অগ্রসর রিপোর্ট : ওপেনার সৌম্য সরকারের ৪১ বলে ৬৬ ও মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেকের ২৪ বলে অপরাজিত ৫২ রানের সুবাদে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। গতরাতে টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে মাশরাফির দল। ফাইনাল ম্যাচ জয়ের জন্য বৃষ্টি আইনে ২৪ ওভারে ২১০ রানের বড় টার্গেট তাড়া করে সৌম্য-মোসাদ্দেকের বিধ্বংসী ব্যাটিং-এ ৭ বল বাকী রেখেই জয়ের স্বাদ নেয় টাইগাররা। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ।
ডাবলিনে অনুষ্ঠিত ৫০ ওভারের ম্যাচের ফাইনালে টস হেরে প্রথমে ফিল্ডিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে নেমে ২০ দশমিক ১ ওভারে বিনা উইকেটে ১৩১ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপর বৃষ্টির কারনে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। বৃষ্টির কারনে দীর্ঘক্ষণ খেলা বন্ধ থাকায় শেষ পর্যন্ত ফাইনাল ম্যাচটি ২৪ ওভারে নামিয়ে আনা হয়।
নির্ধারিত ২৪ ওভারে ১ উইকেটে ১৫২ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওপেনার শাই হোপ ৭৪ রান করে বাংলাদেশের স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের বলে আউট হন। তার ৬৪ বলের ইনিংসে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিলো।
তবে আরেক ওপেনার সুনীল অ্যামব্রিস ৬৯ ও ড্যারেন ব্রাভো ৩ রানে অপরাজিত থাকেন। অ্যামব্রিসের ৭৮ বলের ইনিংসে ৭টি চার ছিলো। ৪ ওভারে ২২ রানে ১ উইকেট নেন বাংলাদেশের মিরাজ।
বৃষ্টি আইনে ২৪ ওভারে জয়ের জন্য ২১০ রান, কঠিনই বটে বাংলাদেশের সামনে। ওয়ানডে খেলতে নেমে বৃষ্টি ঝামেলায় ব্যাটসম্যানদের টি-২০তে খেলতে হবে। তবে কঠিন কাজকে সাদরে গ্রহন করে ইনিংস শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। প্রথম ২ ওভারে ১৬ রান তুলতে পারেন তারা। তবে তৃতীয় ওভারে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৭ রান আদায় করে নেন সৌম্য। আর এখান থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশের সাহসী ব্যাটিং-এর নমুনা।
প্রথম ৩২ বল থেকে ৫৯ রান তুলে ফেলেন তামিম-সৌম্য। এরমধ্যে ২০ বলে ৩৯ রানই ছিলো সৌম্যর। ষষ্ঠ ওভারের তৃতীয় বলে তামিমকে থামিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম সাফল্য এনে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার শানন গ্যাব্রিয়েল। ২টি চারে ১৩ বলে ১৮ রান করেন তামিম।
ইনজুরির কারণে সাকিব খেলতে না পারায় তামিমের বিদায়ে প্রমোশন পেয়ে তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে নামেন সাব্বির রহমান। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ২ বল মোকাবেলা করে শুন্য হাতে ফিরেন সাব্বির।
৬০ রানের মধ্যে তামিম-সাব্বিরকে হারালেও বাংলাদেশের রান চাকা ঘুড়ছিলো সৌম্যর ব্যাটে। ২৭ বলে হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। যা বাংলাদেশের পক্ষে চতুর্থ দ্রুত হাফ-সেঞ্চুরির রেকর্ড।
নিজের হাফ-সেঞ্চুরির পরও মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে ভালো একটি জুটি গড়ার চেষ্টা করেন সৌম্য। দু’জনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ১১তম ওভারেই শতরান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে এরপরই থেমে যান সৌম্য। ৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪১ বলে ৬৬ রান করেন সৌম্য। মুশফিক-সৌম্য তৃতীয় উইকেটে ৩৩ বলে ৪৯ রান যোগ করেন।
এরপর দলের হাল ধরেন মুশফিক ও মোহাম্মদ মিথুন। আস্কিং রেটের সাথে পাল্লা দিয়েই রান তুলছিলেন তারা। তবে দু’জনের কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। দলীয় ১৩৪ রানে মুশফিক ও ১৪৩ রানে আউট হয়ে যান মিথুন। এতে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। মুশফিক ২টি করে চার-ছক্কায় ২২ বলে ৩৬ ও মিথুন ১৪ বলে ১৭ রান করেন।
১৫ দশমিক ৪ ওভারে দলীয় ১৪৩ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এ অবস্থায় জয়ের জন্য ৫০ বলে ৬৭ রান দরকার ছিলো বাংলাদেশের। আস্কিং রেট ছিলো আটের সামান্য উপরে। আর বাংলাদেশের রান তোলার গতি ছিলো ওভার প্রতি ৯ করে।
এমন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা করে খেলতে থাকেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মোসাদ্দেক। রানের তোলার চেয়ে উইকেট বাঁচানোই মূল লক্ষ্য তাদের। কারন এই জুটিই ছিলো বাংলাদেশের শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান। মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেকের সর্তকতায় ২১ ওভার শেষে আস্কিং রান রেট ৯ স্পর্শ করে ফেলে। অর্থাৎ শেষ ৩ ওভারে ২৭ রান দরকার পড়ে বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় আর নিজেদের দমিয়ে রাখেননি মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেক।
২২তম ওভারে বিধ্বংসী রুপ নেন মোসাদ্দেক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁ-হাতি স্পিনার ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের করা ঐ ওভার থেকে যথাক্রমে- ৬, ৬, ৪, ৬, ২ ও ১ রান নেন মোসাদ্দেক। অর্থাৎ ঐ ওভার থেকে ২৫ রান তুলে মাত্র ২০ বলে নিজের হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মোসাদ্দেক। বাংলাদেশের পক্ষে যা সবচেয়ে দ্রুত হাফ-সেঞ্চুরির রেকর্ড।
মোসাদ্দেকের এমন বিধ্বংসী রুপে জয়ের কাছে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। শেষ ২ ওভারে ২ রানের প্রয়োজন পড়লে ২৩তম ওভারের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মেরে দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন মাহমুদুুল্লাহ। শিরোপা জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে বাংলাদেশ। মোসাদ্দেক ২টি চার ও ৫টি ছক্কায় ২৪ বলে অপরাজিত ৫২ ও মাহমুদুল্লাহ ২১ বলে অপরাজিত ১৯ রান করেন। ষষ্ঠ উইকেটে ৪৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭০ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ-মোসাদ্দেক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্যাব্রিয়েল-রেইফার ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের মোসাদ্দেক। সিরিজ সেরা হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের শাই হোপ। পুরো টুর্নামেন্টে ২টি করে সেঞ্চুরি-হাফ-সেঞ্চুরিতে ৫ ইনিংসে ৪৭০ রান করেছেন হোপ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৫২/১, ২৪ ওভার (হোপ ৭৪, অ্যামব্রিস ৬৯*, মিরাজ ১/২২)।
বাংলাদেশ (বৃষ্টি আইনে টার্গেট ২৪ ওভারে ২১০ রান) : ২১৩/৫, ২২.৫ ওভার (সৌম্য ৬৬, মোসাদ্দেক ৫২*, রেইফার ২/২৩)।
ফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মোসাদ্দেক হোসেন (বাংলাদেশ)।
সিরিজ সেরা : শাই হোপ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।