অগ্রসর ডেস্ক: ব্রেক্সিট ইস্যুতে দ্বিতীয় গণভোটের দাবিতে শনিবার লাখো মানুষের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে পড়েছে লন্ডনের রাজপথ। আয়োজকরা বলছেন, এদিনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, এ বিক্ষোভকে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভগুলোর একটি হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। এতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বলছেন, ব্রেক্সিট ইস্যুতে তারা চূড়ান্ত বা শেষ কথা বলতে চান। দ্বিতীয় গণভোট আয়োজনের মাধ্যমে তাদের সেই সুযোগ দিতে হবে।
আয়োজক সংস্থা ‘পিপলস ভোট’-এর একজন মুখপাত্র বলেন, এই বিক্ষোভ ব্রিটিশ ইতিহাসে জনগণের বৃহত্তম প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খান, ছায়া ব্রেক্সিটমন্ত্রী স্যার কেইর স্টার্মার, ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়ানে অ্যাবট, ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমিলি এমিলি থর্নবেরি, ছায়া চ্যান্সেলর জন ম্যাকডনেল প্রমুখ।
স্থানীয় সময় শনিবার বিকালে পার্ক লেন থেকে পার্লামেন্ট স্কয়ার অভিমুখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন আন্দোলনকারীরা। একইদিন যুক্তরাজ্যের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তি পেছানোর পক্ষে রায় দেয় দেশটির পার্লামেন্ট। এমপিদের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান বিক্ষোভকারীরা। পার্লামেন্টের বাইরে তারা স্লোগান তোলেন, আমাদের কথা শুনতে হবে, জনগণের আওয়াজ শুনতে হবে।
শনিবারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা ব্রেক্সিট ইস্যুতে দ্বিতীয় গণভোটের দাবি জানিয়ে নানা ব্যানার-প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এসব ব্যানারে লেখা ছিল, স্টপ ব্রেক্সিট, টুগেদার ফর দ্য ফাইনাল সে, রিমেইন ইজ দ্য অনলি সেইন অপশন, টোরিস অ্যাগেইনস্ট ব্রেক্সিট, লেবার স্টুডেন্টস ডিমান্ড আ পিপলস ভোট ইত্যাদি।
ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমিলি এমিলি থর্নবেরি তার বক্তব্যে বলেন, লাখো মানুষের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ব্রেক্সিট নিয়ে নিজেদের দাবি জানাতে পেরে তিনি গর্বিত বোধ করছেন। তিনি বলেন, আমাদের নীতি পরিষ্কার; জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন।
এদিকে পার্লামেন্ট খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তি পিছিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে বিলম্বের বিষয়ে তিনি আর কোনও আলোচনা না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে বিবিসি জানিয়েছে, পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তির খসড়া সংশোধনীর পক্ষের এমপিরা জয়লাভ করায় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের জন্য ব্রেক্সিট চুক্তি কার্যকরের তারিখ পেছানোর আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বরিস জনসন বলেন, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে আরও দেরি করতে ইইউ-এর সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হবে না। আইন অনুযায়ী, এটি করতে আমি বাধ্য নই। ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে আরও দেরি করা হলে তা আমাদের দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হবে। খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে আগামী মঙ্গলবার আবারও পার্লামেন্টে প্রস্তাব তোলা হবে।
উল্লেখ্য, ব্রেক্সিট ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে চলতি বছরের গত মে মাসে পদত্যাগের ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তিনি সরে দাঁড়ানোর পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী কনজারভেটিভ নেতা বরিস জনসন। নির্বাচিত হওয়ার পর আগামী ৩১ অক্টোবর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন তিনি। প্রয়োজনে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটেরও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন তিনি। তবে দীর্ঘ আলোচনা আর নানা নাটকীয়তার পর গত ১৭ অক্টোবর চুক্তির ব্যাপারে ইইউ-এর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছায় বরিস জনসনের সরকার। শনিবার এ চুক্তি বা সমঝোতা পেছানোর পক্ষে রায় দেয় ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। অর্থাৎ, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের তারিখ ফের পিছিয়ে যাচ্ছে। শনিবারের বিক্ষোভে পার্লামেন্টের এ রায়কে স্বাগত জানিয়ে ব্রেক্সিট ইস্যুতে দ্বিতীয় গণভোটের দাবিতে আওয়াজ তোলেন আন্দোলনকারীরা। সূত্র: ইন্ডিপেনডেন্ট, রয়টার্স, বিবিসি।