স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ড স্বাচ্ছন্দে পরিচালনায় তাঁর সরকারের কয়েকজন সচিব নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ বর্তমানে এই মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ড বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আজ তাঁর কার্যালয়ে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৬ উপলক্ষে জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণকালে বলেন, কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না- এমনকি কোন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি হলেও তাকে ছাড় দেয়া যাবে না।
তিনি বলেন, ‘অপরাধী আমার দলের নেতা হলেও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমার সঙ্গে যোগাযোগের সব ব্যবস্থা রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী জেলা পুলিশ প্রধানকে ভূমি দখলকারী বিশেষ করে গরীবের সামান্য সম্পত্তিও ছিনতাইকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং দেশব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া মাদকের বিরুদ্ধে আরো সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং একই মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. এম মোজাম্মেল হক খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এম শহীদুল হক।
অনুষ্ঠানে পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি এর উন্নয়নে পরামর্শ সম্বলিত বক্তব্য রাখেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার এম আসাদুজ্জামান মিয়া, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ইকবাল বাহার, নরসিংদীর পুলিশ সুপার (এসপি) আমেনা বেগম ও ঢাকার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় আপনারা দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
তিনি বলেন,’ সকল সংকট কাটিয়ে আমরা গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহতভাবে এগিয়ে নিচ্ছি। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন এবং নিরাপত্তার সুদৃঢ় ভিত্তি নির্মাণ গড়তে আপনারা দেশের উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন-এ আমার প্রত্যাশা।’
প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ দেশপ্রেম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে পুলিশ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ’৩০ লাখ শহীদের রক্তের ঋণে আবদ্ধ এই লাল-সবুজের পতাকা, এই দেশ ও জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে আপনাদের সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।’
শেখ হাসিনা মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে আরো সক্রিয় এবং কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ’দেশে এখন বড় সমস্যা হচ্ছে মাদক। যুবসমাজে মাদকের বিস্তার ঘটছে। সমাজের উঁচু থেকে নিচ সর্বত্র এখন মাদকের বিস্তার- অনেক পরিবার মাদকাসক্তির কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গঠন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধের ধরণ বদলাচ্ছে। এজন্য কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গঠন করে বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি ’ন্যাশনাল সিকিউরিটি এ্যাডভাইজারি কমিটির’ সক্রিয়তার বিষয় উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান বৃদ্ধির পাশাপাশি বিমানবন্দরের যথাযথ নিরাপত্তা জোরদার ও নিশ্চিত করতে কম্পোজিট ফোর্স গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, ’বিমানবন্দরগুলোর দৃশ্যমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সমন্বয়ে ’কম্পোজিট ফোর্স’গঠন করা হবে। বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে এটি গঠিত হবে। এতে পদ- পদবী নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগলে চলবে না।
তিনি বলেন, বিমানবন্দরের কার্যকর নিরাপত্তা বৃদ্ধি নিশ্চিত না হলে যুক্তরাষ্ট্রের মত যুক্তরাজ্যেও ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ হযে যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে এখন বিদেশে চাল রপ্তানি করছি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য-শস্য উৎপাদন হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১৪ হাজার ৭৭ মেগাওয়াট হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যাও ১০০ ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বছরের প্রথম দিন পয়লা জানুয়ারি দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রায় ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৭২টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক থেকে ¯œাতক পর্যন্ত ১ কোটি ২৮ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপ-বৃত্তি দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবার জণগণের দোড়গোড়ায় নিয়ে পৌঁছে দেয়ার কর্মসূচি সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। মানুষ বিনামূল্যে ৩২ ধরণের ঔষধ পাচ্ছে। এছাড়া ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২শ’ ক্যাটাগরির ডিজিটাল সেবা দেয়া হচ্ছে। এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেক সদস্য সমঅংশীদার বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী ।
পুলিশের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে আমরা আবার পুলিশের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করি। পুলিশের বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, ঝুঁকি ভাতার প্রচলন, কল্যাণ ফান্ড গঠন, নতুন নতুন থানা ও ব্যারাক নির্মাণ এবং পুলিশের জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন সংগ্রহ করা হয়। বর্তমান মেয়াদে থানাগুলোতে প্রয়োজনীয় জনবল এবং বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা পদায়ন করা হচ্ছে। পুলিশের আবাসন ও অফিসের স্থান সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নতুন বিভাগগুলোতে আবাসন সমস্যা সমাধানে পুলিশের জন্য জমি বরাদ্দের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের এ সব কার্যকর পদক্ষেপের ফলে পুলিশ বাহিনীর আধুনিকীয়ন ও উন্নয়নে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশের ডিভিশন এবং ব্যাংক সৃষ্টির জন্যে তাদের দাবি লিখিত প্রস্তাব আকারে দেয়ার আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পুলিশকে জনগণের সেবক হতে হবে এবং তাদেরকে অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো দাঁড়াতে হবে।