লালমনিরহাট প্রতিনিধি- লালমনিরহাটে চলতি রোপা আমন মৌসুমে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত মেশিন দিয়ে কিছু জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ ধান ক্ষেত সেচ সুবিধার বাইরে রয়ে গেছে। আবার চলতি বর্ষায় জেলায় প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাতও হয়নি। ফলে রোপা আমন ধানের ক্ষেত এরই মধ্যে শুকিয়ে ফেটে যেতে শুরু করেছে। কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষক। আগের মৌসুমে উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাননি তারা। এবার পানি সংকটের কারণে উৎপাদন হ্রাস পেলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রান্তিক চাষীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উজানের পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটের তিস্তা অববাহিকা দুই দফা অল্পবিস্তর প্লাবিত হয়েছে। ফলে অন্য বছরের তুলনায় এবার বর্ষায় জেলার নদ-নদীতেও পানির প্রবাহ ছিল অনেক কম। চলতি বর্ষায় প্রয়োজনীয় মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কম। ফলে জেলায় প্রবহমান ধরলা-সানিয়াজানসহ অন্য সব নদীতে এখন পানির পরিমাণ মারাত্মক হ্রাস পেয়েছে। বিরূপ আবহাওয়ায় রোপা আমন আবাদও সমস্যাসঙ্কুল হয়ে পড়েছে। তার পরও জেলায় সব শ্রেণীর উৎপাদক চাষীরা বৃষ্টির ভরসায় রোপা আমন আবাদ করেছিলেন। কিন্তু রংপুর অঞ্চলে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এখন ক্ষেত শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। ধান গাছও মরে যাচ্ছে। জেলার সামর্থ্যবান কৃষকরা বিরূপ আবহাওয়া মোকাবেলায় ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন ও বিদ্যুৎ চালিত মোটর দিয়ে সেচকার্য অব্যাহত রেখেছেন। এতে উৎপাদন ব্যয় বহুগুণ বাড়ছে। তার পরও জেলার ৮০ শতাংশ আমন ক্ষেতে সেচ সুবিধার বাইরে রয়ে গেছে। প্রান্তিক কৃষকদের পক্ষে সেচ খরচ বহন করাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন না হওয়া ও উৎপাদন ব্যয় বাড়ার আশঙ্কায় ভুগছেন চাষীরা। তাছাড়া শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে জেলার অধিকাংশ নালা ও পুকুর শুকিয়ে গেছে। ফলে পাট জাগ দেয়া নিয়েও বিপাকে পড়েছেন চাষীরা।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম জানান, চলতি বছরে ৭৭ হাজার ৯৯ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবাদ হয়েছে ৮০ হাজার হেক্টরে। বৃষ্টির অভাবে কোথাও কোথাও সেচ সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনার চাষী নূর ইসলাম জানান, চলতি মৌসুম তিনি চার একর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ করেছেন। বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষেতে প্রয়োজনীয় পানি নেই। আবার সেচকার্য ব্যয়বহুল হওয়ায় তা অব্যাহত রাখতে পারছেন না। ফলে ক্ষেত শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়েছে। ধান ক্ষেতে আগাছা বেড়েছে। তাছাড়া এখন আগাছা পরিষ্কার করে সার দেয়ার সময়। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে সবকিছু বন্ধ হওয়ার পথে। এবার কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন নাও হতে পারে বলে তিনি জানান। হাতীবান্ধার চাষী আফছার আলী ও যতীন্দ্র রাথ রায় একই কথা জানালেন। পাটগ্রামের মজিবর রহমান ও মমতাজ উদ্দিনেরও একই আশঙ্কা।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক (ডিডি) সাফায়েত হোসেন জানান, বৃষ্টি টুকটাক হচ্ছে। অগভীর নলকূপও চালু করা হয়েছে। এখন ধান রোপণ পর্ব শুরু হয়েছে। ফলন কম হওয়ার পর্যায় আসেনি। তবে সেচ প্রদানের কারণে এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বৃষ্টি হলে আশঙ্কা কেটে যাবে ও কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাওয়া যাবে।