অগ্রসর রিপোর্টঃ লুসিয়ানার স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মঙ্গলবার মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১১ জনে দাঁড়িয়েছে। বন্যায় ভয়াবহতায় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় ২০টি এলাকাকে কর্তৃপক্ষ দুর্যোগপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। ওই এলাকাগুলোতে বন্যার পানি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে।
লুসিয়ানার দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও অন্যান্য এলাকাগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
জাতীয় আবহাওয়া বিভাগ নতুন করে বন্যা সতর্কতা জারি করেছে।
লুসিয়ানার গভর্নর জন বেল এডওয়ার্ড এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা নজিরবিহীন বন্যা প্রত্যক্ষ করছি। বন্যার পানি দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হওয়ায় পানির স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
কর্মকর্তারা বলেন, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে ৪০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮ হাজারের বেশি লোক অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরগুলোতে উঠতে বাধ্য হয়েছে।
তারা জানান, এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি লোককে উদ্ধার করা হয়েছে।
নতুন করে বেশ কিছু প্যারিশকে দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করায় দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০টিতে। প্যারিশ অন্যান্য রাজ্যের কাউন্টির অনুরূপ।
লিভিংস্টোন প্যারিশের প্রেসিডেন্ট ল্যাইটন রিকস বলেন, ‘আমরা এখন মাত্র উদ্ধারের পর্যায়ে রয়েছি। আমরা এখনো অঞ্চলটির দক্ষিণাঞ্চলীয় অংশটিকে রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
বন্যায় এলাকাটির ৭৫ শতাংশের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যে সব এলাকার বাসিন্দারা প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের কারণে বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন সেখান ব্যাপক লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে।
এই সমস্যাকে সামাল দেয়ার জন্য অনেক পৌরসভা সান্ধ্যকালীন কারফিউ জারি করেছে। ওই এলাকাগুলোতে শুধুমাত্র উদ্ধারকারী কর্মীদের রাতের বেলা স্বাধীনভাবে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
ইস্ট ব্যাটন রুজে’র শেরিফ সিড গাউট্রিয়াক্স বলেন, ‘আমি মনে করে আমাদের বাসিন্দাদের সুরক্ষায় এটাই সর্বোত্তম পদ্ধতি।’
তিনি আরো বলেন, সোমবার বিকেল থেকে লুটপাটের অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এডওয়ার্ড বলেন, প্রচ- গ্রীষ্মের গরম ও আদ্র আবহাওয়ায় প্রায় ৩৪ হাজার বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে সেখানকার মাটি স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এখনো বিপুল সংখ্যক লোক কষ্টে রয়েছে।’
লুসিয়ানার গভর্নরের অফিস থেকে মঙ্গলবার রাতে এই বন্যায় ১১ জনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে উদ্ধারকর্মীরা আরো মৃতদেহের সন্ধানে তল্লাশী চালিয়ে যাচ্ছে।
কতজন লোক এই বন্যায় নিখোঁজ রয়েছে কর্মকর্তারা তার সঠিক সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত নন।
বাটোন রুজের দমকল বিভাগের প্রধান এড স্মিথ বলেন, ‘আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, কতজন মানুষ নিখোঁজ রয়েছে তার সঠিক সংখ্যা পেতে আরো ৫ থেকে ৭ দিন চলতে পারে।
উদ্ধারকর্মীরা সেই সব যানবাহনের ভেতর নিখোঁজদের খুঁজে দেখছে যেগুলো পানিতে নিমজ্জিত ছিল অথবা বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গিয়েছিল।
গভর্নর বলেন, ‘আমরা ওইসব যানবাহনের প্রত্যেকটিতে তল্লাশী চালাতে যাচ্ছি।’
বন্যার পানি দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হওয়ায় গঞ্জালেস মাত্র গত ২৪ ঘন্টায় প্লাবিত হয়েছে।
লুসিয়ানার দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। সেখানকার অনেক এলাকার বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহন কয়েক ফুট গভীর পানিতে ডুবে গেছে।
ওয়াকার শহরের মেয়র রিক রামসেই বলেছেন, বন্যায় তার শহরটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শহরটিতে ৬ হাজার লোকের বাস।
তিনি বলেন, ‘আপনি আশঙ্কা করতে পারেন যে আমাদের বাসিন্দাদের ৭০ শতাংশই পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা আমার শহরের বাসিন্দাদেরকে দারুনভাবে একে অপরকে সাহায্য করতে দেখতে পাবেন। তারা একে অপরকে আন্তরিকভাবে সাহায্য করছে।’
প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।