একটা ম্যাচে এর চেয়ে বেশি কিছু কি আর চাইতে পারতেন ইয়াসির শাহ? ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ১০ উইকেট, তাও আবার লর্ডসে…স্বপ্নও তো কখনো কখনো এতটা মধুর হয় না। ১০ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের লর্ডস টেস্টে নায়ক তো এই ৩০ বছর বয়সী লেগ স্পিনারই। তবে ম্যাচটি নিজের করে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লর্ডস টেস্টে বেশ কিছু রেকর্ডও নতুন করে লিখিয়েছেন এই লেগ স্পিনার।
২০ বছর আগে লর্ডসে সর্বশেষ কোনো টেস্ট জিতেছিল পাকিস্তান। ওই টেস্টে ৮ উইকেট নিয়ে ওয়াকার ইউনিস হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। এত দিন পর্যন্ত ওটাই ছিল লর্ডসে কোনো পাকিস্তানি বোলারের সেরা বোলিং। কাল ইয়াসির ছাড়িয়ে গেলেন সেটি। তার ওপর ইয়াসির যখন স্পিনার, কীর্তিটা আরও বড় হয়ে যাচ্ছে। লর্ডসে কোনো স্পিনারের ১০ উইকেট পাওয়ার কীর্তি এটা মাত্র সপ্তমবার। কী অদ্ভুত, ১৯৭৪ সালে সর্বশেষ কীর্তিটা, সেই ডেরেক আন্ডারউড এটি করেছিলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে। আর লেগ স্পিনারদের মধ্যে লর্ডসে ইয়াসিরের আগে ১০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব ছিল শুধু একজনেরই। ১৯৪৭ সালে সেটি করেছিলেন ডগ রাইট। ও হ্যাঁ, ক্যারিয়ারে কিন্তু এবারই প্রথম ম্যাচসেরা হয়েছে ইয়াসির। এর চেয়ে স্মরণীয় ম্যাচসেরা আর কী হতে পারে!
দুর্দান্ত দুটি টার্নে হতভম্ব করে দিয়ে বোল্ড করে দিয়েছিলেন গ্যারি ব্যালান্স ও মঈন আলীকে। ইংল্যান্ড ৬ উইকেটে ১৩৯ রান তুলে ধুঁকছিল তাঁর কারণেই। সপ্তম উইকেটে প্রায় ৩২ ওভার পার করে দেওয়া জুটিটায় চরম ধৈর্যের পরীক্ষাই নিচ্ছিলেন ওকস আর বেয়ারস্টো। সেই জুটিটাও ভেঙেছেন ইয়াসির। এই দুজনও তাঁরই শিকার। তাঁর ঘূর্ণিতেই দিশেহারা হয়ে ইংল্যান্ড দিনের শেষ ৫ ওভারে মাত্র ১২ রানের ভেতরে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে ২০৭ রানে অলআউট। পাকিস্তান পেল ৭৫ রানের স্মরণীয় জয়। অথচ ওকস-বেয়ারস্টো যেভাবে সামলে নিয়েছিলেন, ৮৮ রানের দূরত্ব আর হাতে ৪ উইকেট—জয়ের স্বপ্নও হয়তো দেখছিল ইংল্যান্ড। সেখানে থেকেই আচমকা ইয়াসির-আঘাত!
তবে এসবের চেয়েও বড় আরেকটা মাইলফলক হয়ে যেতে পারে এই সিরিজেই। ১৩ টেস্ট শেষে ক্যারিয়ারে ইয়াসিরের উইকেট এখন ৮৬। ১৩ টেস্ট খেলে আর কোনো বোলারই এত উইকেট পাননি। তবে ইয়াসির এখন নিশ্চয় পাখির চোখ করছেন একরকম অমরত্বই পেয়ে যাওয়া জর্জ লোম্যানের দ্রুততম ১০০ উইকেট নেওয়ার ১২০ বছরের পুরোনো রেকর্ড। লোম্যান নিয়েছিলেন ১৬ টেস্টে, ইয়াসির যেভাবে খেলছেন, বাকি দুই বা তিন টেস্টে উইকেটের তিন অঙ্কে পৌঁছে যাওয়া খুবই সম্ভব। মাত্র তো ১৪ উইকেট দরকার তাঁর।
এত কিছুর মধ্যে আরেকটা ‘ছোট্ট’ কীর্তি চাপা পড়ে যাচ্ছে। ইয়াসির টেস্টে ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৩০ রান করছেন প্রথম ইনিংসে। পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী সেটিও কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না! হওয়ার কথা ছিল আমিরের টেস্ট। শেষ মুহূর্তে আমির আলোটা টেনে নিয়েছেন। তবে তা সামান্যই। ইয়াসির যে এই টেস্টটা বহু দিন মনে করিয়ে দেবেন তাঁর টেস্ট হিসেবেই!