প্রতিবেদক, এম এম জামান, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি :
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৃষকদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। উচ্চমূল্যে আলুর বীজ কিনে আশায় বুক বেঁধে আলু চাষ করলেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ধান চাষেও তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
সেচ সংকট: কৃষকের কষ্টে নতুন মাত্রা
ধান চাষের অন্যতম প্রধান উপকরণ সেচের পানির জন্য কৃষকরা নির্ভর করেন বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) অনুমোদিত সেচ পাম্পগুলোর ওপর। কিন্তু সেখানে চলছে অনিয়ম আর হয়রানি।
সরকার নির্ধারিত মূল্যের তোয়াক্কা না করে পাম্প মালিকরা ইচ্ছেমতো পানির দাম আদায় করছেন। কৃষকরা চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারলে তাদের জমিতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে পানি না দিয়ে কৃষকদের জমি পতিত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়।
কৃষকের দুরবস্থার চিত্র
শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের চরবেতকান্দি মৌজায় কৃষক কোরবান মোল্লার জমি পানির অভাবে পড়ে আছে পতিত অবস্থায়। মালতিডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিমের ক্ষেত পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এ নিয়ে পানি সরবরাহকারী পাম্প মালিকের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডাও হয়।
তেলকুপি গ্রামের এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দিনমজুর মো. আলহাজ বর্গা জমিতে চাষ করেন। তিনিও পানির সংকটে বাধ্য হয়ে ঋণ করে ডিজেল চালিত পাম্প স্থাপন করেছেন।
প্রশাসনের উদাসীনতা
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করলেও তারা বিষয়টি বিএডিসির বিষয় বলে দায় এড়িয়ে যান। বিএডিসির শাহজাদপুর উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইলিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তাকে অফিসে সচরাচর পাওয়া যায় না। তিনি প্রায়ই ‘তদন্তে গেছেন’ বলে জানানো হয়। এমনকি তাকে ফোনেও পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ইলিয়াস মাঠ পর্যায়ে তদন্তে গেলে তার সঙ্গে থাকেন এক রহস্যজনক ব্যক্তি, যিনি পাম্প মালিকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে ভূমিকা রাখেন বলে জানা গেছে। কৃষকরা বলছেন, এই ব্যক্তির উপস্থিতিই তাদের আতঙ্কে রাখে।
কৃষকদের করণীয় ও প্রশাসনের দায়িত্ব
সেচ আইন অনুযায়ী প্রতিটি সেচ লাইসেন্স নবায়ন করা বাধ্যতামূলক হলেও এ বিষয়ে তেমন নজরদারি নেই। বিএডিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরের তদারকি বাড়ানো হলে কৃষকদের দুর্ভোগ লাঘব হতে পারে।
কৃষি নির্ভর এই দেশে কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন। বিএডিসির শাহজাদপুর কার্যালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষি উৎপাদনে অনিয়ম বন্ধ করে যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং দেশ আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে পারবে। কৃষকরা আশা করছেন, প্রশাসন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে তাদের দুর্ভোগ লাঘব করবে।