মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরা-যশোর সড়কের শালিখার সীমাখালীর চিত্রা নদীর উপর ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়ার পর প্রায় সাড়ে তিন মাস অতিবাহিত হতে চললেও আজও পর্যন্ত সেখানে বেইলী ব্রীজ নির্মানের কাজ শেষ হয়নি। এতে হাজার হাজার যানবাহনসহ কয়েক লক্ষ মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে দূর-দূরান্তে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে।
দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ এই ব্রীজটি দীর্ঘ দিন ভেঙ্গে পড়ে থাকার কারনে শলিখা ও বাঘারপাড়ার সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের রাস্তা গুলোতে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে বর্তমানে পায়ে হেটে চলারও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
বিগত ১৩ ফেব্রুয়ারী ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়ার পর ঐদিনই মাগুরা সড়কও জনপথ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ১৯ ফেব্রুয়ারী স্থানীয় এমপি,যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এড. ড. বীরেন শিকদার এবং তার আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব এড. সাইফুজ্জামান শেখর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ইতিপুর্বে নবনির্বাচিত মাগুরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পংকজ কুন্ডু তার সকল সদস্যবর্গ নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সকল শীর্ষনেত্বৃবর্গের সঙ্গে জেলার বিভিন্ন অফিসের শীর্ষকর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিও রাজনৈতিক নেতারাও উপস্থিত হন। স্থানীয় এমপি ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এড. ড. বীরেন শিকদার, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব এড. সাইফুজ্জামান শেখরসহ মাগুরা সড়কও জনপথ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এক সপ্তাহের মধ্যে বেইলী ব্রীজের নির্মাণ কাজ শুরু করে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই গুরুত্বপুর্ন এ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করার ঘোষনা দেন। এরপর এখানে একটি চার লেনের কংক্রিটের ব্রীজ নির্মানেরও ঘোষনা দেন।
অথচ প্রায় সাড়ে তিনমাস অতিবাহিত হতে চললেও আজও পর্যনÍ সেখানে বেইলী ব্রীজ নির্মানের কাজ শেষ হলোনা। সেতু ভেঙ্গে পড়ার পর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে দেড় মাস পর ২৪ মার্চ শুরু হয় বেইলি ব্রিজ নির্মান কাজ।কার্যাদেশে ৪৫ কার্যাদিবসে এ নির্মান কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সিডিউলে নির্ধারিত সময় আগামী ৩০ মে মধ্যে সর্বোচ্চ ৬০ ভাগ কাজ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারনা। কিন্তু আগামী ২ মাসেও একাজ শেষ হবে না বলে এলাকার অনেকেই ধারনা পোষন করছেন। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার তরিকুল ইসলাম বললে, ৭০ ভাগ কাজ শেষ হলেও এখনও পর্যন্ত কোন বরাদ্দ পাইনি। তবে ঈদের আগেই নির্মান কাজ শেষ হবে বলে তিনি জানান।
বেইলি ব্রিজ নির্মানে বিলম্বের কারনে যশোর-মাগুরা সড়কের হাজার হাজার যাত্রীরা প্রতিনিয়ত সড়ক থেকে ২০/২৫ হাত নিচেই নদী গর্ভে নেমে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হয়ে লোকাল বাস, নছিমন, করিমনও ইজিবাইকে জীবনের ঝুকি নিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে।
গত ২৬ মে বিকালে একটানা আড়াই ঘন্টা প্রবল বর্ষনের পর সাকোঁ পার হতে গিয়ে শতাধিক নারী পুরুষকে আঁছাড় খেয়ে কাদামাটিঁ মেখে নরক যন্ত্রনা নিয়ে উপরে উঠতে দেখা গেছে। সবাই যন্ত্রনার সুরে অকথ্য ভাষায় কর্তৃপক্ষকে গালিগালাজ করতে করতে দূরে বাসের দিকে যাচ্ছিল।
অন্যদিকে আর একটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে প্রতিদিন শত শত মটরসাইকেল জীবনের ঝুকি নিয়ে এপার ওপার করতে বাধ্য হচ্ছিল। কিন্তু ঐ সাকোটি নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে খুলে রাখা হয়েছে। এতে মানুষের অর্বননীয় চরম দুভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্রীজ ভেঙ্গে থাকার কারনে সকল যানবাহন ঝিনাইদহ হয়ে ৩৪ কিলো: ঘুরে মাগুরা পৌছাতে যেমন যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে,তেমনি পার্শ্ববর্তি বড়খুদড়ার ছোট ব্রীজ পার হয়ে ছোট ছোট গাড়ী ৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে সীমাখালী পৌছাতে যানজটের সৃষ্টির পাশাপাশি রাস্তা ভেঙ্গে চুরমার হচ্ছে। অন্যদিকে সীমাখালী থেকে ৭ কিলোমিটার পূর্বে হাজরাহাটির বেইলী ব্রীজের উপরও প্রচুর গাড়ী চলাচলের চাপ বেড়েছে। ঐ ব্রীজটিও ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
মাগুরা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইমদাদুর রহমান বলেন, আইনি জটিলতা ও টেন্ডার প্রক্রিয়ার বিলম্বের কারণে ব্রিজ নিমাণ কাজ করতে দেরি হচ্ছে । ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ার পর এই অঞ্চলের মানুষের চলাচল দারুন ভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মহাসড়কের যানবাহন এখন ঝিনাইদহ কালিগঞ্জ হয়ে যশোরে ডুকছে। এতে অনেক যানবাহনের বেশি সময় লাগছে । আমরা জেনেছি মাগুরা সড়ক বিভাগ কাজ শুরু করেছে। তবে তারা জানিয়েছে ব্রিজ নির্মাণ করতে সময় লাগবে ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার তরিকুল ইসলাম জানান, আমরা সিডিউল অনুযায়ী কাজ করছি। আশা করছি ঈদের আগেই নির্মান কাজ শেষ হবে। তিনি আরো জানিয়েছেন, ৭০ ভাগ কাজ শেষ হলেও তারা এখন পর্যন্ত কোন অর্থ পাননি ।
মাগুরা সড়ক বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা নুরনবী তরফদার জানান, আমরা সঠিক নিয়মে ব্রিজ নির্মানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না হলেও রোজার ঈদের আগে ব্রিজ নির্মান কাজ শেষ করে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ সচল করতে পারবো । তিনি আরো বলেন, ব্রিজের কাজ ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে এবং বাকি কাজ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হবে ।
এদিকে, সীমাখালী থেকে ৪/৫ কিলোঃপুর্বে কাদিরপাড়া খেয়াঘাটের চিত্রা নদীর উপর নারিকেলবাড়ীয়ার ব্রীজটি গত ১৮ মে উদ্বোধনের পর খুলে দেয়া হলে প্রচুর যানবাহনের চাপে প্রতিনিয়ত যানজটের কারনে জন দুর্ভোগ আরো চরমে পৌছে গেছে।সিমাখালীর ভাঙ্গা ব্রীজের পার্শ্বে এই বেইলী ব্রীজটি দক্ষিন বঙ্গের সবথেকে গুরুত্বপুর্ন। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রানের দাবী দ্রুত বেইলী ব্রীজটির নির্মান কাজ শেষ করে কোটি মানুষের চরম দুর্ভোগ লাঘব করা হোক।