক খোলা হয়।
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সাথে সাথে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও। মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবন। দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদটিকে ঘিরে চলছে ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ। এছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়।