অগ্রসর রিপোর্ট : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের রোপণ করা ধান কাটার সুযোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাদের অবাধে চলাফেরার অধিকার নিশ্চিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও এ এম আমিন উদ্দীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
এ ছাড়া সাঁওতাল-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় কী কী মামলা হয়েছে এবং কী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার ও গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে। সাঁওতালদের যেন নির্বিঘ্নে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে দেয়া হয়, সে বিষেয়েও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এর আগে গতকাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় বেসরকারি সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), অ্যাসোসিয়েশন অব ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এবং ব্রতী সমাজকল্যাণ সংস্থা একটি রিট আবেদন দায়ের করে।
রিটে সাঁওতালদের জানমালের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়। একই সঙ্গে কোন কর্তৃত্ব বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালিয়েছে, এই প্রশ্নেও রুল জারির আবেদন জানানো হয়।
গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের একশ’ একর জমিতে ধান চাষসহ প্রায় আটশ’ একর জমিতে মাস কালাই ডাল, সরিষা ও পাট চাষ করেছিলেন সাঁওতালরা। গত ৬ নভেম্বর সেই জমি থেকে যখন তাদের উচ্ছেদ করা হয়, তখন ধান ছাড়া সব ফসল তছনছ করে কেটে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সাঁওতালদের অভিযোগ, সেই লুটপাট চলে পরদিন ৭ নভেম্বর দুপুর পর্যন্ত। এখন তাদের চাষ করা একশ’ একর জমিতে যে পাকা ধান রয়েছে, তাও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে।
সাঁওতালরা রংপুর চিনিকলের ‘সাহেবগঞ্জ বাণিজ্যিক খামার’-এর জমিতে এবারই প্রথম যৌথ উদ্যোগে ধান চাষ করেছিল। ‘সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার সংহতি কমিটি’ গঠন করে সাঁওতাল এবং আশপাশের মুসলিম-হিন্দু পরিবার যৌথভাবে এই চাষাবাদ শুরু করে।
মাদারপুর সাঁওতাল পল্লির মিস্ত্রী মুরমু বলেন, চার একর জমিতে ধান আবাদ করেছি। দুটা ঘর ছিল খামার এলাকায়। ঘর পোড়াই দিছে। এহন জমির ধানও কাটতে পারছি না। তারা (খামার কর্তৃপক্ষ) জমির চারপাশে তার কাঁটা লাগাইছে। ঘর বাড়ি তো গেছে, জমির ধানও নষ্ট হয়ে যাবে।
সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার ভূমি উদ্ধার কমিটির সদস্য ভুপেন মারডি জানান, ফার্মের জমিতে প্রায় এক হাজার তিনশ’ পরিবার একশ’ একর জমিতে আমন ধান, তিনশ’ চল্লিশ একর জমিতে মাস কালাই, কুর্তি কালাই, তিনশো একর জমিতে সরিষা, চল্লিশ একর জমিতে বীজ সংরক্ষণের পাট চাষ করেছিল। উচ্ছেদের দিন ধান ছাড়া সব ফসলই লুট হয়ে গেছে।
গত ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাহেবগঞ্জ আখের খামার এলাকার সাঁওতাল পল্লীতে হামলায় ৩ জন নিহত হন। আহত হন আরো ৩০ জন।