স্টাফ রিপোর্টার: মালয়েশিয়ায় জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ার আওতায় আগামী তিন বছরে ১৫ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যে দেশটির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশী শ্র্রমিকরা শুধুমাত্র কৃষি ক্ষেত্র ছাড়াও সেবা, উৎপাদন ও নির্মাণ খাতেও কাজ করার সুযোগ পাবেন।
বাংলাদেশকে সোর্স কান্ট্রি (যেসব দেশে থেকে কর্মী নেবে) হিসেবে মালয়েশিয়া তালিকাভুক্ত করেছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে স্বচ্ছতার জন্য কিছু নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরুতে মালয়েশিয়া সরকার নিয়োগকর্তার সক্ষমতা ও চাহিদা যাচাই করে চাকরির সব সুবিধা নিশ্চিত করবে। তাতে মধ্যসত্ত্বভোগীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকবে না।’
তিনি বলেন, সরকার বিএমইটি’র রেজিস্টার্ড ডাটাবেজের তালিকা অনুযায়ী কর্মী রপ্তানীর জন্য বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং বিদেশ গমনেচ্ছু ব্যক্তিরাই ব্যয়ের সিংহভাগ বহন করবে।
মালয়েশিয়ায় যেতে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য ভেদে মাথাপিছু ৩৪ থেকে ৩৭ হাজার টাকা খরচ হবে বলেই তিনি জানান।
তিনি বলেন, নিয়োগপত্র যাতে নকল করার সম্ভবনা না থাকে এ কারণে কর্মীদের নিয়োগপত্র মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে সত্যায়িত করতে হবে । কর্মীদের বেতন সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পরিশোধ করা হবে । মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর এ কার্যক্রম তদারকি করবে মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ। যদি কোনো কারণে এই গ্রুপ ব্যর্থ হয়, তাহলে উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়কে অবহিত করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বিষয়ে নতুন স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হবার পরে ইতোপূর্বে ২০১২ সালে স্বাক্ষরিত স্মারক এবং ২০১৪ সালে চুক্তির প্রটোকল বাতিল হয়ে যাবে।
আগে মালয়েশিয়ায় পুরুষ কর্মীরাই যেতে পারতেন। এ চুক্তির পর নারী কর্মীরাও মালয়েশিয়া যেতে পারবেন।
আলম বলেন, নিয়োগ কর্তা শ্রমিকদের সিকিউরিটি ডিপোজিট, বায়োমেডিকেল ফি, লেভি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য বীমা ও বীমা ক্ষতিপূরণের ব্যয় বহন করবে।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সরকার তার দেশের নিয়োগ কর্তার চাহিদা যাচাইয়ের পর বাংলাদেশের বিএমইটি’কে প্রাসঙ্গিক তথ্য ও ডাটা দেবে।
অপরদিকে বাংলাদেশ সরকার অনলাইনে বায়রাভুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে এ তালিকা পাঠাবে।
সচিব বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বিএমইটি ডাটাবেজ থেকে শ্রমিক নিয়োগ, চুক্তি সম্পাদন, শ্রমিকদের বায়োমেডিকেল, নিরাপত্তা যাচাই, ভিসা প্রসেসিং, প্রশিক্ষণ ও ইমিগ্রেশনের মত কর্মকান্ডে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করবে।
শফিউল আলম বলেন, নিয়োগ কর্তা অনলাইনে শ্রমিকের প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে সত্যায়নের জন্য পাঠাবে। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর ঢাকায় মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসার ব্যবস্থা করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পূর্ববর্তী জি টু জি প্রক্রিয়ায় সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যায়নি। এজন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে সম্পৃক্ত করে জি টু জি প্লাস নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করা হয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক মাসের মধ্যে প্রস্তাবিত এম ও ইউ স্বাক্ষরিত হতে পারে।
সচিব বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন আইন-২০১৬ আরো যাচাই-বাছাইয়ের পর পুনরায় মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের জন্য মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে ৮-৯ জানুয়ারি ভারতের কলকাতায় বেঙ্গল গ্লোবাল সামিট ও ১০-১২ জানুয়ারি অন্ধ্র প্রদেশে দ্য পার্টনারশীপ সামিটে বাণিজ্যমন্ত্রীর অংশগ্রহণ এবং গত বছরের ১৬-১৮ নভেম্বর প্যারিসে ইউনেস্কোর ৩৮তম সাধারণ পরিষদের লিডারস ফোরামে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রীর যোগদান সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
মন্ত্রীবর্গ ও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট সচিবগণ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।