অগ্রসর রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতি, আদর্শ এবং সংযমের সঙ্গে রাজনীতি করার জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আহবান জানিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, অন্যায় করে কেউ পার পাবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা কেউ এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত হবে না, যা মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট করে। মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাসকে তোমাদের মূল্য দিতে হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ছাত্রলীগের একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করতে এলে শেখ হাসিনা একথা বলেন।
ছাত্রলীগের নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ছাত্রলীগের ২৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেই আমরা তোমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছি। যদি তোমরা সেই মর্যাদা ধরে রাখতে না পার তাহলে তোমাদের কোন দরকার নেই।
প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে বিনয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন,‘আমরা চাই না ছাত্ররা ক্ষমতা পেয়েই তা দেখানো শুরু করুক। যত উপরে উঠবে তত বিনয়ী হতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ছাত্রলীগের পর যুবলীগের ওপর কঠোর হয়েছে। সামাজিক অনাচার-দূরাচার দূর করতে হবে এবং ক্যাসিনো নিয়ে মারামারি, খুনোখুনি আমরা সহ্য করবো না।
তিনি কঠোর পরিশ্রম করে দেশকে গড়ে তুলছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই এর ওপর কোন কালিমা আসুক আমি কোনভাবে তা হতে দেব না। অনিয়মকারীদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত বিদেশীরা আসলো কোথা থেকে, তারা ভিসা পেলো কিভাবে, সবকিছুই তদন্ত করে দেখা হবে। এই কাজে যদি কেউ বাধা দেয় তবে সে যেই হোক তাঁর বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের এমন কাজ করা উচিত হবে না, যাতে জনগণ ক্ষুব্ধ হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ যদি সত্যিকারের নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করে তাহলে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে। তিনি বলেন, সংগঠনের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আরও বাড়াতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমরা যদি কাজের মধ্য দিয়ে নেতৃত্বে আস তাহলে জনগণ তোমাদেরকে সহজে গ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি চাই তোমরা আদর্শ নিয়ে চলবে এবং ২০৪১ সাল পর্যন্ত দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেশ গঠনের পাশাপাশি নিজের ভাবমূর্তিও গড়ে তুলবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে বিএনপি’র ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল যে মনোভাব দেখিয়েছে তা এখানে চলবে না।
দেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠন বাংলাদেশের সকল গণআন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’র মতো গ্রন্থগুলো পড়ার জন্য ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘এসব পুস্তক থেকে তোমরা সুস্থ রাজনীতি সম্পর্কে জানতে পারবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি আলোচনার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণেরও আহ্বান জানান।
এর আগে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বিএম মোজাম্মেল হক, কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন, ইকবাল হোসেন অপু এমপি এবং আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।