অগ্রসর রিপোর্ট: সদ্য ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে পাহাড়সম সম্পদের খোঁজ পেয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। দীর্ঘ অনুসন্ধানে আওয়ামী লীগ সকারের সাবেক এই মন্ত্রীর যুক্তরাজ্যে বিলাসবহুল জীবনযাপনের পাশাপাশি হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সামনে এসেছে।
বুধবার রাতে ইউটিউবে বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত আলজাজিরার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু যুক্তরাজ্যে ২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ৩৬০টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। যুক্তরাজ্য ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ায়ও রিয়েল স্টেট ব্যবসায় বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছেন তিনি। নিজের ও স্ত্রীর নামে সবমিলিয়ে প্রায় ৫০০ বাড়ি আছে আওয়ামী লীগের সাবেক এই মন্ত্রীর। বাংলাদেশি টাকায় যেগুলোর মূল্য প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা বা ৭০০ মিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ অনুসন্ধানে প্রথমে যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামানের সম্পদ কেনা থেকে শুরু করে সব বিষয় সামলান এমন একজনের রিয়েল এস্টেট এজেন্টের সঙ্গে চীনা বিনিয়োগকারীর ছদ্মবেশে যোগাযোগ করেন আলজাজিরার সাংবাদিকরা। সেই এজেন্টের নাম রিপন মাহমুদ, যিনি সাইফুজ্জামানের নিজ শহর চট্টগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
রিপনের মাধ্যমেই গত বছর চীনা বিনিয়োগকারীর ছদ্মবেশে সাংবাদিকরা সাইফুজ্জামানের ১৪ মিলিয়ন ডলারের বাড়িতে যান। এ সময় সাইফুজ্জামান তাদের জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ ভালো সখ্যতা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা শেখ হাসিনার খুব কাছের লোক ছিলেন। আমিও তার কাছের লোক… শেখ হাসিনা আমার বস… তিনি জানেন যুক্তরাজ্যে আমার ব্যবসা আছে।’
শুধু তাই নয় ‘ছদ্মবেশী’ সাংবাদিকদের সাইফুজ্জামান বড়াই করে জানান, তিনি কুমিরের চামড়ার হাতে তৈরি জুতার ওপর হাজার হাজার ডলার খরচ করেন এবং লন্ডনের সবচেয়ে দামি দোকান থেকে ইতালিয়ান স্যুট তৈরি করে পরেন। এছাড়া ওই সময় লন্ডনের নিজের বাড়িও ঘুরিয়ে দেখান তিনি। যেটিতে রয়েছে সিনেমা হল, জিম, ব্যক্তিগত এলিভেটর এবং নতুন রোলস রয়েলস গাড়ি রাখার নিরাপদ আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং এরিয়া।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘ছদ্মবেশী’ সাংবাদিকদের তিনি স্বীকার করেছেন, দুবাইয়ে এবং লন্ডনে তার ব্যাপক বিনিয়োগ করেছেন। তিনি জানান, দুবাই ডাইনটাউনে অপেরা এলাকায় তার সম্পত্তি আছে, বাড়ি আছে সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া-ম্যানহাটানেও।
এ সময় এতো অর্থের যোগান কোথা থেকে আসে জানতে চাইলে তিনি জানান, পরেশ রাজা নামে এক ফাইন্যান্সারের মাধ্যমে ডিবিএস ব্যাংক থেকে তিনি প্রায় ১০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছেন বলে জানান।
অন্যদিকে ‘ছদ্মবেশী’ সাংবাদিকরা দুবাইয়ে ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চাইলে চীন থেকে তাদের অর্থ পাচারে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করার পর জানান এ বিষয়ে তিনি সাহায্য করতে পারবেন না।
উল্লেখ্য, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ২০১৩ সালে তার প্রয়াত বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্থলাভিষিক্ত হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি নির্মাণ কোম্পানি আরামিট পিএলসি এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এর এক বছর পর তিনি ভূমি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর নির্মাণ কোম্পানি আরামিট পিএলসি এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।২০১৯ সালে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার মতো গাঁ ঢাকা দিয়েছেন সাইফুজ্জামানও।