অগ্রসর রিপোর্ট :রাষ্ট্র পরিচালনার সব ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভিত তৈরি করে দিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজকে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে সমস্ত কাজে আমি দেখি প্রতিটা ক্ষেত্রে তিনি (বঙ্গবন্ধু) ভিত তৈরি করে দিয়ে গেছেন। আমার অবাক লাগে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত আইন, এত নীতিমালা, এত কাজ তিনি কীভাবে করেছেন, এটা একটা বিস্ময়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে দাঁড়াক, বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে চলুক, সম্মান নিয়ে চলুক- এটা আমাদের স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শক্তি কখনো চায়নি বলেই জাতির পিতাকে শুধু হত্যা করেনি, আমাদের সমস্ত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে বিচ্যুত করেছিল।’
প্রধানমন্ত্রী রোববার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৭৯২ সালের এই দিনে আমাদের মহান নেতা তাঁর প্রাণের বাংলাদেশিদের বুকে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু এর তিন বছর পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যারা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল, তারা আজ ব্যর্থ হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ভাষা আন্দোলনের পর থেকে বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাবরণ করতে হয়। বঙ্গবন্ধু যেখানেই গেছেন, সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আবার তিনি জামিন পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু মানুষের জন্য কাজ করতেন বলেই শাসকরা বারবার তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনার সব নির্দেশনা ছিল জাতির জনকের ৭ মার্চের ভাষণে। মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি একটি স্বনির্ভর বাংলা গড়ে তুলেছিলেন।
দেশে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল গত বছরের মার্চে। বর্তমানে সংক্রমণের হার অনেকটা কমে এলেও আগামী মার্চে আরেকটি ধাক্কা দিতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভ্যাকসিন এলেও সবাইকে স্বাস্থ্য সচেতনতা রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাস আমাদের অগ্রযাত্রা কিছু ব্যাহত করেছে, তাতে সন্দেহ নেই। করোনাভাইরাসের জন্য ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন কেনার সমস্ত ব্যবস্থা আমরা করে ফেলেছি, ইনশা আল্লাহ ভ্যাকসিন এসে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারপরও বলব সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে নিজেকে রক্ষা করতে হবে, অন্যকে রক্ষা করতে হবে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড়। যত ভ্যাকসিন যা-ই আমরা নিই না কেন, তারপরও কিন্তু সবাইকে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, ভিটামিন সি এবং ডি এই ধরনের খাবার খাওয়া- এগুলো আমাদের সবাইকে মানতে হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দিয়েছিলেন এবং সেই ব্রিটিশ আমল থেকে তৈরি করা যে শাসনব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন করে গণমুখী ব্যবস্থা তিনি করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সেটা যদি করে যেতে পারতেন, তাহলে পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠত, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘আজকে আমাদের যে নতুন প্রজন্ম তাদের একটা আগ্রহ জন্মেছে জানার জন্য। একমাত্র আওয়ামী লীগে দেশের মানুষকে কিছু দিয়েছে, কারণ জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে আমরা পথ চলি, তার আদর্শকে সামনে রেখেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই।’
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতাকে যারা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল আজকে তারাই ব্যর্থ। আজকে বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে যে মর্যাদা এই মর্যাদা ধরে রেখে আমরা বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব। জাতির পিতার স্বপ্নের সমৃদ্ধ উন্নত সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব।’