অগ্রসর রিপোর্ট: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে পালিত হচ্ছে সর্বাত্মক অসহযোগ। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। কার্যত শিক্ষার্থীদের দখলে রয়েছে শহরের বিভিন্ন এলাকা।
অসহযোগের পাশাপাশি রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ পালনে মাঠে থাকারও ঘোষণা দেওয়া হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে। সে লক্ষ্যে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিতে থাকে ছাত্র-জনতা। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়। এতে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় উভয় পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঢাকাসহ সারাদেশে ২০ জনেরও অধিকা মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
রাজধানীতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা—ধাওয়া হয়েছে। গোটা রাজধানী জুড়েই উত্তাপ ছড়িয়েছে। থেমে থেমে সংঘর্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শাহবাগ, বাংলামোটর, কাওরানবাজার, উত্তরা, মিরপুর ১০, ইসিবি চত্বর, রামপুরা, বাড্ডা, পল্টন, প্রেসক্লাব, যাত্রবাড়ি—কাজলা, সাইন্সল্যাব, যমুনা ফিউচার পার্ক, কুড়িলসহ নানা জায়গা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এদিকে মহাখালি ডিওএইচএস এ অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা ও তাদের পরিবার বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন।
সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে একদফা সমর্থনে রাস্তায় নামে সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ। একই সময় বিভিন্ন স্থানে সরকার সমর্থক, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করতে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করলে বাঁধে সংঘর্ষ। সকালে শাহবাগ মোড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিলে ঢাকা পিজি হাসপাতালের ভিতর থেকে কয়েকজন সরকার সমর্থক ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে শাহবাগের দিকে এগোতে থাকলে শিক্ষার্থীরা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। ধাওয়া খেয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীরা হাসপাতালের ভেতরে চলে যায়। এরপরই হাসপাতালের ভেতরে পার্কিং করা গাড়িতে আগুন দেখা যায়।
দুপুর সাড়ে ১২টায় পল্টন মোড়ে অবিভাবক ফোরামের ব্যানারে একটি সমাবেশ চলাকালীন সময় হঠাৎ করেই লাঠি সোটা নিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। এসময় দুপক্ষের মাঝে কিছুক্ষন ধাওয়া পাল্টা চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এসময় বিক্ষুব্ধকারীরা প্রেসক্লাবে দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেন।
উত্তরা—১১ নাম্বার সেক্টরে আজও শিক্ষার্থী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এখানে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয় বলে জানা গেছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাজধানীর প্রায় বেশিরভাগ স্থান আন্দোলনকারীদের দখলে রয়েছে।
রাজধানীর গ্রিন রোড: রাজধানীর গ্রিন রোডের একটি গলিতে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকা ও স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। দুপুর ১২টার দিকে গ্রিন রোডের ১৫/এ গ্রিন স্কয়ার গলিতে এ দৃশ্য দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘এক দফা এক দাবি’, ‘আমার ভাইয়ের রক্তের জবাব দে, জবাব দে’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। গ্রাফিতিতে ‘গর্জে ওঠো আরেকবার’সহ নানা ধরনের বিষয় উঠে এসেছে। এই গলির কাছেই সায়েন্স ল্যাব মোড়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করছেন।
বাংলামোটর: রাজধানীর বাংলামোটরে আওয়ামী লীগ ও দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। শাহবাগ ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেওয়ার পর কারওয়ান বাজার থেকে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল সেদিকে যায়। তারপর বাংলামোটরে সংঘর্ষ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি ছুঁড়তে দেখা গেছে। কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হলে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
সায়েন্স ল্যাব: রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিক্ষোভ করছেন বিক্ষোভকারীরা। দুপুরে সায়েন্স ল্যাব মোড়ের পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। পরে ভাঙা লোহালক্কড় একজনকে রিকশায় করে নিয়ে চলে যেতে দেখা যায়।
বিক্ষোভকারীরা সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। সায়েন্স ল্যাব হয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করছে না। আশপাশ এলাকায় পুলিশের অবস্থান দেখা যায়নি। ওই এলাকার সড়ক বিভাজক ভাঙচুর করা হয়েছে। সড়কে ইটের ভাঙা অংশ ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।
উত্তরা আজমপুর: রাজধানী উত্তরার আজমপুরে বিক্ষোভকারী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। দুপুর ১২টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়।
এর আগে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ধাওয়া দেয় বিক্ষোভকারীরা। তারা ঢাকা—ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে। বিক্ষোভকারীরা বিএনএস থেকে আজমপুর পর্যন্ত সড়কে অবস্থান করছেন। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
শাহবাগে বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারীর অবস্থান: রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিক্ষোভকারীরা। দুপুর ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখানে হাজার বিক্ষোভকারী ছিলেন। আরও মিছিল আসছিল। তারা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন।
শাহবাগ থানার সামনে পুলিশ অবস্থান নিয়ে আছে। থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের একাংশ সেখানে অবস্থান থানার দিকে কাউকে না যাওয়ার অনুরোধ করছেন। মিছিল অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভকারীরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেন। সকাল সাড়ে ১০টার পরে তারা পুরান ঢাকার দিক থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসেন।
সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সামনের দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। তবে পুরান ঢাকার দিক থেকে আসা মিছিল থেকে তাদের ধাওয়া দেওয়া হয়। তারা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে যান। সেখান থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হচ্ছিল। তখন বিক্ষোভকারীরা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের খুঁজতে থাকেন। এ সময় হাসপাতালের প্রাঙ্গণে থাকা প্রায় ২০টি গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স এবং ১৫টির মতো মোটরসাইকেলে ভাঙচুর করা হয়। কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা হাসপাতালের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসার সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। তখন আবার তারা ভাঙচুর শুরু করেন। সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে যান বিক্ষোভকারীরা। তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। সেখানে বিক্ষোভে এক দফা দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়। আরও বলা হয়, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘সমগ্র শাহবাগে আমরা অবস্থান করছি। ছাত্রলীগ হামলা করতে এসেছিল। আমাদের প্রতিরোধে তারা বিএসএমএমইউতে ভেতরে ঢুকে গেছে। ভেতরে আগুন ওরাই দিয়েছে। ভবনের ছাদে উঠেও আমাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে।’
সিএমএম কোর্টের সামনে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে এক দফা দাবিতে চলা অসহযোগ আন্দোলনে রাজধানীর পুরান ঢাকায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছে। এ সময় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। সকাল ১১টার পর এ ঘটনা ঘটে।
মিরপুরে সংসদ সদস্য মাইনুলের নেতৃত্বে সমাবেশ: মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে মিরপুর–১৪ নম্বরের সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন নিখিলকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীদের সঙ্গে সমাবেশ করতে দেখা গেছে। রবিবার বেলা ১১টার আগে এ সমাবেশ দেখা গেছে। এ সময় তাদের অনেকের হাতে লাঠি দেখা যায়। মিরপুর–১০ নম্বরে রাস্তাঘাটে যানবাহন কম চলতে দেখা গেছে।
দুপুর ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিব হাসান আজমপুরের একটি ক্যাম্পে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বিক্ষোভকারীরা ছিলেন সড়কে। পরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়
২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কার্যালয়ে আগুন: রাজধানীর পরিবাগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আসাদুজ্জামানের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। রবিবার বেলা ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।