অগ্রসর রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মেদির মধ্যে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর)। বৈঠকে দুদেশের মধ্যে নয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে। এতে ঢাকার পক্ষ থেকে পানি বণ্টন, কোভিড সহযোগিতা, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য ঘাটতি, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও রোহিঙ্গা সংকটসহ প্রধান সব দ্বিপক্ষীয় ইস্যু তুলে ধরা হবে। তবে এবারের বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে জোর দিয়ে তেমন কোন আলোচনার সম্ভাবনা নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে বয়ে চলা প্রধান সাতটি নদী মনু, মুহুরি, গোমতি, ধরলা, দুধকুমার, ফেনী ও তিস্তার পানি বণ্টনের ইস্যুটিকে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার প্রস্তাব দেবে ঢাকা। গুরুত্ব পাবে ভারতে তৈরি ভ্যাক্সিন বাংলাদেশে দ্রুত আনার বিষয়টি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তিস্তা ইস্যুটি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আলোচনার প্রধান ইস্যু ছিল। সেখানে আর আটকে না থেকে এখন অন্য বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন মনে করেন, ‘বৈঠকের একটি বড় বিষয় হচ্ছে দু’দেশের সম্পর্ককে আরও উঁচু পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা। কারণ কোভিড ১৯ এর কারণে অথবা সার্বিকভাবে গত ১/২ বছরে দু’দেশের সম্পর্কের মাঝে কিছুটা শিথিল ভাব দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থাটায় দু’দেশের নেতৃত্বের মাঝেই এই উপলব্ধিটা আছে যে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ঘিরে বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ-ভারতের যে ৫০ বছরের সম্পর্ক সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। আবার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান সেখানে বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রয়োজন। সবকিছু মিলিয়ে করোনা পরবর্তী সময়ে দ্বিপাক্ষিক অবস্থান মূল্যয়ন করে কিভাবে আরও শক্তিশালি অবস্থানে যাওয়া যায় তার চেষ্টা থাকবে। তিস্তার পানি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের একাট আকাঙ্ক্ষা আছে। সেটা পূরণ করা ভারতেরই দায়িত্ব। সেগুলো নিশ্চয়ই আলোচনায় আসবে। তবে আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে ভারতের পক্ষ থেকে ঋণের অর্থ ছাড়ের বিষয়টি।’
তিনি মনে করেন, ‘প্রকল্পগুলো পূনর্মূল্যায়ন করে কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেটি নিশ্চয় আলোচনায় আসবে। কারণ বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নে প্রতি বছর যে অর্থ দরকার তার যোগান দেয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। এ কারণে সেখানে যদি ভারত এগিয়ে না আসে তাহলে নিশ্চয়ই চীন, জাপান বা অন্য কোন দেশ এগিয়ে আসবে। সেটা ভারত ভাল করেই জানে। সে কারণেই বাংলাদেশের রেল, পাওয়ারপ্ল্যান্ট, সড়কসহ অন্য অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের অর্থ ছাড়ের বিষয়টি নিশ্চয়ই গুরুত্ব পাবে। কারণ দুই দেশের মাঝে যোগাযোগ আরও বাড়াতে হলে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন আছে।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ শামস মোরসালিন বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া উচিত। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বাণিজ্য জটিলতা হয়েছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে যে জটিলতা হয়েছিল সেগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে তিস্তা ইস্যু নিয়ে তেমন আলোচনা হবে বলে মনে করি না। কারণ বাংলাদেশ যেটা অনুধাবন করছে তা হচ্ছে; চুক্তি হলো ‘কাগজে-কলমে চুক্তি’। চুক্তির উপর নির্ভর না করে কিভাবে নিজের মতো করে সমস্যা সমাধান করা যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিতে হবে। ইতোমধ্যেই এই তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প নিয়ে কিভাবে কী করা যায় ও নদী শাসন নিয়ে চীনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আমার মনে হয় বাংলাদেশ খুব প্র্যাকটিক্যালি চিন্তা করছে।‘
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু করোনা মহামারির একটি বিষয় আছে, তাই দুই দেশ কী করে সামনের দিনগুলোতে একসঙ্গে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। কারণ দুই দেশই বিশ্বাস করে, নিশ্চয় এই বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে। একা একা মহামারি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়।’